চট্টগ্রাম: বাংলাদেশ ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট কো-অর্ডিনেশন সেলের (বিডব্লিউটিসিসি) বার্থিং মিটিংয়ের উদ্বোধনী দিনে ৯৪টি লাইটার জাহাজ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সিরিয়ালে ছিল ২৮০টি জাহাজ।
সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙর থেকে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ গন্তব্যে আগে ক্লিংকার পরিবহনে টনপ্রতি ভাড়া নেওয়া হতো ৫৭৪ টাকা, এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে ৫৫০ টাকা। জিপসামে ৬০৬ টাকার ভাড়া এখন ৫৬৮ টাকা, বল ক্লের ভাড়া ৫৮৩ টাকার স্থলে ৫৫০ টাকা, টিএসপি বা ড্যাপের ভাড়া ৬৪১ টাকার স্থলে ৫৯৪ টাকা, লবণে ৭৪৯ টাকার ভাড়া ৬৭৫ টাকা, কয়লা ও চিনির (ব্যাগ) ভাড়া ৬৬৬ টাকার স্থলে ৬১২ টাকা, গমের ভাড়া ৬৬২ টাকার স্থলে ৬১০ টাকা, পাথরের (১০ মিমি) ভাড়া ৬২৫ টাকার স্থলে ৫৮১ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
শুধু ঢাকা বা নারায়ণগঞ্জ নয়, নতুন তালিকায় মেঘনা, মুক্তারপুর, কাচপুর, আলীগঞ্জ, নিতাইগঞ্জ, বরিশাল, চাঁদপুর, খুলনা, মোংলা, নগরবাড়ী, টেপাখোলা, বাঘাবাড়ী, আশুগঞ্জ, ভৈরব, দাউদকান্দি, ঘোড়াশাল, পলাশ, রূপসী, সন্দ্বীপ, ভোলা, ঝালকাঠি, পটুয়াখালী, বসিলা, ছাতক, সুনামগঞ্জ, মোল্লারহাট, শরীয়তপুর, মাওয়া, ইটনা, বাবুগঞ্জ, বরগুনা, লালমোহন, পায়রা, আরিচা, মীরসরাই ইকোনমিক জোন, কক্সবাজারসহ চট্টগ্রামের বাঁশখালী, বাহারছড়া, গণ্ডামারা, শিকলবাহা, কালুরঘাট সেতুসহ বিভিন্ন গন্তব্যের ভাড়া কমানো হয়েছে। পণ্যের মধ্যে আরও আছে চিনির কাঁচামাল, চাল, রক সালফার, রক ফসফেট, এইচ আর কয়েল, বিলেট, ডাল, ভুট্টা, সয়াবিন, মোজাইক পাথর, পোলট্রি ফিড, বাঁশ, পাইপ, রড ইত্যাদি। নতুন ভাড়া ৪ নভেম্বর থেকে কার্যকর হয়েছে।
সোমবার (৪ নভেম্বর) দুপুরে আগ্রাবাদের বিডব্লিউটিসিসি মিলনায়তনে বার্থিং মিটিং কার্যক্রম উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন নৌ পরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কমোডর মোহাম্মদ মাকসুদ আলম।
তিনি বলেন, দেশের অন্যান্য পরিবহন সেক্টরের মতোই নৌপরিবহন সেক্টরকে নিরাপদ, সুষ্ঠু ও সুশৃঙ্খল করার জন্যই সিরিয়াল পদ্ধতিতে লাইটারেজ জাহাজগুলো যেন চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্য পরিবহন করতে পারে সে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এতে আমদানি রফতানি ও ব্যবসা বাণিজ্য স্বাভাবিক ও নিরাপদ থাকার মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন গতিশীলতা পাবে।
বিডব্লিউটিটিসি সেলের কনভেনর সাঈদ আহমেদের সভাপতিত্বে সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন নৌপরিবহন অধিদপ্তরের চিফ ইঞ্জিনিয়ার ও শিপ সুপারভাইজার মোহাম্মদ মনজুরুল কবির, সেল কর্মকর্তা হাজি সফিক আহমেদ, ইঞ্জিনিয়ার মেহবুব কবির প্রমুখ। সভায় বাংলাদেশ কার্গো ভেসেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন, কোস্টাল শিপ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ, ইনল্যান্ড ভেসেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব চট্টগ্রাম, লোকাল এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশন, কার্গো এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যসহ ব্যবসায়ী নেতারা উপস্থিত ছিলেন। সভার পক্ষ থেকে ‘নৌ পরিবহন অধিদপ্তর হতে অনুমতিপ্রাপ্ত লাইটার জাহাজের মাধ্যমে বাংলাদেশের সমুদ্র বন্দরসমূহে পণ্য পরিবহন নীতিমালা ২০২৪’ অনুমোদনের জন্য নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন ও নৌ পরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কমডোর মোহাম্মদ মাকসুদ আলমের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানো হয়েছে।
সভায় জানানো হয়, গত ১৫ অক্টোবর প্রণীত নীতিমালায় লাইটার জাহাজের সিরিয়ালভুক্তি, বরাদ্দ ও জাহাজের ভাড়া নির্ধারণের একক দায়িত্ব ন্যস্ত করা হয়েছে বেসরকারি সংগঠন বাংলাদেশ ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট কো-অর্ডিনেশন সেলকে (বিডব্লিউটিসিসি)। নতুন নীতিমালা অনুসারে, নৌ-পরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের নেতৃত্বে ১০ সদস্যের সুপারভাইজরি কমিটি এ সেলের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করবে।
কনভেনর সাঈদ আহমেদ বলেন, বিডব্লিউটিসিসি ব্যবসায়িক সংগঠন, যা হবে রাজনীতিমুক্ত। এর মূল লক্ষ্য এ খাতকে দুর্নীতিমুক্ত করা। স্টেক হোল্ডারদের সমস্যা দ্রুত সমাধান করা। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিমূলক সেল তৈরি। খরচের অপব্যবহার রোধ করা। মাদার ভ্যাসেলের পণ্য দ্রুত খালাসের মাধ্যমে ডেমারেজ থেকে রক্ষা করে বিদেশে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করা।
তিনি বলেন, পৃথিবীর সব ক্ষেত্রে আকাশ, সড়ক, সমুদ্র পথে দফায় দফায় তেলের মূল্য বৃদ্ধি, পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধি, এস্টাবিলিশমেন্ট খরচ বেড়েছে। কিন্তু আমাদের সেক্টরের ভাড়া তো বাড়েনি। নৌ শ্রমিকদের ৬-৮ মাস বেতন-ভাতা দিতে পারিনি। অনেকের ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া বন্ধ হয়েছে, শহরের বাসার যাবতীয় খরচ বহন করতে না পেরে গ্রামে চলে গেছেন। পশু কোরবানি দিতে ব্যর্থ হয়েছেন, জাহাজ কাটা হয়েছে, কাটার অপেক্ষায় আরো রয়েছে। আমরা যদি শোষিত হই, আমাদের কারণে যদি শিল্প বিনষ্ট হয়, আমাদের কারণে যদি ভোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হন, তবে আসুন-বসুন, পর্যালোচনা করুন, স্বচ্ছতা আনতে সাহায্য করুন। জাহাজ শিল্প বাঁচানোর জন্য আমরা সদা প্রস্তুত, আমাদের দরজা উন্মুক্ত। বিগত দিনের আচরণের জন্য, স্বেচ্ছাচারিতার জন্য, আমাদের নবাগতদের প্রতি বিমাতাসুলভ আচরণ না করার জন্য ভুল না বোঝার জন্য অনুরোধ রইল।
জানতে চাইলে আইভোয়াকের মুখপাত্র পারভেজ আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, আপাতত আমরা তিন সংগঠনের মধ্যে কোনো বিরোধ নাই। আমরা আশা করি সমতা এবং ন্যায্যতার ভিত্তিতে এই প্লাটফর্ম পরিচালিত হবে, আগের মতো স্বেচ্ছাচারিতা, দুর্নীতির মাধ্যমে পরিচালিত হবে না। যদি সিস্টেমে পরিচালিত হয় তবে এই প্লাটফর্ম এগিয়ে যাবে বলে আমরা আশাবাদী।
বাংলাদেশ সময়: ২২০০ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৪, ২০২৪
এআর/টিসি