ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

পণ্ডিত বিহার বিশ্ববিদ্যালয়ের ধ্বংসাবশেষ উদ্ধারে চলবে খননকাজ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩০৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৮, ২০২৩
পণ্ডিত বিহার বিশ্ববিদ্যালয়ের ধ্বংসাবশেষ উদ্ধারে চলবে খননকাজ ...

চট্টগ্রাম: প্রায় ১২০০ বছর আগে স্থাপিত পণ্ডিত বিহার বিশ্ববিদ্যালয়ের ধ্বংসাবশেষ উদ্ধারে খননকাজ চালাবে বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ। শহর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরত্বের কর্ণফুলী উপজেলার বড় উঠান ও আনোয়ারার জুলধা এলাকাজুড়ে সপ্তম-অষ্টম শতকে গড়ে ওঠা এই বিশ্ববিদ্যালয় ষোড়শ শতকের দিকে বিলুপ্ত হয়ে যায়।

শনিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) উপজেলার বড় উঠান দেয়াঙ পাহাড়ের বিশ্বমুড়া এলাকায় ধ্বংসাবশেষের সন্ধানে খননকাজ উদ্বোধন করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের মহাপরিচালক চন্দন কুমার দে।

ইতিহাসবিদদের মতে, পণ্ডিত বিহারের অধ্যক্ষ ছিলেন পটিয়ার চক্রশালার প্রজ্ঞাভদ্র।

মগধের প্রধান আচার্য নরতোপা পণ্ডিত বিহারে প্রজ্ঞাভদ্রের কাছ থেকে দীক্ষা গ্রহণ করেছিলেন। পরবর্তী সময়ে লুই পা, শবর পা, লাড় পা, অবধূত পা, অমোঘনাথ, ধর্মশ্রী, মৈন, বুদ্ধজ্ঞান পা, অনঙ্গবজ্র প্রমুখ বৌদ্ধ সিদ্ধাচার্য এবং পণ্ডিতরা পরিদর্শক হিসেবে পণ্ডিত বিহারে এসেছিলেন। গবেষকদের ধারণা, বৌদ্ধ পণ্ডিতরা বিভিন্ন সময়ে এই বিহারে এসেছিলেন বলেই ‘পণ্ডিত বিহার’ নামকরণ হয়েছিল।

পণ্ডিত বিহার বিশ্ববিদ্যালয় বৌদ্ধধর্ম বিষয়ে শিক্ষা ও মতবাদ প্রচার কেন্দ্র হিসেবে পরিচালিত হতো। পাল সাম্রাজ্যের বৌদ্ধ ভিক্ষু এবং বৌদ্ধ ধর্ম প্রচারক অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান পণ্ডিত বিহারে অবস্থান ও অধ্যয়ন করেছিলেন। অধ্যাপকেরা অধ্যাপনা, অধ্যয়ন ও যোগ সাধনার পাশাপাশি অবসরে যেসব গান-দোঁহা রচনা করেছিলেন, তা পরবর্তীকালে চর্যাপদ নামে বাংলা ভাষা ও কাব্যের আদি নিদর্শন হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে।

পণ্ডিত বিহার বিশ্ববিদ্যালয় পুনঃপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে দীর্ঘদিন ধরে প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পালি বিভাগের শিক্ষক ড. জিনবোধি ভিক্ষু। যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশ হাইকমিশনার সাঈদা মুনা তাসনিমের সাথে সৌজন্য সাক্ষাতে সম্প্রতি তিনি এই বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে অবহিত করেন।

২০১২ সালে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের প্রতিনিধিদল দেয়াঙ পাহাড়ে পণ্ডিত বিহারের ধ্বংসাবশেষ পরিদর্শন করেন এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পক্ষে প্রতিবেদন জমা দেন। গত ২ আগস্ট পণ্ডিত বিহার বিশ্ববিদ্যালয় বাস্তবায়নের পাশাপাশি জাদুঘর স্থাপনের জন্য জায়গা পরিদর্শন করেন দেশি-বিদেশি পরিদর্শক দল। ১২ আগস্ট আবারও পরিদর্শক দল ঘুরে দেখেন পণ্ডিত বিহার বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য নির্ধারিত ৫০ একর জায়গা।  

আনোয়ারা উপজেলার ঝিওরি, হাজীগাঁও, বটতলী, কর্ণফুলী উপজেলার বড় উঠান ও জুলধা এলাকাজুড়ে পণ্ডিত বিহার বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান ছিল বলে ধারণা গবেষকদের। আনোয়ারার হাজীগাঁও গ্রাম থেকে ৬৬টি পিতলের বুদ্ধমূর্তি পাওয়া গেলে ওই স্থানে বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়।

বৃহস্পতিবার (৭ সেপ্টেম্বর) বিকালে খননকাজের পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেছেন প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগের প্রতিনিধিরা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন কর্ণফুলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মামুনুর রশীদ।  

সভায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও গণ্যমান্য ব্যক্তিরা প্রত্নতাত্ত্বিক খনন ও অনুসন্ধান কাজ পরিচালনা করার বিষয়ে সহযোগিতা করার আগ্রহ প্রকাশ করেন। সভায় উপস্থিত ছিলেন কর্ণফুলী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) পীযূষ কুমার চৌধুরী, জাতিতাত্ত্বিক জাদুঘরের উপ-পরিচালক ড. মো. আতাউর রহমান, ময়নামতি জাদুঘরের কাস্টডিয়ান মো. শাহীন আলম, প্রত্নতাত্ত্বিক অধিদপ্তর চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কার্যালয়ের গবেষণা সহকারী মো. নিয়াজ মাগদুম ও সার্ভেয়ার চাই থোয়াই মারমা।

পণ্ডিত বিহার বিশ্ববিদ্যালয় পুনরায় প্রতিষ্ঠার অন্যতম উদ্যোক্তা অধ্যাপক ড. জিনবোধি ভিক্ষু বলেন, বাংলা ভাষার হারিয়ে যাওয়া আদি চর্যাপদের স্মৃতিবিজড়িত প্রাচীন বাংলার বিদ্যাপীঠ পণ্ডিত বিহার বিশ্ববিদ্যালয় পুনঃপ্রতিষ্ঠার কাজ এগিয়ে চলছে। এই বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হলে বদলে যাবে চট্টগ্রাম তথা দেশের শিক্ষার মানচিত্র।

পণ্ডিত বিহার বিশ্ববিদ্যালয় বাস্তবায়ন নাগরিক উদ্যোগের সদস্য সচিব মোস্তফা কামাল যাত্রা বলেন, ১৯৬৬ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর পণ্ডিত বিহার বিশ্ববিদ্যালয় পুনঃপ্রতিষ্ঠার অনুমোদন হয়। ২০১২ সালে এই বিশ্ববিদ্যালয় পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য আইন পাস হয়েছে। ইতিমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে।  

বাংলাদেশ সময়: ১২৪০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৮, ২০২৩ 
এসি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।