চট্টগ্রাম: মীরসরাইয়ের বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চলে দুই একর জায়গায় কারখানা স্থাপন করবে স্কাই বিজ লিমিটেড নামে বাংলাদেশি কোম্পানি। সেই কারখানায় তৈরি হবে ড্রোন।
‘ড্রোন’ শব্দটি সাধারণ ভাষায় পাইলটবিহীন বিমানকে (ইউএভি) বোঝায়।
মূলত সামরিক ও মহাকাশ শিল্পের জন্য ড্রোন ব্যবহার শুরু হলেও পরে মানুষ, রক্ত ও পণ্য পরিবহন, কৃষিকাজ, পাহাড়ধসের আগাম সতর্কতা প্রাপ্তি, সেতু ও ভবনের ফাটল শনাক্তকরণ এবং মেরামত, যানবাহন শনাক্তকরণ ও গণনা, সিসিটিভি ক্যামেরার উচ্চতা নির্ধারণ, জমি পরিমাপ, চিত্রধারণ, যন্ত্রপাতিতে তাপবিষয়ক ত্রুটি ও নদীতে পানির গুণগতমান নির্ধারণ করা ইত্যাদি কাজে ড্রোনের ব্যবহার বিস্তার লাভ করেছে।
২০১৪ সালের জানুয়ারিতে সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাস্ট রোবটিক্স অ্যারোনটিক্স অ্যান্ড ইন্টারফেসিং রিসার্চ গ্রুপের সদস্যদের তৈরি করা ড্রোন আকাশে উড়লো। এরপর বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা একাডেমিক কাজের অংশ হিসেবে ড্রোন তৈরির উদ্যোগ নেন। এ কাজে তারা কিছুটা সফলও হন। সম্প্রতি কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের (সিইউবি) সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের একদল শিক্ষার্থী তৈরি করেন ‘ওয়াটার ড্রোন’, যেটি ২ কিলোমিটার পরিসীমা পর্যন্ত ৭ কেজি ভার বহন করে জরুরি ত্রাণ সামগ্রী সরবরাহ করতে সক্ষম। তবে পর্যাপ্ত বিনিয়োগ ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশের অভাবে অনেক প্রচেষ্টাই সফলতার মুখ দেখছে না।
এ অবস্থায় স্কাই বিজ লিমিটেড ৪ কোটি ৫৯ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার বিনিয়োগে বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চলে ড্রোন তৈরির কারখানা স্থাপন করতে যাচ্ছে। বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) ঢাকার বেপজা নির্বাহী দপ্তরে স্কাই বিজ লিমিটেডের সঙ্গে চুক্তি করেছে বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষ (বেপজা)। বেপজার সদস্য (বিনিয়োগ-উন্নয়ন) মো. আশরাফুল কবীর ও স্কাই বিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জসীম উদ্দিন আহমেদ নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।
স্কাই বিজ বছরে মোট ১০টি মডেলের ৭ হাজার ৩১৪ পিস বিভিন্ন ধরনের ড্রোন তৈরি করতে পারবে, যা কৃষিকাজে কীটনাশক ছিটানো, অগ্নিনির্বাপণ, জরুরি উদ্ধারকাজ, পণ্য সরবরাহ, সিনেমাটোগ্রাফি, ম্যাপিং প্রভৃতি কাজে ব্যবহৃত হবে বলে জানা গেছে। দেশে বাণিজ্যিক ও রপ্তানির উদ্দেশে এ ধরনের ড্রোন তৈরির উদ্যোগ এটাই প্রথম। মীরসরাইয়ের বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চলে কারখানা স্থাপন হলে দেশের নাগরিকদের কর্মসংস্থানের সুযোগও সৃষ্টি হবে।
চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বেপজার নির্বাহী চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল আবুল কালাম মোহাম্মদ জিয়াউর রহমান বলেন, দেশে ড্রোন তৈরিতে বিনিয়োগের পথিকৃৎ হিসেবে এবং রপ্তানি বাস্কেটকে প্রসারিত করতে এ উদ্যোগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
স্কাই বিজের কর্মকর্তারা জানান, ২০২৫ সালের জানুয়ারি মাসে দুটি মডেলের বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হতে পারে। প্রাথমিকভাবে অগ্নিনির্বাপণের জন্য উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন রোটারি উইং ড্রোন এবং সিনেমাটোগ্রাফি, ম্যাপিং ও সার্ভিলেন্স উপযোগী ফিক্সড উইং বানানো হবে। কারখানা চালু হলে বছরে বিভিন্ন মডেলের ৭ হাজার ৩১৪টি ড্রোন তৈরি করে রপ্তানি করা যাবে, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ২ হাজার ৩০০ কোটি টাকা।
স্কাই বিজের এমডি জসীম আহমেদ জানান, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সেবামূলক কাজে ব্যবহারের জন্য ড্রোনের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। স্কাই বিজের ড্রোনগুলোর নকশা করা হয়েছে বেসামরিক কাজে ব্যবহারের জন্য। সবগুলো মডেলের ডিজাইন, সফটওয়্যার, ফ্লাইট কন্ট্রোল স্কাই বিজের উদ্ভাবন। প্রাথমিকভাবে দুটি মডেলের ড্রোন তৈরি করা গেছে। তবে যন্ত্রাংশ ও কাঁচামাল আমদানি করতে হচ্ছে। কারখানা পুরোদমে চালু হলে এসব যন্ত্রাংশ ও কাঁচামাল উৎপাদন করা যাবে।
মীরসরাইয়ে শিল্পনগরে বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা (বেপজা) ১ হাজার ১৩৮ একর জায়গার ওপর ৫৩৯টি শিল্প প্লটের আলাদা একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন করছে। সেখানে ইতোমধ্যে জুতার কাঁচামাল, পোশাক ও ফোম তৈরির ৩টি কারখানা উৎপাদনে গেছে। শিল্পকারখানা করতে এখন পর্যন্ত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বরাদ্দ নিয়েছে ১৫০টি প্লট।
বাংলাদেশ সময়: ১২৪১ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৪, ২০২৪