ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

আমরা জানি ব্যাংক কীভাবে তুলতে হয়: খলিলুর রহমান

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০১৪ ঘণ্টা, মে ১১, ২০২৪
আমরা জানি ব্যাংক কীভাবে তুলতে হয়: খলিলুর রহমান

চট্টগ্রাম: আগামী চার বছরের মধ্যে দেশের প্রথম বেসরকারি ব্যাংক ‘ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেড’ আগের গৌরবোজ্জ্বল জায়গায় ফিরবে বলে প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন ব্যাংকটির নতুন চেয়ারম্যান, শিল্পপতি খলিলুর রহমান।  

তিনি বলেন, আমরা ব্যবসায়ী।

আমরা জানি, ব্যাংক কীভাবে তুলতে হয়। ১৯৮৩ সালে আমরা এ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেছি, ৪৫ বছর বয়স।
আমি জানি, ব্যাংকের কী, কোথায়, কোন কারণ আছে। ২০১২ সাল পর্যন্ত এক নম্বর কাতারে ছিল। ন্যাশনাল ব্যাংক বাংলাদেশের প্রথম বেসরকারি ব্যাংক। আমাদের যারা পরিচালক ছিলেন, তারা সবাই ব্যবসায়ী ছিলেন। তাদের ব্যবসার যথেষ্ট অভিজ্ঞতা ছিল। ওই অভিজ্ঞতা দিয়েই আমরা ব্যাংকটি করেছিলাম।

শনিবার (১১ মে) বাংলানিউজের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় তিনি এ কথা বলেন।  

স্বনামধন্য শিল্পপ্রতিষ্ঠান কেডিএস গ্রুপের চেয়ারম্যান খলিলুর রহমান সিআইপি চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি। চট্টগ্রামের পটিয়ার ছেলে খলিলুর রহমানের জন্ম ১০ এপ্রিল ১৯৪৫। বাবা মৃত আলহাজ আবুল খায়ের। মা মৃত আলহাজ ফাতেমা বেগম। তিনি বাংলাদেশ সিআর কয়েল ম্যানুফেকচারার অ্যান্ড এক্সপোর্টারস অ্যাসোসিয়েশন, প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড, এআইবিএল ক্যাপিটাল মার্কেট সার্ভিস লিমিটেডের চেয়ারম্যান। তিনি বিজিএমইএর সাবেক প্রথম সহসভাপতি, বিকডার ভাইস প্রেসিডেন্ট, প্রগতি ইন্স্যুরেন্সর পরিচালক।

ন্যাশনাল ব্যাংকের চ্যালেঞ্জ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি চ্যালেঞ্জ নিয়েছি। বাংলাদেশ ব্যাংক আমার কাছ থেকে লিখিত নিয়েছে। আমি গ্যারান্টার। বাংলাদেশ ব্যাংক যথেষ্ট সহযোগিতা করেছে। ইনশাআল্লাহ আমরা সফল হবো। যারা ঋণ নিয়েছে তাদের কাছ থেকে আদায় করবোই। করতেই হবে, উপায় নেই। যারা প্রকৃত ব্যবসা করে, দেশে বিনিয়োগ করে, কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে তাদের যথেষ্ট সুযোগ দেব। এটি আমার ব্যাংক কখনো বলি না। আমরা বলি, ন্যাশনাল ব্যাংক জনগণের ব্যাংক, বাংলাদেশের মানুষের ব্যাংক। যারা আমার ব্যাংক বলেছে, তারা শেষ করে দিয়েছে।

ন্যাশনাল ব্যাংক কি এককভাবে ব্যবসা পরিচালনার সক্ষমতা রাখে? ব্যাংক একীভূত করার বিষয়ে চাপ ছিল বলে আলোচনা রয়েছে। এটা কী সঠিক? উত্তরে খলিলুর রহমান বলেন, ব্যাংকটি একীভূত করার বিষয়ে চাপ থাকার বিষয়টি সত্যিকার অর্থে সঠিক নয়। আমরা যখন শুনি ব্যাংকটি একীভূত করার কথা চলছে, তখন আমরা আগের পর্ষদ সভা করে সিদ্ধান্ত দিই, যে ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হতে যাচ্ছে তার চেয়ে আমাদের ব্যাংকের ভিত্তি শক্ত বেশি। আমরা কেন একীভূত হবো? আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ করি। আমরা পর্ষদ থেকে সিদ্ধান্ত দিলাম, আমরা একীভূত হতে রাজি নই। আমাদের ব্যাংক আমরা চালাব। দরকার হলে নতুন পর্ষদ গঠন করবো।  

এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, অন্য ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হলে অনেক লোকের চাকরি হারানোর শঙ্কা আছে। কারণ অনেক জায়গায় দুটি ব্যাংকেরই শাখা রয়েছে। এটা আমরা ভেবেছি।  

