ঢাকা, বুধবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

‘বান্ধবীকে নিয়ে বাবুল ও মিতুর মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া হতো’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩০৩ ঘণ্টা, জুন ১১, ২০২৩
‘বান্ধবীকে নিয়ে বাবুল ও মিতুর মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া হতো’ বাবুল ও মিতু।

চট্টগ্রাম: মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন আরও দুইজন।  রোববার (১১ জুন) চট্টগ্রামের তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ জসিম উদ্দিনের আদালতে সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের বাসার গৃহসহকারী মনোয়ারা বেগম বাপ্পী ওরফে ফাতেমা ও বাবুলের বান্ধবী আন্তর্জাতিক সংস্থায় কর্মরত ভারতীয় বংশোদ্ভূত নারীর বাসার গৃহসহকারী পম্পি বড়ুয়া সাক্ষ্য দেন।

 

রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি মহানগর পিপি আব্দুর রশীদ জানান, সাক্ষ্যগ্রহণের পর পম্পি বড়ুয়াকে আসামিপক্ষের জেরা সম্পন্ন হয়েছে। অন্য স্বাক্ষী ফাতেমার জেরা অসমাপ্ত অবস্থায় আদালত সোমবার পর্যন্ত মামলার কার্যক্রম মূলতবি করেছেন।

সাক্ষ্যে পম্পি বড়ুয়া জানান, ২০১৩-১৪ সালে তিনি কক্সবাজারের হলিডে মোড়ে বাবুলের বান্ধবীর বাসায় কাজ করতেন। বান্ধবীর স্বামী বিদেশে থাকতেন। বান্ধবীর বাসায় মাঝে মাঝে বাবুল আক্তার সন্ধ্যার পর যেতেন এবং রাতে থাকতেন। গভীর রাতে কখন বাবুল ওই বাসা থেকে বেরিয়ে যেতেন, তারা জানতেন না। তবে তিনি বাবুল আক্তারকে চিনতেন না। মিতু হত্যার পর টেলিভিশনে ছবি দেখে বাবুলকে চিনতে পারেন। বাবুলের বান্ধবী পম্পিকে এতই আদর করতেন যে, তাকে নাইজেরিয়া নিয়ে গিয়েছিলেন ৬ মাসের জন্য। বাবুলের বান্ধবীই পম্পিকে পাসপোর্ট করে দেন।

অন্যদিকে সাক্ষ্যে ফাতেমা জানান, ২০১৩ সালে কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের বাসায় কাজে যোগ দেন তিনি। বাবুল বদলি হয়ে চট্টগ্রামে আসার পর তাকেও নিয়ে আসা হয়। কক্সবাজারে বাবুলের বাসায় তার বান্ধবী সন্তান নিয়ে মাঝে মাঝে আসতেন। বাবুলের ব্যক্তিগত কক্ষে বসে তারা কথা বলতেন, তবে ওই কক্ষে অন্য কারও ঢোকার অনুমতি ছিল না। চট্টগ্রামের বাসায় আসার পর বান্ধবীকে নিয়ে বাবুল ও মিতুর মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া হতো। দু’জন আলাদা রুমে ঘুমাতেন।

ফাতেমা আরও জানান, বাবুলের ব্যক্তিগত কক্ষে দু’টি বই পাওয়া যায়, সেখানে বান্ধবীর কিছু ‘লেখা’ ছিল। মোবাইলে বাবুল ও বান্ধবীর ঘনিষ্ঠ কিছু ছবি ও এসএমএস পান মিতু। মোবাইলের এসএমএসগুলো ছেলের আর্ট পেপারে লিখে রাখেন মিতু। বাবুল মিশন থেকে দেশে ফেরার পর ওই কক্ষ খোলা নিয়ে মিতুর সঙ্গে ঝগড়া হয়। এরপর বাবুলের ঢাকায় পদায়ন হয়। তিনি ঢাকা চলে যাবার তিনদিন পর মিতুর মোবাইলে একটি মেসেজ আসে, যেখানে লেখা ছিল পরদিন ছেলের স্কুলে একটু আগেভাগে যেতে হবে। তবে অন্য অভিভাবকদের মোবাইলে এমন কোনো মেসেজ আসেনি বলে তিনি কয়েকজনকে ফোন করে জানতে পারেন।

পরদিন মিতু প্রতিদিনের সময়ে কিছু আগে ছেলেকে নিয়ে বের হন। ১০-১৫ মিনিট পর ভবনের নিরাপত্তারক্ষী বাসায় যান। এরপর ছেলে কান্না করতে করতে বাসায় যায়। তার জুতা ও পোশাকে রক্ত ছিল। বলল, ‘আমার আম্মু তো রাস্তায় পড়ে আছে, কেউ হাসপাতালে নিচ্ছে না। ’ তার আব্বুকে তিনবার ফোন দেয়, তিনবারই কেটে দেন বাবুল আক্তার। এরপর নানা-নানীকে কল দেয়, কিন্তু কান্নার জন্য কথা বলতে পারেনি। পাশের বাসার এক মহিলা গিয়ে মিতুর বাবা-মাকে মোবাইলে বলেন, ‘আপনাদের মেয়ে সিলিন্ডার এক্সিডেন্ট করেছে, তাড়াতাড়ি আসতে হবে। ’

ফাতেমা বলেন, ‘মিতু আন্টিকে অ্যাম্বুলেন্সে করে নিয়ে যায়। আমি উনাদের (মিতুর বাবা-মা) সাথে চলে যাই। এরপর ঢাকায় মাহিরের নানা-নানীর কাছে চার বছর ছিলাম। তারপর বাড়ি চলে যাই। ’

সাক্ষ্যগ্রহণের সময় আদালতের হাজতে থাকা বাবুল আক্তারকে শনাক্ত করেন পম্পি ও ফাতেমা। এরপর দুই সাক্ষীকে জেরা করেন বাবুল আক্তারের আইনজীবী কফিল উদ্দিন।

২০১৬ সালের ৫ জুন নগরের পাঁচলাইশ থানার ও আর নিজাম রোডে সকালে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে বাসার অদূরে গুলি ও ছুরিকাঘাতে খুন হন মাহমুদা খানম মিতু।  

বাংলাদেশ সময়: ২২৫৫ ঘণ্টা, জুন ১১, ২০২৩
পিডি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।