চট্টগ্রাম: দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকলেও মাঠের রাজনীতিতে ব্যস্ত ছিল বিএনপি। এখন ব্যস্ত নিজেদের ঘর গোছাতে।
দলকে শক্তিশালী করতে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কাজ শুরু করেছেন।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সম্ভাব্য কমিটিতে পদ পেতে তদবির করছেন ৩০ জন নেতা। যাদের জেলার নেতৃত্বে আসার যোগ্যতা আছে তারাও করছেন, আবার যাদের উপজেলার নেতৃত্ব দেওয়ার যোগ্যতা নেই তারাও করছেন জেলার শীর্ষ নেতা হওয়ার তদবির।
গত ১ সেপ্টেম্বর রাতে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত করা হয়।
দলটির তৃণমূলের কর্মীরা বলছেন, ‘এক নেতা এক পদ’ নীতি থেকে সরে এসে চার বছর ১১ মাস আগে নগর বিএনপির তৎকালীন চট্টগ্রাম মহানগরের সহ-সভাপতি আবু সুফিয়ানকে আহ্বায়ক করা হয় দক্ষিণ জেলায়। দীর্ঘদিন নগরে রাজনীতি করেন তিনি। এ অবস্থায় ভবিষ্যৎ নেতৃত্বে দক্ষিণে রাজনীতি করেছেন এমন কাউকে চান তারা। তাদের প্রত্যাশা, দলের বিগত আন্দোলন-সংগ্রামে যারা সক্রিয় ছিলেন তারাই নেতৃত্বে আসুক।
সভাপতি বা আহ্বায়ক পদে আলোচনায় আছেন বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক, সাবেক সংসদ সদস্য গাজী মোহাম্মদ শাহজাহান জুয়েল, সাবেক সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট ইফতেখার হোসেন চৌধুরী মহসিন, জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক শেখ মো. মহিউদ্দিন, সাবেক সহ-সভাপতি ইদ্রীস মিয়া, সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক আলী আব্বাস ও সাবেক সংসদ সদস্য সরওয়ার জামাল নিজাম।
সাধারণ সম্পাদক বা সদস্য সচিব পদে আলোচনায় আছেন বাঁশখালী পৌরসভার সাবেক মেয়র ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক কামরুল ইসলাম হোছাইনী, বিলুপ্ত কমিটির সদস্য ও সাতকানিয়া বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মজিবুর রহমান চেয়ারম্যান, জেলা বিএনপির সাবেক দপ্তর সম্পাদক ও লোহাগাড়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক নাজমুল মোস্তফা আমিন, জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক লেয়াকত আলী, সাবেক যুগ্ম সম্পাদক এম মনজুর উদ্দীন চৌধুরী, জেলার বিলুপ্ত কমিটির সদস্য ও আনোয়ারা উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মোস্তাফিজুর রহমান, দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি প্রয়াত জাফরুল ইসলাম চৌধুরীর ছেলে বিএনপি নেতা মিশকাতুল ইসলাম চৌধুরী পাপ্পা, আনোয়ারা উপজেলা বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব লায়ন মো. হেলাল উদ্দিন ও পটিয়া উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব মো. খোরশেদ আলম।
বিএনপির স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, সাধারণ সম্পাদক পদ প্রত্যাশীদের মধ্যে একজন সময়ের আলোচিত এস আলম গ্রুপের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। এছাড়া সাবেক সংসদ সদস্য ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের এক নেতার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার অভিযোগ আছে এক সাধারণ সম্পাদক প্রত্যাশীর বিরুদ্ধে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় সূত্র জানিয়েছে, গত জুন মাসে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত করার পর গুঞ্জন ওঠে দক্ষিণ জেলা বিএনপির কমিটিও বিলুপ্ত করা হবে। ওই সময় নতুন করে কমিটি করলে এনামুল হক এনামকে সাধারণ সম্পাদক বা সদস্য সচিব করা হবে বলে জোর প্রচারণা ছিল। দলের কেন্দ্রীয় নেতারাও এমন ইঙ্গিত দেন। পরবর্তীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শুরু হলে কমিটি বিলুপ্ত ও গঠন প্রক্রিয়া বন্ধ রাখে কেন্দ্র। কিন্তু এস আলমের গাড়ি সরিয়ে নেওয়ার ঘটনায় প্রাথমিক সদস্য পদও হারান তিনি। এর মধ্য দিয়ে সম্ভাব্য কমিটির পদ পাওয়ার সম্ভবনাও থাকলো না।
