চট্টগ্রাম: রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় অবৈধ ইটভাটার সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছেন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের চট্টগ্রাম ব্যুরো অফিসের স্টাফ করেসপনডেন্ট আবু আজাদ। এসময় তাকে পিস্তল ঠেকিয়ে স্থানীয় ইউপি মেম্বারের অফিসে নিয়ে দেড় ঘন্টা জিম্মি করে রাখা হয় বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী সাংবাদিক।
রোববার (২৫ ডিসেম্বর) সকাল ১০টার দিকে উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের মঘাছড়ি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
ইসলামপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী নির্দেশে ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার মহিউদ্দীন তালুকদার (মোহন) অস্ত্র ঠেকিয়ে জিম্মি করে মারধর করে বলে জানান ভুক্তভোগী ওই সাংবাদিক।
মারধরের শিকার সাংবাদিক আবু আজাদ জানান, রাঙ্গুনিয়ায় অবৈধ ইট ভাটার সংবাদ সংগ্রহ করতে রোববার চট্টগ্রাম-রাঙামাটি সড়কের মঘাছড়িতে যাই। সড়কের পাশে মাটি তুলে নামহীন ইট ভাটায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। ওই ছবি তুলতে গেলে স্থানীয় মেম্বার মহিউদ্দীন তালুকদার (মোহন) ৫ থেকে ৬ লোক নিয়ে এসে আমার মাথা পিস্তল ঠেকিয়ে মারধর করে। এরপর আমাকে একটি সাদা রংয়ের নোহা গাড়িতে তুলে নিয়ে মঘাছড়ি বাজারে নিয়ে যায়। সেখানে প্রকাশ্যে আমার মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে আবার মারধর করে। আমার মোবাইল ফোন, মানিব্যাগ ও আইডি কার্ড কেড়ে নেয় তারা।
ভুক্তভোগী আরও জানান, মারধরের একপর্যায়ে মোহনের মোবাইল ফোন দিয়ে ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী আমার সঙ্গে ফোনে কথা বলেন। আমার পরিচয় জানার পর তিনি আমাকে বলেন, এরকম সাংবাদিক মেরে ফেললে কিছু হবে না। এরপর আমার মোবাইল দিয়ে গুগল ড্রাইভে ঢুকে সব ছবি-ভিডিও ডিলেট করে দেয় এবং মোবাইল ফোনটি ভেঙে ফেলে। পরে পকেটে মারধরকারী স্থানীয় ইউপি সদস্য নিজের ভিজিটিং কার্ড ঢুকিয়ে দিয়ে ক্ষমতা থাকলে কিছু করে দেখাতে বলে শাঁসান।
সাংবাদিককে মারধরের বিষয়ে জানতে চাইলে ইউপি সদস্য (মেম্বার) মহিউদ্দীন তালুকদার মোহন বিষয়টি অস্বীকার করেন।
তিনি বাংলানিউজকে জানান, চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর ফোন পাওয়া পর ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি চেয়ারম্যানের লোকজন তাকে মারধর করছে। তাঁর মোবাইল ফোন ভেঙে ফেলেছে। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করে আমার অফিসে নিয়ে আসি। তার পকেটে কোনও টাকা ছিল না। পরে আমি টাকা দিয়ে তাকে গাড়ি তুলে দিয়েছি। তার মানিব্যাগ, ব্যাংকের এটিএম কার্ড, সাংবাদিকের আইডি কার্ড চেয়ারম্যানের কাছে সংরক্ষিত আছে।
এ বিষয়ে জানতে ইসলামপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা হলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
সাংবাদিক মারধরের বিষয়ে অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন রাঙ্গুনিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুব মিল্কী।
এদিকে, সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনায় তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের (সিইউজে) সভাপতি তপন চক্রবর্তী ও সাধারণ সম্পাদক ম. শামসুল ইসলাম। নেতৃবৃন্দ এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) নির্বাহী সদস্য আজহার মাহমুদ বলেন, পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় দিনেদুপুরে একজন সাংবাদিককে অস্ত্র ঠেকিয়ে নির্যাতন কোনও সভ্য সমাজে হতে পারে না। একদিকে তারা অবৈধভাবে পরিবেশবিরোধী ইট ভাটা পরিচালনা করছে। আবার সেই সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে একজন সাংবাদিককে হত্যার চেষ্টা- যেন ‘মগেরমুল্লুক’। এ ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনতে হবে। চট্টগ্রামের সাংবাদিক সমাজ ভুক্তভোগী সাংবাদিকের পাশে আছে।
প্রসঙ্গত, চট্টগ্রামের সবচেয়ে বেশি ইটভাটা রয়েছে রাঙ্গুনিয়া উপজেলায়। এখানে প্রায় দেড় শতাধিক ইটভাটা রয়েছে। এরমধ্যে শুধু ইসলামপুর ইউনিয়নে রয়েছে ৭০টি ইটভাটা। এসব ইটভাটার একটিরও অনুমোদন নেই। এর মধ্যে এবিসি-১ ও এবিসি-২ নামে দুটি ইটভাটা ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর মালিকানাধীন। দুটি ইট ভাটায় প্রতি বছর এক কোটি ৩০ লাখ ইট পোড়ানো হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৯১৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৫, ২০২২
এমআর/পিডি/টিসি