চট্টগ্রাম: নগরের দুই নম্বর গেট এলাকার স্মৃতিস্তম্ভ ছাড়া সব স্থাপনা উচ্ছেদ ও সবুজায়নের মাধ্যমে আগের অবস্থানে ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়েছেন নগর পরিকল্পনাবিদ ও পরিবেশকর্মীরা।
বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) আয়োজিত মতবিনিময় সভায় তারা এ দাবি জানান।
চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলামের সভাপতিত্ব সভায় আলোচনা করেন প্রফেসর ডা. ইমরান বিন ইউনুস, স্থপতি জেরিনা হোসেন, প্রকৌশলী সুভাষ বড়ুয়া, স্থপতি আশিক ইমরান, সিনিয়র সাংবাদিক জাহিদুল করিম কচি, সালাউদ্দিন মো. রেজা, আসমা আকতার, হাসান মারুফ রুমি, শফিক আনোয়ার, হুমায়ুন কবির, হাসান মারুফ রুমি, সাংবাদিকনেতা শাহনেওয়াজ প্রমুখ।
উপস্থিত ছিলেন বাবুল চন্দ বণিক, মো. আল আমিন হোসেন, মুক্তিযোদ্ধা ইনসিয়াত মো. আলী আকবর, আহমেদ ইকবাল হায়দার, তাসলিমা মুনা, রিতু পারভীন, মনিরা পারভীন রুবা, ফারমিন এলাহি, লায়ন এমএ হোসেন বাদল, ফারুক আহমদ, আবু সুফিয়ান রাশেদ, রায়হান বাদশা, শ ম বখতিয়ার, নিজাম সিদ্দিকী, সাবাইতা সুলতানা ইতু, মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম, মো. জসিম উদ্দিন, মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম, মনীষা মহাজন, চৈতী সর্ববিদ্যা, হুমায়ুন কবির চৌধুরী, মো. সাব্বির রাহমান সানি, মোহাম্মদ ইকবাল হসান, মেহেরীন, শামিলা রিমা, মোহাম্মদ জিয়াউল হক, মো. আশরাফ হোসেন, স্থপতি তুহিন বড়ুয়া, মো. আবদুর রহিম প্রমুখ।
বিপ্লব উদ্যানের আগের ও বর্তমান অবস্থান নিয়ে একটি সচিত্র প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন চসিকের স্থপতি আবদুল্লাহ-আল-ওমর।
ডা. ইমরান বিন ইউনুস বলেন, চট্টগ্রাম নগরীতে প্রায় ৮০ লাখ মানুষের বসবাস। এই নগরীকে সবার বাসোপযোগী করা লাগবে। তাই বিপ্লব উদ্যান নিয়ে সবাইকে সমন্বয় করে পদক্ষেপ নিতে হবে।
তিনি উড়াল সড়কের ডিভাইডারে পার্কিং স্পেস করার পরামর্শ দেন।
প্রকৌশলী সুভাষ বড়ুয়া বাসযোগ্য চট্টগ্রাম গড়তে চসিককে দ্রুত সাহসী পদক্ষেপ নিতে বলেন। তিনি বলেন, চট্টগ্রামে কোনো প্ল্যানিং ইনস্টিটিউশন নেই বলে চট্টগ্রামে জঞ্জাল সৃষ্টি হয়েছে।
তিনি চসিককে উড়াল সড়কে অপরিকল্পিত র্যাম্প স্থাপন না করতে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিতে বলেন।
স্থপতি জেরিনা হোসেন বিপ্লব উদ্যানের সবুজায়নের পাশাপাশি ফুটপাতকে জনপরিসরে হাঁটার উপযোগী করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, সিটি করপোরেশন আইন অনুসারে চসিকের উন্মুক্ত স্থান রক্ষায় দায়িত্ব নেওয়ার কথা থাকলেও বিপ্লব উদ্যানের মতো জনগুরুত্বপূর্ণ উদ্যানের বাণিজ্যিকীকরণ হয়ে গেছে। নাগরিকদের স্বার্থে বিপ্লব উদ্যানকে আবারো নাগরিকদের উদ্যান হিসেবে ফিরিয়ে আনতে হবে।
স্থপতি আশিক ইমরান বলেন, বিপ্লব উদ্যানে ডিজাইনের বাইরে প্রচুর স্থাপনা ও দোকান হয়েছে। আমরা স্থপতিদের সংগঠনের পক্ষ থেকে সংগঠনের সব সদস্যকে বিপ্লব উদ্যানের ডিজাইনের বাইরে কোনো প্ল্যান না করার জন্য বলেছি। নগরীর সৌন্দর্যের স্বার্থে আমাদের বক্তব্য হলো অবিলম্বে বিপ্লব উদ্যান থেকে অননুমোদিত দোকান স্থাপনা সরিয়ে গাছপালা লাগিয়ে সবুজায়নের ব্যবস্থা করা।
প্রেস ক্লাবের সভাপতি সালাউদ্দিন মো. রেজা বলেন, বিপ্লব উদ্যানের আগের সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনা প্রয়োজন। এই উদ্যান স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাসের স্মৃতি বিজড়িত। বিগত দুই মেয়রের সময়ে নেওয়া কার্যক্রম বন্ধ করে আগের মতো সবুজায়ন করতে হবে।
সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের আহবায়ক জাহিদুল করিম কচি বলেন, বিপ্লব উদ্যানকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে স্বাধীনতা যুদ্ধের ঘোষণার স্মৃতি রক্ষায় চসিককে ব্যবস্থা নিতে হবে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা অধিকার রক্ষা পরিষদের আহবায়ক আসমা আকতার বলেন, আইন অনুযায়ী একটি উদ্যানে ২-৫ শতাংশের বেশি কংক্রিটের স্থাপনা রাখার সুযোগ নেই। কিন্তু বিপ্লব উদ্যানে এর চেয়ে অনেক বেশি কংক্রিটের স্থাপনা বর্তমানে আছে। তাই এই উদ্যানকে সবুজায়ন করে সববয়সী নাগরিকের অবকাশ যাপনে আগের মতো ব্যবস্থা করতে হবে করপোরেশনকে। এজন্য সবুজায়ন করা লাগবে।
রাজনৈতিক কর্মী হাসান মারুফ রুমি বলেন, উন্নয়নের প্রথম শর্ত হলো পরিবেশ ও প্রাণীকুলকে রক্ষা করা। সবুজায়ন বৃদ্ধি করা। কিন্তু বিপ্লব উদ্যানে অপরিকল্পিত পরিকল্পনার মাধ্যমে ইট-পাথরের জঞ্জাল সৃষ্টি করা হয়েছে। তাই এই উদ্যানকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে এনে সবুজায়নের উদ্যোগ নিতে হবে করপোরেশনকে।
পরিবেশ কর্মী শফিক আনোয়ার আইকনিক স্থান হিসেবে বিপ্লব উদ্যান রক্ষার উদ্যোগ নিতে বলেন চসিককে।
দোকান মালিকদের পক্ষে হুমায়ন কবির বলেন, বিপ্লব উদ্যান আগে অন্ধকারাচ্ছন্ন ছিল। মাদক বেচাকেনা হতো। চসিকের আগের মেয়রের সময় ঠিকাদারদের মাধ্যমে দোকান বরাদ্দ দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৮২৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩, ২০২৪
এআর/পিডি/টিসি