ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

চট্টগ্রামে বাড়ছে ডেঙ্গুর প্রকোপ, মে মাসেই আক্রান্ত অর্ধশত 

মিজানুর রহমান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২০০ ঘণ্টা, জুন ১, ২০২৩
চট্টগ্রামে বাড়ছে ডেঙ্গুর প্রকোপ, মে মাসেই আক্রান্ত অর্ধশত  ...

চট্টগ্রাম: সাধারণত ডেঙ্গুর প্রকোপ শুরু হয় জুলাই থেকে ডিসেম্বরে। কিন্তু এবার বছরের শুরু থেকেই এ রোগের প্রকোপ বেড়েছে কয়েকগুন।

সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী সর্বশেষ গত মে মাসে যে পরিমাণ ডেঙ্গু আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছে তা গতবছরের এ সময়ের চেয়ে বেশি। চলতি বছরের গত ৫ মাসে এ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন ১৬৭ জন এবং মারা গেছেন ৩ জন।

চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম ৫ মাসে আক্রান্ত হওয়া ১৬৭ জনের মধ্যে জানুয়ারি মাসে ডেঙ্গু শনাক্ত হয় ৭৭ জনের। পরে তিন মাস ফেব্রুয়ারি, মার্চ এবং এপ্রিল মাসে শনাক্ত হার কমে আসে। এ তিন মাসে যথাক্রমে আক্রান্ত হয় ২২, ১২ এবং ১৮ জন। তবে সদ্য শেষ হওয়া মে মাসে আবার উর্ধ্বমুখী ডেঙ্গু আক্রান্তের হার। গত মাসে আক্রান্ত হয়েছে ৫৩ জন। এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে ৩ জনের। তিনজনই মৃত্যু বরণ করেছেন চলতি বছরের জানুয়ারিতে।

সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য বিশ্লেষণে আরও দেখা যায়, গত ৫ মাসে চট্টগ্রামের ১৫ উপজেলার চেয়ে নগরে ডেঙ্গু আক্রান্তের হার বেশি। শুধু নগরেই আক্রান্ত হয়েছে ১১৯ জন। বিপরীতে ১৫ উপজেলা আক্রন্ত হয়েছেন ৬৩ জন। উপজেলাগুলোর মধ্যে সীতাকুণ্ড উপজেলায় সবচেয়ে বেশি ৩০ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছেন। এছাড়া সাতকানিয়া উপজেলায় ৫ জন, বাঁশখালী ও আনোয়ারা উপজেলায় ৪ জন করে, কর্ণফুলি ও রাউজান উপজেলায় ৩ জন, মীরসরাই, সন্দ্বীপ, রাঙ্গুনিয়া, হাটহাজারী, পটিয়া, লোহাগড়া উপজেলায় ২ জন করে এবং চন্দনাইশ, বোয়ালখালীতে ১ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত পাওয়া গেছে। তবে ফটিকছড়ি উপজেলায় এ রোগে আক্রান্ত কাউকে পাওয়া যায়নি।

এদিকে, চলতি বছরের প্রথম ৫ মাসের ডেঙ্গু পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে আগামী দিনগুলোতে এর প্রকোপ আরও বাড়তে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

তারা জানান, ভরা বর্ষায় সাধারণত এ রোগের প্রকোপ থাকে না। বর্ষা শেষ হওয়ার পর পরই এর প্রকোপ বাড়তে থাকে। অর্থাৎ জুলাই থেকে পরের মাসগুলোতে ডেঙ্গু আক্রান্তে সংখ্যা বাড়ে। যদিও এবছর খুব তাড়াতাড়িই ডেঙ্গুর প্রকোপ শুরু হয়েছে। এ প্রকোপ অব্যাহত থাকলে এ বছরের পরের মাসগুলোতে আক্রান্তের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।  

