ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

 ‘সরকারি চাকরি মানে জমিদারি, নিশ্চিত জীবন’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৪৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৩, ২০২৪
 ‘সরকারি চাকরি মানে জমিদারি, নিশ্চিত জীবন’ ...

চট্টগ্রাম: ক্লিফটন গ্রুপের পরিচালক ও সিইও এমডিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী বলেছেন, সরকারি চাকরি মানে জমিদারি। কাজে প্রচুর ফাঁকি দেওয়া যায় এবং নিশ্চিত জীবন।

বেসরকারি চাকরিতে ৮ ঘণ্টা জবাবদিহির মধ্যে থাকতে হয় কর্তৃপক্ষের কাছে- আপনি কী করছেন, কোথায় যাচ্ছেন? তাই সরকারি চাকরি কমপোর্টেবল জোন। তরুণরা সরকারি চাকরি পেলে প্রশান্তির জায়গায় চলে যায়।
৬০ বছর হলে অবসরজীবন। সেই জন্য সরকারি চাকরি লোভনীয়। বেসরকারি চাকরি গিভ অ্যান্ড টেক পলিসি। আপনি পেছন দিকে তাকিয়ে অফিসে আসবেন, বসবেন, চা খাবেন, পেপার পড়বেন এ প্রক্রিয়া নেই। এখানে সব কিছু হিসাব হচ্ছে আপনি কী করছেন।

বুধবার (১৩ নভেম্বর) দুপুরে থিয়েটার ইনস্টিটিউট চট্টগ্রাম মিলনায়তনে ‘যুব কর্মসংস্থান: প্রত্যাশা ও সুপারিশ’ শীর্ষক নীতি আলোচনায় এসব কথা বলেন তিনি। ইউএসএআইডির অর্থায়নে ও ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের আয়োজনে ‘আমিও জিততে চাই’ ক্যাম্পেইনের আওতায় এ আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।

এমডিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী বলেন, আমার দেখা বাংলাদেশি সফল উদ্যোক্তারা আগে কোথাও না কোথাও চাকরি করেছেন, অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছেন। এ টু জেড বুঝে জেনে তারপর উদ্যোক্তা হয়েছেন। চাকরির সঞ্চয়ের পাশাপাশি ব্যাংক টাকা দিচ্ছে। ব্যাংক চায় আপনি যে ব্যবসা করবেন তার প্রজেক্ট দেন। কীভাবে ব্যাংকের টাকা ফেরত দেবেন, আপনি লাভ করবেন। তারপর ব্যাংক টাকা দেয়। আরও অনেক প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগ করে।  

আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা সনাতনী। ডিগ্রি পাস করে তাড়াতাড়ি চাকরিবাজারে চলে যায়, কিন্তু তার কোনো অভিজ্ঞতা নেই। বাজার যেহেতু ছোট তাই অভিজ্ঞতাকে প্রাধান্য দেবে। সরকারিভাবে যদি শিক্ষার্থীদের ট্রেনিং দেওয়া হতো তাহলে চাকরির জন্য অপেক্ষা করতে হতো না। উদ্যোক্তা হতে হলে কাজ জানলে ব্যাংক ফান্ড দেবে। শিক্ষার্থীদের দিনে ১৮ ঘণ্টা পরিশ্রম করতে হবে। পাঠ্যবইয়ের বাইরে যে কাজ পাও শিখে ফেলতে হবে। জীবনে একদিন কাজে আসবে।  

তিনি বলেন, আমাদের ইকোনমি ভাইব্রেন্ট হলে কর্মসংস্থানের সুযোগ প্রসারিত হয়। বর্তমান বিশ্বে জনশক্তি স্বর্ণখনির চেয়ে বড়। আমাদের মানবসম্পদকে যদি প্রপারলি তৈরি করে নিতে পারি তাহলে এ মানবসম্পদ তা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়তে পারে। বাংলাদেশ উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা আছে।  বিগত ১৫ বছর যে সরকার আমাদের চালিয়েছেন তারা উন্নয়নের কথা বলে পাবলিক সেক্টরে উন্নয়ন করার জন্য বেশি মনোযোগ দিয়েছেন।

পাবলিক ও প্রাইভেট সেক্টর দুটো পাশাপাশি চলতে হয়। ব্যালেন্স যদি না হয় তাহলে কোনোদিন কর্মসংস্থান সমস্যা সমাধান হবে না। পাবলিক সেক্টরে যদি লোকাল ব্যাংক থেকে টাকা নেওয়া হয়, বিভিন্ন বন্ড দিয়ে টাকা নেওয়া হয় মার্কেটে যদি টাকা না থাকে যারা বিনিয়োগ করবে তারা কোথায় টাকা পাবে? কোভিড, ইউক্রেন যুদ্ধ, ব্যাংকে লুটপাট দুর্নীতির কারণে ব্যবসায়ীদের তারল্য সংকট প্রকট। তাই প্রাইভেট সেক্টরে ডেভেলপমেন্ট হয়নি। তাই গত ১৫ বছরে কর্মসংস্থান তেমনভাবে ডেভেলপ করেনি। কিন্তু আমি আশাবাদী। আমাদের তরুণরা অন্য দেশের তরুণদের চেয়ে মেধাবী। একটু পরিশ্রম করলে তারা সফল হবেন।     

ছাত্ররা ফ্রেশ চাকরি বাজারে। শিল্পপতির ছেলে মেয়ে বাইরে ৩-৪ বছর চাকরি করলে পরিচালক হিসেবে সফল হয়। আমি তরুণদের বলবো হতাশ হবেন না। পরিশ্রম করতে হবে। সোনার হরিণ আপনার হাতে। অনলাইনে অনেক কোর্স করতে পারেন। সরকারকে পলিসি নিতে হবে, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ইনটেনসিভের বিনিময়ে ইন্টার্নশিপের ব্যবস্থা করতে হবে।  

