ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

সিআরবির বক্ষব্যাধি হাসপাতাল রূপান্তরের সম্ভাব্যতা যাচাই

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮০৩ ঘণ্টা, মে ৬, ২০২৩
সিআরবির বক্ষব্যাধি হাসপাতাল রূপান্তরের সম্ভাব্যতা যাচাই ...

চট্টগ্রাম: নগরের সিআরবির রেলওয়ে বক্ষব্যাধি হাসপাতাল সংস্কারের মাধ্যমে আধুনিক চিকিৎসার সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত চট্টগ্রাম বিভাগীয় কর্মচারী কল্যাণ হাসপাতালে রূপান্তরের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে পরিদর্শন করেছেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব  ড. মো. হুমায়ুন কবীর।  

শনিবার (৬ মে) দুপুরে পরিদর্শনকালে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান, রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর হোসেন, রেলওয়ের চিফ ইঞ্জিনিয়ার জাফর উদ্দিন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মাসুদ কামাল উপস্থিত ছিলেন।

 

সংশ্লিষ্টরা জানান, স্বাস্থ্য সেবা খাত ব্যবস্থাপনায় সাফল্যের ধারাবাহিকতায় মাঠ পর্যায়ে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সর্বস্তরের জনগণের মাঝে মানসম্মত চিকিৎসা সেবা পৌঁছে দিতে চট্টগ্রামে একটি বিশেষায়িত হাসপাতালের প্রয়োজনীয়তা  রয়েছে। বর্তমানে চট্টগ্রাম বিভাগে কোনো কর্মচারী হাসপাতাল নেই।

চট্টগ্রাম মহানগর একটি বিভাগীয় শহর বিধায় এখানে সরকারি সব দপ্তরের কার্যালয় অবস্থিত। যার সুবাদে বর্তমানে বিপুল সংখ্যক সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে এ শহরে বসবাস করেন। এখানে সরকারি কর্মচারীদের চিকিৎসাসেবা প্রদানের জন্য বিশেষ কোনো হাসপাতাল না থাকায় বিপুল সংখ্যক সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী ও তাদের পরিবার পরিজনদের চিকিৎসা সেবা প্রাপ্তিতে ভোগান্তির পাশাপাশি আর্থিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ইতোমধ্যে দেশের সব বিভাগে কর্মচারী হাসপাতাল নির্মাণের কার্যক্রম নেওয়া হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় চট্টগ্রাম বিভাগেও বিভাগীয় কর্মচারী হাসপাতাল নির্মাণের জন্য প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। উক্ত প্রস্তাব অনুমোদন ও বাস্তবায়ন দীর্ঘ সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। তাই অন্তবর্তীকালীন চট্টগ্রাম মহানগরের সিআরবি এলাকায় অবস্থিত বাংলাদেশ রেলওয়ে হাসপাতালকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত করে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কর্মচারী হাসপাতাল হিসেবে ব্যবহারের কার্যক্রম গ্রহণ করার লক্ষ্যে জেলা প্রশাসন চট্টগ্রামের নিবিড় তত্ত্বাবধানে হাসপাতালটি পরিচালনার জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে। অচলপ্রায় রেলওয়ে হাসপাতালটি চট্টগ্রাম বিভাগীয় কর্মচারী হাসপাতালে রূপান্তর হলে হাসপাতালটির কার্যকারিতা ও উপযোগিতা বাড়বে। নতুন করে জমি অধিগ্রহণ/উন্নয়নের প্রয়োজন না হওয়ায় দ্রুত অবকাঠামোগত উন্নয়নের মাধ্যমে চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতকরণের ফলে সরকারের বিপুল অর্থ সাশ্রয় ও প্রকল্প বাস্তবায়নে সময়ক্ষেপণ কমবে।  
 
প্রস্তাবিত ‘চট্টগ্রাম কর্মচারী কল্যাণ হাসপাতাল' গড়ে তোলার উদ্দেশ্য হচ্ছে- চট্টগ্রাম বিভাগের সরকারি সব দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও তাদের পরিবার পরিজন, পৌষ্যদের স্বল্প খরচে চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পাশাপাশি সাধারণ জনগণের জন্য মানসম্মত চিকিৎসাসেবা নামমাত্র মূল্যে নিশ্চিত করা। আধুনিক চিকিৎসাসেবা প্রদানের মাধ্যমে বেসরকারি হাসপাতালের নির্ভরশীলতা কমিয়ে অর্থ সাশ্রয়। নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে ভোগান্তিহীন, জবাবদিহিমূলক ও সাশ্রয়ী চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতকরণ।