ন্যাশনাল ব্যাংকের নতুন পরিচালনা পর্ষদের অগ্রাধিকার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আপনারা জানেন ব্যাংকের পরিস্থিতি। আমার দোষ, দুর্বলতা আমি বলতে পারবো না। ব্যাংক কার দ্বারা, কীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, কীভাবে টাকা নিয়েছে সব জানেন। লুটপাটের ধন বাঁচাতে আমরা একত্রিত হয়েছি। বাংলাদেশ ব্যাংককে বলেছি, আমরা একীভূত হতে দেবো না। আমরা নিজেরা চালাব। আমরা কষ্ট করে চালাব। পরিশ্রম, সততা থাকলে কষ্ট করলে এগিয়ে নিতে পারবো। পাওনা উসুল করবো। যারা ব্যাংক থেকে টাকা নিয়েছে তাদের বোঝাবো, আইন প্রয়োগ করে টাকা ফেরত আনবো। ডিপোজিট আনবো। ডিপোজিট দিয়ে ব্যবসা করবো। একসময় আমরা অনেক বেশি ডিভিডেন্ট দিয়েছি। ইচ্ছে করলে আমরা উন্নত করে এগিয়ে নিতে পারবো। আবার ন্যাশনাল ব্যাংকের হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনতে পারবো। এটি আমার বিশ্বাস।

খেলাপি ঋণ আদায় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা চেষ্টা করবো আদায় করতে। প্রকৃত ব্যবসায়ী ঋণ নিলে খেলাপি হতে পারে না। অ্যাসেসমেন্ট করে ঋণ দেওয়া হয়নি। মনিটরিং করা হয়নি। আমরা প্রত্যেকের কাছে যাব, যারা খেলাপি। বড় খেলাপিদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা ভুল স্বীকার করেছে, টাকা পরিশোধে ইচ্ছুক। আমি আশাবাদী। আমরা ব্যবসা করবো। ব্যবসা করে ক্ষতি পুষিয়ে নেব। বড় ব্যবসায়ীদের টাকা খেলাপি হবে না। যারা ব্যবসায়ী না হয়ে ঋণ নিয়েছে তারাই সমস্যা। অন্তত ৫০ শতাংশ আদায়ে আমরা আশাবাদী। চার বছরে আমরা একটি ভালো অবস্থানে চলে যাব।

স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, আমরা যখন চার কোটি টাকায় এ ব্যাংকের উদ্যোগ নিয়েছিলাম, তখন বেসরকারি ব্যাংক ছিল না। আমরা ঘরে ঘরে গিয়ে, বন্ধুবান্ধব ধরে ব্যাংকের পরিচালক হিসেবে এনেছি। ব্যাংকের পরিচালক হলে টাকা ফেরত পাবে কি না তখন চিন্তা করতো। আমি বলেছি, তুমি টাকা দাও, টাকা ফেরত না পেলে আমি দিয়ে দেব। এভাবে বলে রাজি করিয়েছি।  

ব্যাংক ব্যবসা বুঝতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ব্যাংক ম্যানেজার ব্যবসা বুঝলে ঋণ দিতে পারে। যাকে ঋণ দেবে, তার বিনিয়োগ মনিটরিং করতে হবে। নিয়মিত পরিশোধ করছে কি না দেখতে হবে। বড় লোনে ত্রৈমাসিক, ষাণ্মাসিক, বার্ষিক রিশিডিউল করা যেতে পারে। যেসব ব্যাংকের স্টাফরা মনিটরিং করেনি সেগুলো কষ্টে পড়ে গেছে। মনিটরিং থাকলে টাকা খেলাপি হয় না। খেলাপির কারণে বিশ্বাস কমে যাচ্ছে সাধারণ মানুষের। প্রকৃত ব্যবসায়ী ব্যাংকের টাকা মেরে খাবে না। ব্যবসায়ীদের মুখের কথার দাম আছে। আমরা কোটি কোটি টাকা কথার ওপর দিয়ে থাকি, বেঈমানি হয় না। আমরা চেষ্টা করবো বিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে। মালয়েশিয়ায় আমাদের ১১টি, মালদ্বীপে ৩টি, সিঙ্গাপুরে ২টিসহ বিভিন্ন দেশে শাখা আছে। এসব শাখার মাধ্যমে আমার বৈদেশিক মুদ্রা আহরণ করবো। আমাদের পর্ষদে সবাই অভিজ্ঞ। ইনশাআল্লাহ আমরা ন্যাশনাল ব্যাংকের হারানো অবস্থান ফিরিয়ে আনতে পারবো।

তিনি বলেন, যারা ঋণ নিয়েছে, দরকার হলে জামানত হিসেবে দেওয়া বাড়ি, জমি বিক্রি করে দেব। দেশে আইন আছে, ব্যাংকের টাকা দিতে না পারলে মামলা করে সম্পদ বিক্রি করে দেওয়া যায়।  

নতুন পরিচালনা পর্ষদ ব্যাংকটিতে ৩ হাজার কোটি টাকার আমানত সংগ্রহের লক্ষ্য নিয়েছে। এই আমানত কার কাছ থেকে কীভাবে সংগ্রহ করা হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কয়েকদিন আগে সাড়ে ৪ টাকা ছিল শেয়ারের দাম। এখন সাত টাকা হয়ে গেছে। ডিপোজিট দিন দিন বাড়ছে। এর জন্য বন্ধু, ব্যবসায়ীদের কাছে যাব। ডিপোজিট মানে লাভ নয়। ডিপোজিট খাটিয়ে আমানতকারীকে লাভ দিতে হবে। চার বছরে আগের অবস্থানে ফিরে যেতে পারবো।  

এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ব্যাংকাররা চাকরির জন্য অনেক কিছু করে। নেতৃত্ব খারাপ হলে চুপ থাকে। ব্যাংকে সবার আমানত থাকে। তাই সততা ও দেশপ্রেম থাকতে হবে।  

বাংলাদেশ সময়: ২০০০ ঘণ্টা, মে ১১, ২০২৪
এআর/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।