ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

আমদানি কমায় দেদারসে বিক্রি হচ্ছে ‘নামী ব্র্যান্ডের’ নকল প্রসাধনী

পলাশ দে, নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২২৫ ঘণ্টা, মার্চ ২১, ২০২৩
আমদানি কমায় দেদারসে বিক্রি হচ্ছে ‘নামী ব্র্যান্ডের’ নকল প্রসাধনী

চট্টগ্রাম: দেশের প্রসাধনীর বাজার দিন দিন বাড়ছে। এ চাহিদার সিংহভাগই দেশে উৎপাদিত কোম্পানিগুলো পূরণ করে আর বাকিটা আমদানি করতে হয়।

চট্টগ্রামের সব বিপণিকেন্দ্রে প্রসাধনী পণ্যের দোকান রয়েছে। এসব দোকানে ঢুকলেই চোখে পড়ে আমদানি করা নামী ব্র্যান্ডের পণ্য।
বিশেষ করে নারীদের সাজগোজের প্রসাধনীর তালিকায় রয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন নামী ব্র্যান্ডের দাপট।    

এদিকে ডলার সংকটের কারণে আমদানি কমে যাওয়ায় ওই সব প্রসাধনীর দামও বেড়েছে। প্রকারভেদে এ সব পণ্যের দাম হয়েছে কয়েকগুণ। মূলত এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে নকল প্রসাধনীতে ভরে উঠেছে বাজার।  

নাম প্রকাশ না করার শর্তে নিউমার্কেট এলাকার এক ব্যবসায়ী বলেন, নারী ক্রেতারা এখন বিদেশি নামকরা ব্র্যান্ডের প্রসাধনী কিনতে চান। কিন্তু বেশিরভাগেরই এসব ব্র্যান্ডের পণ্যের প্যাকেজিং, মান ও দামসহ অন্যান্য বিষয় সম্পর্কে ধারণা নেই। শুধুমাত্র নিউমার্কেট এলাকায় একটু খোঁজ করলেই একই ব্র্যান্ডের হুবুহু নকল প্রসাধনী মিলবে। যেগুলোকে আমরা ‘মাস্টার কপি’ বলে থাকি। যা দেখে বুঝার উপায় নেই কোনটা আসল, কোনটা নকল। ‘মাস্টার কপি’ প্রসাধনীগুলো মূলত প্রতিবেশী দুইটি দেশ থেকে আসে। এগুলার দাম নামি ব্র্যান্ডের পণ্য থেকে বেশ কম। আর এ ফাঁদেই পা দেন ক্রেতারা। ঢাকা কেন্দ্রিক অসাধু ব্যবসায়ীরা এসব নকল প্রসাধনী এনে চট্টগ্রামসহ সারাদেশে ছড়িয়ে দেন। তবে বিউটি পার্লার ও সেলুনের চালান এমন অনেকে আছেন যারা এসব নকল প্রসাধনীর নিয়মিত ক্রেতা।

তাদের কথার সত্যতা মেলে বেশ কয়েকজন নারী ক্রেতার সঙ্গে কথা বলে। তারা জানান, সাজগোজের বিদেশি প্রসাধনী ব্র্যান্ড সম্পর্কে তারা জেনেছেন অনলাইনে বিভিন্ন মেকআপ আর্টিস্টের ভিডিও দেখে অথবা পরিচিত কারো থেকে শুনে। আবার কেউ কেউ প্রসাধনী দোকানের বিক্রেতা থেকে জেনে তারপর ব্যবহার করছেন।  

জামালখান এলাকার এলিগেন্স আর্টের স্বত্বাধিকারি ও মেকআপ আর্টিস্ট ইশা ধর মনি বাংলানিউজকে বলেন, স্কিন কেয়ারের ও মেকআপের প্রসাধনীর ক্ষেত্রে আমরা সবসময় ইউকে ভিত্তিক ব্র্যান্ডগুলোকে বেশি সাজেস্ট করি। ভারত ও চায়নার কিছু ভালো আয়ুর্বেদিক প্রোডাক্টও স্কিন কেয়ারের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যায়।  

