চট্টগ্রাম: বছরের শুরুতে ভাড়া বাড়ানো যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে। অধিকাংশ বাড়িওয়ালার ইচ্ছায় বাড়ে ভাড়া, তাদের কথাই ঘর ভাড়ার আইন।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) মতে, চট্টগ্রাম নগরে বসবাসরতদের মধ্যে ৯০ শতাংশই ভাড়াটিয়া।
মানসম্মত ভাড়া বলতে আইনের ১৫(১) ধারায় বলা হয়েছে, ভাড়ার বার্ষিক পরিমাণ সংশ্লিষ্ট বাড়ির বাজারমূল্যের ১৫ শতাংশের বেশি হবে না। আইনের ১০ নম্বর ধারায় বলা আছে, ভাড়া দেওয়ার সময় বাড়িওয়ালা অতিরিক্ত সালামি, জামানত বা অনুরূপ কোনও টাকা দাবি বা গ্রহণ করতে পারবেন না। আইনের ১৩-এর ১ ধারা অনুযায়ী, বাড়ির মালিক ভাড়া পরিশোধের রসিদ দেবেন। রসিদের একটি অংশ অবশ্যই বাড়ির মালিককে সংরক্ষণ করতে হবে। কিন্তু বাড়ির মালিকরা এ রসিদ দিচ্ছেন কি-না, তা তদারক করা হচ্ছে না। বাড়ি ভাড়া আইনের ৩ ধারায় বলা হয়েছে, সরকার এ আইনের অধীনে কোনও ব্যক্তিকে কোনও এলাকার জন্য ‘নিয়ন্ত্রক’ হিসেবে নিয়োগ করতে পারবে। তিনি মানসম্মত ভাড়া নির্ধারণে সহায়তা করবেন। কিন্তু এলাকাভিত্তিক নিয়ন্ত্রক দৃশ্যমান নয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, প্রতি বছর নগরে বাড়ি ভাড়া বাড়ানো হচ্ছে ১৫-২০ শতাংশ হারে। বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন, ১৯৯১ কার্যকর করতে ২০১০ সালে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি) নামের একটি সংগঠন জনস্বার্থে হাইকোর্টে রিট আবেদন করে। রিট আবেদনটির পরিপ্রেক্ষিতে রুল ও চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১৫ সালের ১ জুলাই আদালত রায় দেন।
রায়ে বলা হয়, বিদ্যমান আইনটি কার্যকর না হওয়ায় ভাড়াটেদের সুরক্ষা দেওয়া যাচ্ছে না। আইনটি কার্যকরে রাষ্ট্রকে যথাযথ উদ্যোগ নিতে হবে, অন্যথায় সাধারণ মানুষ এ থেকে পরিত্রাণ পাবেন না। রায়ে সারা দেশে এলাকাভেদে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন বাড়িভাড়া নির্ধারণের জন্য সরকারকে একটি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন কমিশন গঠনের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।
বাড়িওয়ালাদের দাবি- গৃহকর পরিশোধ করা, নিত্যপণ্যের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধি, গৃহনির্মাণ ঋণের সুদের হার বৃদ্ধি, দফায় দফায় বিদ্যুৎ-জ্বালানির দাম বৃদ্ধির কারণে বাড়ি ভাড়া বাড়ানো হচ্ছে। করোনার কারণে গত দুই বছর অনেক বাড়িওয়ালাই বাসা ভাড়া বাড়ায়নি।
জানা গেছে, যোগাযোগের সুবিধা সম্বলিত এলাকায় বাসা ভাড়া অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। নগরের জামালখান, হেমসেন লেইন, আন্দরকিল্লা, পাথরঘাটা, এনায়েতবাজার, লালখান বাজার, চন্দনপুরা, চকবাজার, মুরাদপুর, নাসিরাবাদ, আগ্রাবাদ, বারিক বিল্ডিং, সল্টগোলা, ইপিজেড এলাকায় গত কয়েক বছরে ভাড়া বেড়েছে ৪০ শতাংশ। এরই মধ্যে পড়েছে বাসা বদলের হিড়িক। নতুন বছরের শুরুতেই বেশি ভাড়া দিতে না পারার কথা জানিয়ে সীমিত আয়ের মানুষ খুঁজছেন কিছুটা কম ভাড়ার বাসা।
নন্দনকানন এলাকার বাসিন্দা বেসরকারি চাকরিজীবী মির্জা গালিব বললেন সেই কষ্টের কথা। ‘যে হারে বাসা ভাড়া বাড়ছে এতে থাকাও কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে। বেতনের অর্ধেকের বেশি চলে যায় বাসা ভাড়া দিতে। অবশিষ্ট টাকায় খাওয়া, সন্তানের পড়ালেখা, চিকিৎসাসহ নানান খরচ মেটাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। বাসা ভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইনের প্রয়োগ নেই। মাসের ৫ তারিখের মধ্যে ভাড়া চায়। অথচ বেতন পেতেই চলে যায় ১০ তারিখ। বাড়িওয়ালা কথায় কথায় বাসা ছাড়তে খবর পাঠায়। সংস্কার করে দেয় না নষ্ট হয়ে যাওয়া দেওয়াল কিংবা সামগ্রী’।
বাংলাদেশ সময়: ১২০০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩০, ২০২২
এসি/টিসি