বিলুপ্ত কমিটির সদস্য মজিবুর রহমান চেয়ারম্যান বলেন, যারা আন্দোলন-সংগ্রামে ছিলেন, মাঠে-ময়দানে সক্রিয় আছেন, যারা আন্দোলন করতে গিয়ে হামলা-মামলার শিকার হয়েছেন তাদের মূল্যায়ন করা হোক। বিগত সময়ে যারা মামলার শিকার হয়নি তাদের বিএনপি করারও অধিকার নেই। কারণ আন্দোলনে থাকলে মামলার শিকার হতেন তারা। আমি নিজেও ৩৪ মামলার আসামি। এমনকি ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালেও মামলা হয়েছে। আশা করছি- দল মূল্যায়ন করবে।
২০০৯ সালে সম্মেলনের মাধ্যমে গঠন করা হয়েছিল চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির কমিটি। ওইসময় জাফরুল ইসলাম চৌধুরীকে সভাপতি ও শেখ মোহাম্মদ মহিউদ্দীনকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছিল। যার অনুমোদন দিয়েছিলেন দলটির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া। পরবর্তীতে ২০১১ সালের এপ্রিলে আবারো দল পুর্নগঠন করা হয়। সেবার জাফরুল ইসলাম চৌধুরীকে সভাপতি ও গাজী শাজাহান জুয়েলকে করা হয় সাধারণ সম্পাদক, শেখ মোহাম্মদ মহিউদ্দীনকে করা হয় সহ-সভাপতি । তিন বছরের জন্য গঠিত এ কমিটি ৮ বছর পাঁচ মাস দায়িত্ব পালন করার পর ২০১৯ সালের অক্টোবরে ভেঙে দেওয়া হয়।
একই বছরের ২ অক্টোবর মহানগর বিএনপির সিনিয়র তৎকালীন সিনিয়র সহ-সভাপতি আবু সুফিয়ানকে আহ্বায়ক এবং বোয়ালখালী উপজেলা বিএনপির তৎকালীন সভাপতি মোস্তাক আহমেদ খানকে সদস্য সচিব করে দক্ষিণ জেলা বিএনপির কমিটি গঠন করা হয়। এরপর ২০২৩ সালের ৭ মে কমিটির ৪ নম্বর সদস্য এনামুল হক এনামকে কমিটির ১ম যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়। আহ্বায়ক কমিটি গঠনের সময় বলা হয়, গঠিত কমিটির মেয়াদ হবে ৩ মাস। তারা এই তিন মাসের মধ্যে দক্ষিণ জেলার আওতাভুক্ত প্রতিটি উপজেলা, থানা ও পৌরসভার কমিটি গঠন শেষে দক্ষিণ জেলার কাউন্সিল আয়োজন করবেন। কিন্ত চার বছর ১১ মাস দায়িত্ব পালন করেও কাউন্সিল করতে পারেননি।
দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক কামরুল ইসলাম হোছাইনী বাংলানিউজকে বলেন, স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী আন্দোলন, ১/১১ এর সময় থেকে ফ্যাসিবাদ এবং নব্য স্বৈরাচার শেখ হাসিনা বিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে ধারাবাহিকভাবে ছাত্রনেতা থেকে বিএনপিতে এসেছি। রাজনৈতিক এবং সামাজিকভাবে যারা বিতর্কিত নন, স্বচ্ছ ইমেজের অধিকারী যারা, তাদেরকে নিয়ে দক্ষিণ জেলা কমিটি গঠন করা হোক, এটা আমার প্রত্যাশা।
বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক (চট্টগ্রাম বিভাগ) ভিপি হারুনুর রশিদ বলেন, কমিটি না থাকার কারণে উপজেলাগুলো নিয়ন্ত্রণের বাইরে। গ্রুপ উপগ্রুপ আগেও ছিল, এখন কমিটি না থাকার কারণে আরও বেড়েছে। গত ১৭ বছরে আমরা অনেক সংগ্রাম করেছি। নেতা-কর্মীরা ত্যাগ স্বীকার করে রাজনীতি করেছে। এখন সেই ত্যাগ যেন গুটিকয়েক ব্যক্তির কারণে বৃথা না যায় এবং দল যেন প্রশ্নের সম্মুখীন না হয়, সেদিকে দৃষ্টি রাখতে হবে। দল ও দেশের স্বার্থে গ্রুপ-উপগ্রুপ কেন্দ্রিক রাজনীতি না করে ঐক্যবদ্ধ রাজনীতির মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে সবাইকে কাজ করতে হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কেন্দ্রীয় বিএনপির এক নেতা বাংলানিউজকে বলেন, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির কমিটির গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আহ্বায়ক কমিটি করা হবে। এই কমিটির সদস্য ৩১ থেকে ৫১ জনের মধ্যে হতে পারে।
বাংলাদেশ সময়: ১০৩০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৮, ২০২৪
এমআই/টিসি