ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

গণসঙ্গীতের মাধ্যমে সকল অপশক্তির বিনাশ সম্ভব

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৩৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৭, ২০২৪
গণসঙ্গীতের মাধ্যমে সকল অপশক্তির বিনাশ সম্ভব

চট্টগ্রাম: অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার জন্য সংস্কৃতি ও রাজনীতির বিকল্প নেই। গণসঙ্গীতের মাধ্যমে সকল অপশক্তির বিনাশ সম্ভব।

একমাত্র নাগরিক দায় থেকে গণসঙ্গীত শিল্পীরা সবার আগে দেশের সকল সংকটে প্রতিবাদে সোচ্চার হয়।

শনিবার (২৭ এপ্রিল) সকালে চট্টগ্রাম শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে বাংলাদেশ গণসঙ্গীত সমন্বয় পরিষদ আয়োজিত ‘শিল্পীর নাগরিক দায়, জীবন ও সংগ্রাম’ শীর্ষক  সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন।

সংগঠনের সভাপতি কাজী মিজানুর রহমানের সভাপতিত্বে সেমিনারে মূখ্য আলোচক ছিলেন নাট্যব্যক্তিত্ব মামুনুর রশিদ। আলোচনায় আরও অংশ নেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ ও গবেষক শামসুল হক। সূচনা বক্তব্য দেন গণসঙ্গীত সমন্বয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মানজার চৌধুরী সুইট।

মামুনুর রশীদ বলেন,  বর্তমানে একটি অপসংস্কৃতি তৈরি হয়েছে, যা থেকে ভাল এবং মহৎ কিছু আশা করা যায় না। রাজনীতি ও সংস্কৃতি একসঙ্গে চলতে না পারলে এ বাধা কাটানো যাবে না। ধর্ম ব্যবসায়ীরা সমাজকে বিভ্রান্ত করছে, এ পরিস্থিতি উত্তরণে শিল্পীরা বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে পারে, তবে এজন্য প্রয়োজন সুষ্ঠু রাজনৈতিক ধারা।

তিনি বলেন, মানুষকে উজ্জীবিত করার বিষয় হল নাটক। গণসঙ্গীত বলতে আইপিটিএর গান। তবে সেটিরও পরিবর্তন দরকার। সংঘবদ্ধ শক্তি ছাড়া পরিবর্তন সম্ভব নয়। এটার একটা ব্যাপক রূপ দেওয়ার জন্য সংগঠন প্রয়োজন। সংগঠনের প্রয়োজনে সমন্বয় পরিষদ রয়েছে। আমরা সবসময় বলে থাকি, নতুন গান আসছে না কেন। তবে ইতিবাচক বিষয় হল অনেক মৌলিক গান এসেছে।

মামুনুর রশিদ বলেন, একসময় সংস্কৃতি এবং শিল্পীদের কাছে রাজনৈতিক কর্মীরা যেতেন। কাগমারী সম্মেলনে অধিকাংশ তোরণ ছিল শিল্পী, নাট্যকার ও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নিয়ে। শিল্পী সাহিত্যিক লাগে রাজনৈতিক সংগঠনে। কল্যাণের কথা চিন্তা করলে শিল্পের কাছে আসতে হবে। ৯০ অভ্যুত্থানে যদি শিল্পীরা না থাকত রাজনীতির সঙ্গে তাহলে তা সম্ভব হত না। জীবন সংগ্রামে শিল্পের প্রতি দায় মেটায় সংস্কৃতি কর্মীরা। কিন্তু এখন তাতে চ্ছেদ পড়েছে। সংগ্রামের পথ থেকে যে সাংস্কৃতিকর্মী পলাতক তার পক্ষে শিল্প করা সম্ভব না।

সেমিনারে বাংলা একাডেমি পুরষ্কারপ্রাপ্ত লেখক ও গবেষক শামসুল হক বলেন, স্বাধীনতার চেতনা থেকে আমরা সরে যাচ্ছি। এ দেশ যখন সুন্দর অবস্থানে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা হচ্ছিল তখনই বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হল।  এরপরেই সংস্কৃতি কর্মী, লেখক ভাগ হয়ে গেল। পরবর্তীতে ৯০ দশকে সবাই একত্রিত হয়। কিন্তু এরপর আবারও রাজনৈতিক বিভক্তির কারণে শিল্পীরাও আলাদা হয়ে যায়। একসময় এলাকায় যাত্রাপালা হত। গণসঙ্গীত হত। কিন্তু ৯০ দশকের পর ধীরে ধীরে ঝিমিয়ে পড়েছে। এখন সংস্কৃতি কর্মীদের মিছিলে ৩০ জনের বেশি হয় না। অথচ মৌলবাদী সংগঠনের কর্মসূচি ও মিছিলে হাজার হাজার মানুষ হয়। কিন্তু মৌলবাদীদের বিরুদ্ধে প্রগতিশীল মানুষের অবস্থান অতি অল্প। সংস্কৃতি কর্মীদের ঘুরে দাঁড়াতে হবে। প্রগতিশীল রাজনৈতিক কর্মীদের আরও অগ্রসর হতে হবে।

এদিকে বিকেল সাড়ে চারটায় দলীয় সঙ্গীত পর্বে হেমাঙ্গ বিশ্বাসের গান পরিবেশন করেন যশোরের দল পুনশ্চ, শাহ আব্দুল করিমের গান পরিবেশন করেন সিলেটের অন্বেষা শিল্পীগোষ্ঠী, কৃষক আন্দোলনের গান পরিবেশন করেন উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী ঢাকা, শেখ লুৎফর রহমানের গান পরিবেশন করেন ঢাকার সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী, সলিল চৌধুরীর গান পরিবেশন করেন ঢাকার বহ্নিশিখা, চাকমা ভাষার গণসঙ্গীত পরিবেশন করেন রাঙ্গামাটির গিরিসুর শিল্পীগোষ্ঠী, ভাষা আন্দোলনের গান পরিবেশন করেন চট্টগ্রামের ছন্দানন্দ সাংস্কৃতিক পরিষদ, আখতার হুসেন ও সেলিম রেজার গান পরিবেশন করেন খেলাঘর চট্টগ্রাম মহানগরীর শিল্পীরা।

একক সঙ্গীত পরিবেশন করেন সাতক্ষীরার শিল্পী রোজ বাবু, পাবনার প্রলয় চাকী, সিলেটের গৌতম চক্রবর্তী, ঢাকার ফকির শাহাবুদ্দীন, সুরাইয়া পারভীন ও নবনীতা জাঈদ চৌধুরী এবং চট্টগ্রামের সুজিত চক্রবর্তী। দলীয় নৃত্য পরিবেশন করেন ঘুঙুর নৃত্যকলা কেন্দ্র।

বাংলাদেশ সময়: ২০২২ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৭, ২০২৪
এমআর/টিসি
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।