কোতোয়ালী থানাধীন সিআরবি এলাকার  ১৩ দশমিক ৭৮ একর জমিতে  অবস্থিত হাসপাতালে তিনটি বিভাগে  চিকিৎসাসেবা দিয়ে থাকে। বহিঃবিভাগে হাসপাতালের কর্তব্যরত কর্মচারীর সহযোগিতায় ডিএমএস কক্ষ, এক্স-রে কক্ষ, প্যাথলজি, ইসিজি কক্ষ, ডেন্টাল কক্ষ ইউনিট, ডটস করনার, ডিসপেনসারি ইত্যাদি রয়েছে। পর্যাপ্ত জনবলের অভাবে কক্ষগুলোর ভেতরে অবস্থিত ইকুইপমেন্ট, বেড অপরিষ্কার ও অপরিছন্ন অবস্থায় পড়ে রয়েছে।  

অন্তঃবিভাগে ১০০ শয্যার একটি পূর্ণাঙ্গ হাসপাতাল এটি। ১টি পুরুষ ওয়ার্ড, ১টি নারী ওয়ার্ড, ১টি সার্জিক্যাল ওয়ার্ড, ১টি প্রসূতি ওয়ার্ড, নার্সরুম, ভিআইপি কেবিন, ১টি ক্রিয়েশন কক্ষ রয়েছে। এসব সেবা তথা হাসপাতালে ভর্তি করা রোগীদের চিকিৎসার জন্য বেডগুলো অপরিষ্কার ও অপরিছন্ন এবং বেডে কোনো রোগী দেখা যায়নি। বেশির ভাগ কক্ষগুলো তালাবদ্ধ অবস্থায় দেখা যায়।  
জরুরি বিভাগে কোনো রোগীর সেবা কার্যক্রম বাস্তবে দেখা যায়নি। অপারেশন বিভাগে প্রয়োজনীয় ইকুইপমেনন্টগুলো অচল, অপরিষ্কার ও ব্যবহার অনুপযোগী অবস্থায় পড়ে রয়েছে।

হাসপাতালে ডাক্তার ও নার্সের সংখ্যা কম। একজন ডাক্তার চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। হাসপাতালে কর্তব্যরত প্রশাসনিক কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা যায় চিকিৎসকের মঞ্জুরিকৃত পদের সংখ্যা ১২টি বিপরীতে মাত্র ১ জন ডাক্তার কর্তব্যরত আছে। নার্সের মঞ্জুরিকৃত পদ ০৬টি, এর বিপরীতে দায়িত্বরত আছেন ৩ জন। এ হাসপাতালটিতে কর্মচারী মঞ্জুরিকৃত পদের সংখ্যা ৩৪৩টি, এর বিপরীতে বর্তমানে কর্তব্যরত আছে ২৩০ জন।  

চট্টগ্রাম বিভাগীয় কর্মচারী কল্যাণ হাসপাতালে রূপান্তরের পর বিভাগের সব সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা কর্মচারীরা ই-রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে উপকারভোগী হিসেবে তালিকাভুক্ত হবে। অনলাইনের মাধ্যমে ডাক্তারের অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিতে পারবে। ডাক্তারের পরামর্শ মতে আইডি কার্ডের মাধ্যমে যেকোনো ধরনের প্রয়োজনীয় সেবা ফি পরিশোধ করতে পারবেন। ই-টোকেন সিস্টেম ব্যবস্থা চালুর মাধ্যমে সেবা প্রদান। অনলাইনে আইডির মাধ্যমে রিপোর্ট দেখানোর সুযোগ। চিকিৎসকের পরামর্শ মতে যেকোনো বিভাগ থেকে সুলভ মূল্যে চিকিৎসা গ্রহণের সুযোগ। চিকিৎসার প্রধান অনুষঙ্গ হচ্ছে রোগ নিরূপণ, তাই এখানে রোগ নিরূপণের জন্য আধুনিক প্যাথলজিক     যন্ত্রপাতি ব্যবহার করলে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সঠিক চিকিৎসা পেতে পারবে।

হাসপাতালটি পরিচালিত হবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অধীন সরকারি কর্মচারী কল্যাণ বোর্ড এর নিয়ন্ত্রণে জেলা প্রশাসন চট্টগ্রামের তত্ত্বাবধান ও রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সহযোগিতায়। জেলা প্রশাসন চট্টগ্রাম ও রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের কর্মকর্তার মাধ্যমে যৌথ ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন। হাসপাতালের সামগ্রিক কার্যক্রম কমিটির মাধ্যমে পরিচালিত হবে এবং কমিটির কাছে দায়বদ্ধ থাকবে। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে বিভাগীয় কর্মচারী কল্যাণ হাসপাতাল পরিচালিত হবে।  

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের চিকিৎসক, নার্স, মেডিক্যাল টেকনোলজিস্টসহ উন্নত ও আধুনিক চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতকরণে সংশ্লিষ্ট জনবল প্রেষণে প্রস্তাবিত হাসপাতালে পদায়ন করা হবে। এ ছাড়া চট্টগ্রামের স্থানীয় স্পেশালাইজড চিকিৎসকগণসহ এনজিও এবং বিভিন্ন দাতব্য সংস্থায় কর্মরত অভিজ্ঞ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের এ হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা প্রদান কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৬ ঘণ্টা, মে ০৬, ২০২২ 
এআর/পিডি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।