চট্টগ্রাম: ‘দেশে খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিতে চাই কম জমিতে বেশি শস্য উৎপাদন। এর জন্য মাটির স্বাস্থ্য পরীক্ষার বিকল্প নেই।
ভ্রাম্যমাণ মৃত্তিকা পরীক্ষাগার ‘কর্ণফুলী’র সাহায্যে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি, হাটহাজারী ও পটিয়া উপজেলার দেড়শ’ চাষির মাটি পরীক্ষা শেষে বাংলানিউজকে এসব কথা বলেন ড. এনএম জাহাঙ্গীর। তিনি মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের চট্টগ্রাম বিভাগীয় গবেষণাগারের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা।
জনগণের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে এবং মাটি পরীক্ষা করে জমিতে সুষম মাত্রায় সার প্রয়োগে চাষিদের উদ্বুদ্ধ করতে ১৯৯৬ সাল থেকে ভ্রাম্যমাণ মৃত্তিকা পরীক্ষাগার চালু হয়েছে। বর্তমানে দেশব্যাপী ১০টি ভ্রাম্যমাণ মৃত্তিকা পরীক্ষাগার আছে। এগুলোর আলাদা নামও আছে- যমুনা, তিতাস, রূপসা, তিস্তা, মধুমতি, ব্রহ্মপুত্র, কর্ণফুলী, সুরমা, করতোয়া ও কীর্তনখোলা। প্রতিবছর রবি ও খরিফ মৌসুমে দুইবার মাটি পরীক্ষা করা হয়। মাটি পরীক্ষা ও ফসলের সুষম মাত্রার সার সুপারিশসহ চট্টগ্রামের তিন উপজেলায় দেড়শ’ কার্ড দিয়েছি আমরা।
শুধু চট্টগ্রামের তিন উপজেলা নয়, ‘কর্ণফুলী’ নামের ভ্রাম্যমাণ পরীক্ষাগারটি চকরিয়া, বান্দরবান সদর ও কক্সবাজার সদরের ১৫০ চাষির মাটি পরীক্ষা করেছে। রবি মৌসুমে মোট ৬টি উপজেলায় মাটি পরীক্ষা করবে এটি। একটি বাসে তৈরি পরীক্ষাগারটির টিমে রয়েছেন প্রথম গ্রেডের তিনজন সরকারি কর্মকর্তা, ল্যাব অ্যাটেনডেন্ট, কুক, চালকসহ প্রয়োজনীয় জনবল। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার মাধ্যমে ৫০ জন কৃষক নির্বাচিত করা হয়। তাদের মাটির নমুনা সংগ্রহের প্রশিক্ষণ ও নিদের্শনা দেওয়া হয়। তারপর ভ্রাম্যমাণ পরীক্ষাগারে এসব নমুনার নাইট্রোজেন, পটাশিয়াম, জিংক, ফসফরাস, গন্ধক, অম্লত্ব (পিএইচ), লবণাক্ততা ইত্যাদি প্রয়োজনীয় উপাদান পরীক্ষা করা হয়।
এসব পরীক্ষার ফলাফল বিবেচনা করে মাটিতে বিদ্যমান ও ঘাটতি পুষ্টি উপাদানের পরিমাণ ও প্রয়োজনীয়তা জানা যায়। চাষি যে ফসল লাগাবেন তার জন্য কোন সার কী পরিমাণ দিতে হবে তা নির্ধারণ করা হয়। এতে সারের অপচয় কম হয় মাটির পুষ্টি উপাদান সঠিক থাকে। এককথায় মাটির স্বাস্থ্য ঠিক থাকে। উর্বরা শক্তি বেড়ে যাওয়ার ফলে উৎপাদন খরচ কমে যায়, ফসলের উৎপাদন বাড়ে ১৫-২০ শতাংশ। মাটির স্বাস্থ্য ঠিক থাকলে গাছের স্বাস্থ্য ভালো থাকে, রোগবালাই ও পোকামাকড়ের আক্রমণ কম হয়।
ড. এনএম জাহাঙ্গীর বলেন, নদীর ভাঙন, উপকূলীয় এলাকায় লবণাক্ততা বৃদ্ধি, ঘরবাড়ি ও শিল্পকারখানা তৈরিসহ নানা কারণে দেশে আবাদি জমির পরিমাণ কমছে। বিশাল জনগোষ্ঠীর খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে সচেষ্ট সরকার। তারই অংশ হিসেবে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীনে নানামুখী নতুন ও আধুনিক উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। কম জমিতে বেশি ফসল উৎপাদনের জন্য মাটির স্বাস্থ্য পরীক্ষার বিকল্প নেই। চাষিদের উদ্বুদ্ধ করতেই বিভিন্ন উপজেলা পর্যায়ে ভ্রাম্যমাণ মৃত্তিকা পরীক্ষাগারের মাধ্যমে মাটির নমুনা পরীক্ষা করে সার প্রয়োগের পরিমাণ নির্ধারণ করে দেওয়া হচ্ছে।
তিনি জানান, চট্টগ্রাম বিভাগে দুইটি ভ্রাম্যমাণ মৃত্তিকা পরীক্ষাগার আছে। একটি কর্ণফুলী অন্যটি তিতাস। তিতাস কাজ করছে কুমিল্লা ও নোয়াখালী অঞ্চলে। আমাদের সফলতা হচ্ছে চাষিদের মধ্যে মাটির স্বাস্থ্য সম্পর্কে কৌতূহল ও সচেতনতা তৈরি করতে পারছি। এ লক্ষ্যে প্রতিবছর ৫ ডিসেম্বর বিশ্ব মৃত্তিকা দিবস উদযাপন করা হয়। এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় ‘মাটির যত্ন পরিমাপ, পর্যবেক্ষণ, ব্যবস্থাপনা’। যাতে টেকসই মৃত্তিকা ব্যবস্থাপনার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
স্বাস্থ্যকর মাটি জীববৈচিত্র্য বজায় রাখতে, ক্ষয় ও দূষণ কমাতে, জল পরিস্রাবণ উন্নত করতে এবং স্থিতিস্থাপক ও টেকসই খাদ্য ব্যবস্থা গড়ে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কার্বন সিকোয়েট্রেশনের মাধ্যমে জলবায়ুর পরিবর্তন রোধেও উল্লেখযোগ্য অবদান রাখে।
বাংলাদেশ সময়: ০৯০৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৫, ২০২৪
এআর/টিসি