নকল প্রসাধনীর ব্যাপারে তিনি বলেন, আমরা যারা নিয়মিত ব্যবহার করি নকল প্রসাধনী সম্পর্কে বুঝতে পারি। তাছাড়া নকল প্রসাধনী আসল ব্র্যান্ডের প্রসাধনীর চেয়ে দামে অনেক সস্তা। প্রত্যেক আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের প্রাইস অনলাইনে একটু খোঁজ করলে পাওয়া যায়। আবার যেসব প্রসাধনী দেশের বাহির থেকে আমদানি করা হয়, প্যাকেটের গায়ে আমদানিকারকের সীল স্পষ্ট ভাষায় লেখা থাকবে।  

‘বাজারে অনেক ত্বক ফর্সাকারী ক্রিম পাওয়া যায় যেখানে ক্ষতিকর অনেক কেমিক্যাল থাকে যেগুলো কখনোই ব্যবহার করা উচিত নয় বলে পরামর্শ দেন তিনি। ’

ব্যবসায়ীরা জানান, নারীদের সাজগোজের প্রসাধনী ‘কালার কসমেটিক’ হিসেবে পরিচিত। যার প্রায় সম্পূর্ণ চাহিদা পূরণ করা হয় আমদানি করা প্রসাধনীতে। কিন্তু ক্রেতাদের এসব নামী-দামি ব্র্যান্ডের নাম জানা থাকলেও বেশিরভাগই পণ্যের বিস্তারিত জানেন না। আর এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে চট্টগ্রামের বাজারে এসব ব্র্যান্ডের নকল প্রসাধনী বিক্রি হচ্ছে দেদারসে। এতে ক্ষতি হচ্ছে যারা আসল ব্র্যান্ডের পণ্য বিক্রি করছেন সেসব ব্যবসায়ীরা। অনলাইনে যারা পণ্য কিনেন যদি বিশ্বাসযোগ্য সাইট থেকে না কেনেন তাদের প্রতারিত হওয়ার হার আরও বেশি।

চকবাজারে একটি বিপণিকেন্দ্রের ব্যবসায়ী মো. তৌহিদুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ডলার সংকটে বিদেশ থেকে স্কিনা কেয়ার ও সাজগোজের প্রসাধনী আমদানি কমে যাওয়ায় পাইকারীতে পণ্যের দাম অনেক বেড়েছে। ঈদে প্রসাধনী পণ্যের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় আরেক দফা বাড়বে। আমাদেরও তাই বাড়তি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।

তিনি আরও জানান, স্কিন কেয়ারের পণ্যগুলো চাহিদা মোটামুটি সবসময় থাকে। ঈদে ফাউন্ডেশন, ফেস পাউডার, লিপস্টিক, নেইল পলিস, পারফিউমসহ মেকআপ আইটেমের যা যা লাগে সবধরনের প্রসাধনীর চাহিদা বেড়ে যায়।  

গত বছরের নভেম্বরে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের এক প্রতিবেদনেও উঠে এসেছে নানা অসংগতির কথা।  

প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, আমদানিকারকদের প্রাইসট্যাগ ফেলে দিয়ে প্রাইসগান মেশিনের সাহায্যে খুচরা বিক্রেতারা ইচ্ছেমতো মূল্য নির্ধারণ করে থাকেন। প্রসাধনী পণ্যের মোড়কে আমদানিকারকের তথ্য, উপাদান, পরিমাণ, ব্যবহারবিধি, উৎপাদনের তারিখ ও মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ উল্লেখ থাকে না।

এ ছাড়াও বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) কর্তৃক নিষিদ্ধ অথবা অনুমোদনহীন ফেস ক্রিম, হোয়াইটেনিং ক্রিমসহ অন্যান্য প্রসাধনী পণ্য বিক্রি করা হয়ে থাকে। নকল ও অনুমোদনহীন, মেয়াদোত্তীর্ণ এসব প্রসাধনী পণ্য ব্যবহারে চর্মরোগসহ মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পরছেন ব্যবহারকারীরা।

প্রসাধনী আমদানিকারক সমিতির তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ প্রতি বছর প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার প্রসাধনী আমদানি করা হয়।

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর চট্টগ্রামের সহকারী পরিচালক আনিছুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, আমরা নিয়মিত দোকানগুলোতে অভিযান পরিচালনা করি। যখনই আমরা অসংঙ্গতি খুঁজে পাই তাদের সর্তক করি, সেইসঙ্গে জরিমানাও করা হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১২১০ ঘণ্টা, মার্চ ২১, ২০২৩
পিডি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।