সিভিল সার্জন কার্যালয়ের চলতি বছরের প্রথম ৫ মাস সহ গত ২ বছরের ডেঙ্গুর তথ্যে বিশ্লেষণে আরও দেখা যায়, ২০২১ সালে প্রথম ৬ মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল একেবারে শূন্য। কিন্তু পরের ছয় মাসে এ সংখ্যা দাঁড়ায় ২৭১ জন। অন্য দিকে ২০২২ সালে প্রথম ছয় মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত ছিল মাত্র ৩৬ জন। যা পরের ছয় মাসে বেড়ে দাঁড়ায় ৪ হাজার ৪৪৫ জন। অর্থাৎ ওই বছর জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে ৫ হাজার ৪০৯ জন। একই চিত্র ডেঙ্গুতে মৃত্যুর ক্ষেত্রে। ২০২১ ও ২০২২ সালে প্রথম ৫ মাসে কোনো মৃত্যু না থাকলেও পরে মাস মাসে বেড়ে যায় মৃত্যু হার। ২০২১ সালে জুলাই থেকে ডিসেম্বরে মারা যায় ৫ জন এবং পরে বছর ২০২২ সালে একই সময় মারা যায় ৪১ জন।

ডেঙ্গু জ্বরের উপসর্গগুলো দেখা দিলে দ্রুত ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. ইলিয়াছ চৌধুরী।

সিভিল সার্জন বাংলানিউজকে বলেন, অন্যান্য বারের চেয়ে এবার ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি। গত বছর এ সময় তেমন আক্রান্ত ছিল না। কিন্তু এবছর ১৬৭ জন আক্রান্ত পাওয়া গেছে। জন সংখ্যার তুলনায় সংখ্যা তেমন বেশি না হলেও গত বছর এ সময়ের চেয়ে বেশি। সুতরাং ডেঙ্গু প্রতিরোধ সচেতন হওয়া জরুরি। ডেঙ্গু জ্বর হলে খাবারের প্রতিও বিশেষভাবে মনযোগী হতে হবে। বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে আরও যত্নবান হওয়া জরুরি। যেকোনও সময় ঘুমাতে গেলে অবশ্যই মশারি টাঙিয়ে ঘুমাতে হবে। আর লক্ষণ দেখা দিলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।

তিনি আরও বলেন, চট্টগ্রামে ডেঙ্গু রোগী বেড়েছে। এ রোগ মোকাবিলায় আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে। বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডেঙ্গু রোগীদের জন্য আলাদা চিকিৎসার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এছাড়া নগরের হাসপাতালগুলোতেও পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রয়েছে।

অন্যদিকে, মশক নিধনে সিটি করপোরেশনের কার্যকর কোনো উদ্যোগ না থাকায় ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ছে বলে অভিযোগ নগরবাসীর।

মশক নিধনে সিটি করপোরেশনে কোনো দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ নেই অভিযোগ করে জয়নাল আবেদীন নামে কাট্টলী এলাকার এক বাসিন্দা বাংলানিউজকে বলেন, সন্ধ্যা হলে ঘরে বসে থাকার সুযোগ নেই। মশার উৎপাত এতই বেড়েছে যে মশারি ছাড়া থাকায় দায়। আগে সিটি করপোরেশন থেকে মশার ওষুধ ছিটানো হলেও গত কয়ক বছর ধরে এমন কোনো কার্যক্রম চোখে পড়ছে না। সিটি করপোরেশন এলাকায় থাকছি কিন্তু নাগরিক ন্যূনতম সুবিধাটুকুও নেই। মৌসুম ভেদে বিভিন্ন রোগ ছড়াচ্ছে প্রতিনিয়ত। কিন্তু রোগগুলো নিয়ন্ত্রণে এলাকা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে জনপ্রতিনিধিদের কোনো উদ্যোগ নেই।

বাংলাদেশ সময়: ২২০০ ঘণ্টা, জুন ১, ২০২৩
এমআর/পিডি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।