চট্টগ্রাম: প্রবাসীকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে সাবেক হুইপ সামশুল হক চৌধুরী ও চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরীসহ ১৮০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। এ মামলায় অজ্ঞাত ৬০ থেকে ৭০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
শুক্রবার (১ নভেম্বর) রাতে পটিয়া থানায় মামলাটি করেন উপজেলার কচুয়াই ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের মো. শাহাজান।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন, পটিয়ার সাবেক পৌর মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদ, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান দিদারুল আলম, সাবেক পৌর মেয়র আইয়ুব বাবুল, হুইপের ছেলে নাজমুল করিম চৌধুরী শারুন, হুইপের ছোট ভাই ফজলুল হক চৌধুরী মহব্বত, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আ ক ম সামশুজ্জামান, লিটন বড়ুয়া, অসিত কুমার বড়ুয়া, আলমগীর আলম, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আইয়ুব আলী, কাজী জিল্লুর রহমান, সাবেক চেয়ারম্যান মাহবুবুল হক চৌধুরী, ফৌজুল কবির কুমার জাকারিয়া ডালিম, আমিনুল ইসলাম খান টিপু, মোহাম্মদ হাশেম, শাহাদাত হোসেন সবুজ, শাহিনুল ইসলাম শানু, রণবীর ঘোষ টুটুন, সরোজ কান্তি সেন নান্টু, বদরুউদ্দিন মো. জসিম, মোহাম্মদ সেলিম, মো. বখতিয়ার, ইনজামুল হক জসিম, মোহাম্মদ ছৈয়দ, এহসানুল হক, মাহবুবুর রহমান, আবুল কাশেম, আবদুর রাজ্জাক, যুবলীগ নেতা আবু ছালেহ শাহরিয়ার শাহরু, হাসান উল্লাহ চৌধুরী, ডিএম জমির উদ্দিন, মোজাম্মেল হক লিটন, আমিনুল ইসলাম লিটন, ইয়ার মোহাম্মদ বাবর, নজরুল ইসলাম, শামসেদ হিরু, খোরশেদ আলম মেম্বার, সাইফুল ইসলাম, আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম, মো. রাসেল, আবু তৌহিদ, দিহান চৌধুরী, মাসুদুল ইসলাম, সাবেক পৌর কাউন্সিলর গোফরান রানা, গিয়াস উদ্দিন আজাদ, সাইফুল ইসলাম, জসিম উদ্দিন, রুপক কুমার সেন, সরওয়ার কামাল রাজিব, ছাত্রলীগ নেতা নাজমুল সাকের সিদ্দিকী, অজয় শীল, গিয়াস উদ্দিন সাব্বির, আবদুল হান্নান, আবু তৈয়ব সোহেল, শেখ সোহেল, আওয়ামী লীগ নেতা হোসাইন রানা, কাজী মোরশেদ, মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী সাজেদা বেগম, শ্রমিক লীগ নেতা মোজাম্মেল হক মাজু, টিটু মজুমদার, নেজাম উদ্দিন মেম্বার ও আবদুর রাজ্জাক রানা মেম্বার প্রমুখ।
মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেন পটিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু জায়েদ মো. নাজমুন নুর। তিনি বলেন, গত ১ নভেম্বর রাতে পটিয়া থানায় একটি বিস্ফোরক ও হত্যাচেষ্টা মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলায় সাবেক সংসদ সদস্য মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরীকে প্রধান আসামি এবং সাবেক হুইপ সামশুল হক চৌধুরীসহ ১৮০ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া অজ্ঞাত ৬০ থেকে ৭০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার এজহারে বলা হয়, গত ৪ আগস্ট সকালে স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের দোসর এবং পটিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের উচ্ছৃঙ্খল নেতাকর্মীরা ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করার জন্য বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার ওপর অতর্কিত হামলা করে। এ সময় বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা উচ্ছৃঙ্খল আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বাধা দিতে গেলে মামলার ১ থেকে ১০ নম্বর আসামিদের নির্দেশে ১১ থেকে ১৮০ নম্বর আসামিরা বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের হত্যার উদ্দেশ্যে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র দ্বারা এলোপাতাড়ি গুলি চালায়। ঘটনাস্থলে উপস্থিত আমার ছেলে ভিকটিম হাফেজ মো. শাহেদ (১৫) এর মাথায় টুপি দেখে ছাত্র শিবিরের কর্মী মনে করে ১১ থেকে ১৮০ নম্বর আসামিরাসহ অজ্ঞাতনামা আসামিদের হাতে থাকা লোহার রড, গাছের বাটাম দিয়ে আঘাত করে শরীরের বিভিন্ন স্থানে নীলা ফুলা জখম করে।
উপরে উল্লেখিত আসামিরাসহ অজ্ঞাতনামা আসামিরা তাদের হাতে থাকা অবৈধ অস্ত্র দ্বারা গুলি ছুড়লে ২টি গুলি গিয়ে ভিকটিম আমার ছেলের মাথায় লাগে। উচ্ছৃঙ্খল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী তথা আসামিরা দফায় দফায় ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। আসামিরা নিজেদের মধ্যে বলে যে, প্রয়োজনে পটিয়া থানা এলাকায় যত বিএনপি-জামায়াত ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী ছাত্র আছে তাদের প্রাণে হত্যা করবে। আসামিরা রাস্তার মাঝে টায়ারে আগুন দেয়। রাস্তায় চলাচলরত অটোরিকশা ও টমটম গাড়ি এবং লোকজন দিগ্বিদিক ছোটাছুটি শুরু করে। আসামিরা ‘জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু’সহ বিভিন্ন স্লোগান দেয়।
সংবাদ পেয়ে পটিয়া থানা পুলিশের একটি টিম ঘটনাস্থলের দিকে আসতে দেখে আসামীরা দ্রুত পালিয়ে যায়। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে পটিয়া থানায় একটি মামলা রুজু হয়। মামলার ভিকটিম হিসেবে আমার ছেলের নাম থাকায় উপরোক্ত আসামিরা আমি বিদেশে থাকা সময় মোবাইল ফোনে আমাকে বিভিন্ন হুমকি দিত। আসামিরা পটিয়া থানার মামলা থেকে ভিকটিম হিসেবে আমার ছেলের নাম প্রত্যাহারের জন্য চাপ সৃষ্টি করে। আমি যদি ভিকটিম হিসেবে আমার ছেলের নাম প্রত্যাহার না করি তবে তারা আমাকে বাংলাদেশে আসতে দেবে না। যদিও আসি তবে আমাকে খুন করে লাশ গুম করাসহ আমার ঘর বাড়ি জ্বালিয়ে দেবে। এমনকি আমার ছেলেকে অপহরণ করে হত্যা করার হুমকি দিয়েছে। তাদের হুমকিতে ভয় না পেয়ে আমি গত ১ অক্টোবর বাংলাদেশে আসি।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৩, ২০২৪
এমআই/টিসি