ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

কক্সবাজার এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিট কালোবাজারির দখলে

সৈয়দ বাইজিদ ইমন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫১৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২৪
কক্সবাজার এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিট কালোবাজারির দখলে ...

চট্টগ্রাম: ট্রেনে কক্সবাজার ভ্রমণের স্বপ্ন পূরণ হয়েছে অনেকের। কিন্তু বেশিরভাগ মানুষের সে স্বপ্ন এখনো অধরা।

কারণ কক্সবাজার এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিট নিয়ে চলছে কালোবাজারিদের দৌরাত্ম্য। অনলাইনে টিকিট ছাড়ার কয়েক মিনিটের মধ্যেই হাওয়া হয়ে যায়।
লাইনে দাঁড়িয়েও টিকিট পাওয়া যেন ‘সোনার হরিণ’।

বাড়তি টাকা দিলেই কালোবাজারিতে মিলছে টিকিট। রীতিমতো ফেসবুকে পোস্ট দিয়েও বিক্রি করা হচ্ছে এসব টিকিট। স্বপ্নবাজ মানুষের স্বপ্ন পূরণে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে টিকিট কালোবাজারিরা। নির্ঘুম রাত কাটিয়ে অনলাইনে টিকিট নিতে বিপাকে পড়েছেন যাত্রীরা। কয়েক সেকেন্ডেই উধাও হয়ে যাচ্ছে অনলাইনের প্রায় সব টিকিট। অনলাইনে টিকিট না পেয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষোভ ঝেড়েছেন অনেকে।  

তাদের মধ্যে একজন লিখেন, ‘ঢাকা টু কক্সবাজার রুটে ৬ মার্চের (১০দিন আগে) ট্রেনের টিকিট কাটার জন্য সকাল ৭ টা ৫০ মিনিটে সার্ভারে ঢুকে বসেছিলাম। কারণ ৮টায় সার্ভার খু্লবে।  ৮টায় সার্ভার খুলল বটে, কিন্তু ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে আর কোন সিট খালি নেই! ৩০ সেকেন্ডে সিট খালি হওয়া কীভাবে সম্ভব! টিকিট কাটার জন্য তো কিছুটা সময় লাগে! জানি না ভূতেরা ট্রেনে করে সমুদ্র দেখতে যায় কিনা!’

গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর কক্সবাজার এক্সপ্রেসের টিকিট কালোবাজারি বন্ধ করতে কক্সবাজার আদালতে স্বপ্রণোদিত হয়ে মামলা করার উদ্যোগ নেন কক্সবাজারের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালত-১ এর বিচারক শ্রীজ্ঞান তঞ্চঙ্গ্যা। তিনি টিকিট কালোবাজারি দমনে মামলা দায়ের করেন।

এরপর ২৬ ডিসেম্বর কক্সবাজার আইকনিক রেল স্টেশনে গিয়ে সরেজমিন প্রাথমিক তদন্ত কাজ শুরু করেন র‍্যাবের কক্সবাজার ব্যাটালিয়নের জ্যেষ্ঠ সহকারী পরিচালক (আইন ও গণমাধ্যম) আবু সালাম চৌধুরী। তদন্তের দায়িত্বপ্রাপ্ত এ কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, ট্রেনটি এ অঞ্চলের মানুষের স্বপ্ন। এখন স্বপ্ন নিয়ে খেলছে কালোবাজারির দল।  

র‍্যাবের তদন্তের খবর পেয়ে উধাও হয়ে যায় কালোবাজারির দল। পাওয়া যেত ট্রেনের অগ্রিম টিকিট। কিন্তু মাস যেতে না যেতেই আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছে কালোবাজারির দল। তারা রেলওয়ে কর্মকর্তা ও এনআরবি সদস্যদের যোগসাজশে আবারও শুরু করেছে কালোবাজারি। টিকিট কালোবাজারি বন্ধে রেলওয়ে সংশ্লিষ্ট সকলকে কাজ করার অনুরোধ জানিয়েছেন ভ্রমণ পিপাসুরা।

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ নাজমুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, র‌্যাবের তদন্তের বিষয়টি আমার জানা আছে। তারা তদন্ত করছেন। যারা অনৈতিক কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত, কিভাবে তাদের প্রতিহত করা যায় সেভাবে কাজ করা হচ্ছে।

রেলের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জড়িত কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, টিকিটের কালোবাজারির ব্যাপারে রেলের কোনো কর্মকর্তা জড়িত আছে বলে এখনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এ ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক করা হয়েছে। যদি কাউকে জড়িত পাওয়া যায়, তাহলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

র‍্যাবের কক্সবাজার ব্যাটালিয়নের জ্যেষ্ঠ সহকারী পরিচালক (গণমাধ্যম) আবু সালাম চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, এ বিষয়ে র‍্যাব তদন্ত করছে। তদন্তে অনেক কিছু পাওয়া গেছে। আদালতে প্রতিবেদনের তথ্য উপস্থাপন করা হবে।

কক্সবাজার এক্সপ্রেসের পাশাপাশি যাত্রীর চাপ বিবেচনা করে এ রুটে দ্বিতীয় আন্তঃনগর ট্রেন হিসেবে ১০ জানুয়ারি থেকে পর্যটক এক্সপ্রেস নামে আরও একটি আন্তঃনগর ট্রেন চালু করে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। পর্যটক এক্সপ্রেস (৮১৫) কক্সবাজার থেকে রাত ৮টায় ছেড়ে ঢাকার কমলাপুর আসে ভোর সাড়ে ৪টায়। অন্যদিকে, ঢাকার কমলাপুর থেকে পর্যটক এক্সপ্রেস (৮১৬) ছেড়ে যায় ভোর ৬টা ১৫ মিনিটে। কক্সবাজার স্টেশনে পৌঁছায় বেলা ৩টায়।  

অভিযোগ উঠেছে, অনলাইন ও কাউন্টারে টিকিট পাওয়া না গেলেও কালোবাজারে বেশি দামে টিকিট বিক্রি হচ্ছে। প্রতিটি টিকিটের জন্য দেড় থেকে দুইশ টাকা বাড়তি চাওয়া হচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫০০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২৪ 
বিই/এসি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।