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) চট্টগ্রাম প্রধান অ্যালেক্সসিউস চিছাম বলেন, বাংলাদেশে প্রতিবছর ২২ লাখ জনশক্তি শ্রমবাজারে যুক্ত হচ্ছে। অন্য দেশের তুলনায় বেকারত্বের হার বেশি। মাস্টার্স ডিগ্রি নিয়েও দুই বছর সংগ্রাম করতে হচ্ছে চাকরিবাজারে ঢোকার জন্য। চাকরিবাজারের চাহিদা শিক্ষা ব্যবস্থা পূরণ করতে পারছে কিনা এটা চ্যালেঞ্জ। তাই যুব সমাজের অসন্তুষ্টি, চাপা ক্ষোভ আছে, যার প্রতিফলন গত আগস্ট মাসে দেখেছি। গ্রাম ও শহরের পড়াশোনা, দেশের ও বিদেশের ডিগ্রির মধ্যে বৈষম্য হচ্ছে চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে।  

তিনি বলেন, তরুণদের ঋণের জন্য গ্যারান্টার, জামানত, ট্রেড লাইসেন্স, ছাড়পত্র যা লাগে সব ওয়ান স্টপ সার্ভিসের আওতায় আনতে হবে।  

স্বাগত বক্তব্যে ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের ডেপুটি চিফ অব পার্টি আমিনুল এহসান বলেন, ক্ষমতায় পরিবর্তন আসে কিন্তু সাধারণ মানুষের সমস্যা থেকে যায়। আমিও জিততে চাই একটি ক্যাম্পেইন। আপনার সমস্যা, দাবি আমাদের জানাতে পারেন। আমরা সরকারকে জানাব।  

আরাফাত আলী সিদ্দিক বলেন, নির্বাচন ও ক্ষমতার পালাবদলে জনপ্রতিনিধিরা দায়িত্ব পান। আমরা তাদের জানাতে চাই জনগণ কী চায়। আমিও জিততে চাই ডিজিটাল দেয়ালে সমস্যা তুলে ধরতে পারেন সবাই। আমরা বিশ্বাস করি-  বললেই বদলায়।  

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেটিং সোসাইটির সাবেক সভাপতি ফারহানা যুথী বলেন, তরুণরা উদ্যোক্তা হওয়ার পথে অনেক বাধা। এ সমাজ ছাত্রকে অনার্স লাইফ পর্যন্ত উদ্যোক্তা হতে ইনটেনসিভ দেয় না। তাকে বোঝানো হয় স্থায়ী চাকরি প্রয়োজন। বেসরকারি চাকরি আজ আছে তো কাল নেই। ব্যবসায় লাভ লোকসানের রিস্ক আছে, তাই পরিবার ঝুঁকি নিতে চায় না। বেসরকারি চাকরিতে অভিজ্ঞতা চায়। শিক্ষা কারিকুলামে চাকরির দক্ষতা বাড়ানোর জন্য ছয় মাসের প্রশিক্ষণ দিতে পারে। স্কুল কলেজ ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে ক্যারিয়ার ক্লাব খোলা যায়।  

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের ডেপুটি চিফ অব পার্টি আমিনুল এহসান। তিনি ‘আমিও জিততে চাই’ ক্যাম্পেইন সম্পর্কে বলেন, আমরা নানা সমস্যার মধ্য দিয়ে চলছি। দীর্ঘদিন থেকে সমাজে চলতে থাকা এসব সমস্যার কথা, নাগরিকদের দাবি ও অধিকারের কথা তুলে ধরাই এই ক্যাম্পেইনের উদ্দেশ্য।  

ইউএসএআইডির স্ট্রেনদেনিং পলিটিক্যাল ল্যান্ডস্কেপ (এসপিএল) প্রকল্পের আওতায় ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল ‘আমিও জিততে চাই’ ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে সারাদেশে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও জেলায় আলোচনা, নাট্য প্রদর্শনী, বিতর্ক প্রতিযোগিতাসহ নানা কর্মসূচি পরিচালনা করছে। ক্যাম্পেইনটির আওতায় www.amiojittechai.com ওয়েবসাইটের মাধ্যমে নেওয়া হচ্ছে নাগরিকদের দাবি ও মতামত।

অনুষ্ঠানে ক্যাম্পেইন সম্পর্কে আলোচনা করেন ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের সিনিয়র রিজিওনাল ম্যানেজার সদরুল আমিন। বক্তব্য দেন বিএনসিসি কর্ণফুলী রেজিমেন্টের সাবেক অ্যাডজুটেন্ট আবদুল্লাহ আল মামুন ও বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির ইয়ুথ চিফ এএনএম তামজীদ।  

আলোচনা ছাড়াও অনুষ্ঠানে নাগরিক সমস্যা নিয়ে আকর্ষণীয় নাটক, কুইজ ও ভিডিও মেসেজ প্রতিযোগিতা এবং ক্যাম্পেইনের রিল প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। প্রদর্শিত নাটকের ওপর কুইজে জিতেছেন প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের অয়ন, তাহসিন, শাহাদাত কবির, কাজী মো. ফারদিন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারহানা জ্যোতি, সরকারি সিটি কলেজের মো. হাবিব উল্লাহ, সুমি আকতার, ভলান্টিয়ার বাংলাদেশের সাইফুল ইসলাম প্রমুখ।  

বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৩, ২০২৪ 
এআর/পিডি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।