চট্টগ্রাম: ঐতিহাসিক লালদিঘির মাঠ ঘিরে বাঙালির মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাস-ঐতিহ্য তুলে ধরার পাশাপাশি শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর গৃহীত প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে। তবে, আনুষ্ঠানিকভাবে মাঠটি খুলে না দেওয়ায় শিশুরা খেলাধুলার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
জানা গেছে, প্রকল্পের আওতায় রাতে সোলার প্যানেলের মাধ্যমে আলোকসজ্জার ব্যবস্থা করা হয়েছে। মাঠে প্রবেশ ও বের হওয়ার জন্য তৈরি হয়েছে দুটি ২০ ফুট প্রস্থের গেট ও একটি ভিআইপি গেট।
এছাড়া মাঠের উত্তর পাশে তৈরি করা হয়েছে ছয় দফা মুক্তমঞ্চ। পূর্বপাশে গড়ে তোলা হয়েছে শিশুদের মিনি পার্ক। সেখানে যুক্ত হয়েছে দোলনা-রাইড। মাঠের চারপাশে হাঁটার জন্য নির্মাণ করা হয়েছে ৩৪৮ মিটার দৈর্ঘ্যের ওয়াকওয়ে, বসার জন্য রয়েছে টাইলস দিয়ে তৈরি ৩৯টি বেঞ্চ। বালুর মাঠে শোভা পাচ্ছে সবুজের আস্তরণ।
শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী প্রদীপ কুমার সরকার বলেন, বঙ্গবন্ধুর জনসভার স্মৃতি ধরে রাখতে ‘নগরীর লালদিঘি মাঠ সংস্কার ও সৌন্দর্যবর্ধন’ প্রকল্পের আওতায় প্রায় আড়াই কোটি টাকা ব্যয়ে নান্দনিক রূপে সাজিয়ে তোলা হয়েছে এই মাঠ। ৫০ ফুট দৈর্ঘ্য এবং ২৫ ফুট প্রস্থের একটি ছয় দফা মুক্তমঞ্চ তৈরি করা হয়েছে। মাঠের দেওয়ালজুড়ে টেরাকোটার ম্যুরালে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনসহ বাঙালির সব আন্দোলন-সংগ্রামের সচিত্র ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে।
লালদিঘি মাঠটি মুসলিম উচ্চ বিদ্যালয়ের মালিকানাধীন। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি চট্টগ্রামের শাসনভার গ্রহণ করার পর এই মাঠ আন্দোলন সংগ্রামের কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ১৯৬৬ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি লালদিঘি ময়দানের জনসভায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ ঐতিহাসিক ছয় দফা ঘোষণা করেন।
১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি এক সমাবেশে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ট্রাকবহর নিয়ে আওয়ামী লীগের একটি মিছিল লালদিঘি মাঠে যাওয়ার পথে নির্বিচারে চালানো গুলিতে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ও সাধারণ পথচারীসহ ২৪ জন মারা যান। আহত হন অন্তত ২শ’ জন।
কোতোয়ালী আসনের সংসদ সদস্য শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল ছয় দফার স্মৃতিবিজড়িত মাঠটিকে নতুন করে সাজানোর পরিকল্পনা করেন। তাঁর আগ্রহে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর ঐতিহাসিক ও রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ লালদিঘি মাঠ নতুনরূপে সাজাতে ২ কোটি ২৫ লাখ টাকার প্রকল্প গ্রহণ করে। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে কাজ শুরু হয়। ২০২১ সালের জুন মাসে ভারি বর্ষণের ফলে পাহাড় সংলগ্ন মাঠের সীমানা দেওয়ালের একাংশ নিচের দিকে ধসে গিয়ে কয়েকটি ম্যুরাল ভেঙ্গে যায়। ফাটল দেখা দেয় দেওয়ালের আরেকটি অংশে। পুনঃসংস্কারের পর চলতি বছরের মাঝামাঝি সময়ে শেষ হয় উন্নয়ন কাজ।
বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাংবাদিক নাসিরুদ্দিন চৌধুরী বলেন, লালদিঘির ময়দান শুধু জনসভা নয়, আরও দুটি কারণে আমাদের প্রয়োজন। প্রথমত, লালদিঘি মাঠ মুসলিম হাইস্কুলের মাঠ এবং স্কুলের ছাত্ররা এখানে খেলাধুলা করে। দ্বিতীয়ত, প্রতি বছর বৈশাখ মাসে লালদিঘি মাঠে জব্বারের বলিখেলা ও বৈশাখী মেলা অনুষ্ঠিত হয়। পুরো চট্টগ্রামের মানুষ বিশেষ করে গৃহিণীরা সারা বছর ধরে লালদিঘির মেলার দিকে তাকিয়ে থাকেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৩০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০২২
এসি/টিসি