চট্টগ্রাম: আইন যুগোপযোগী করে নিয়োগ, বদলি, শাস্তির বিষয়ে কমিশন গঠন, ব্যাপক সংস্কারের পাশাপাশি বাংলাদেশ পুলিশের ওপর জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত সংলাপের বক্তারা। একটি আধুনিক ও জনমুখী পুলিশি কাঠামো তৈরির জন্য সাধারণ মানুষের সাথে পুলিশের সুসম্পর্ক স্থাপন, মানবাধিকার রক্ষা, তথ্যপ্রযুক্তিতে সমৃদ্ধ করা এবং পুলিশ বাহিনীতে নারীদের আরও বেশি অংশগ্রহণের বিষয়ে প্রাধান্য দেন তারা।
তারা বলেন, পুলিশকে অপরাজনীতিমুক্ত রেখে নাগরিক সেবা প্রদানকারী সংস্থা হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। পুলিশ হবে এমন একটি প্রতিষ্ঠান যা সামগ্রিকভাবে নাগরিকদের সেবা নিশ্চিত করবে।
বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) চট্টগ্রামের একটি হোটেলে ‘পুলিশ সংস্কার বিষয়ে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর প্রত্যাশা ও করণীয়’ শীর্ষক সংলাপে তারা এসব সুপারিশ তুলে ধরেন।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক আমীর মোহাম্মদ নাসরুল্লাহর সঞ্চালনায় সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন ইপসার পরিচালক (অর্থ) পলাশ চৌধুরী। অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি নেসার উদ্দিন আহমেদ এবং চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) শাকিলা সোলতানা।
স্থায়িত্বশীল উন্নয়নের জন্য সংগঠন ইয়ং পাওয়ার ইন সোশ্যাল অ্যাকশান (ইপসা) আয়োজিত এ সংলাপে কারিগরি সহায়তা দিয়েছে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি)।
আলোচনা করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক প্রফেসর এবিএম আবু নোমান, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. শাহ জালাল মিশুক, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, চট্টগ্রামের উপ- সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ আবদুল্লাহ, শ্রমিক নেতা তপন দত্ত, প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ড. সাদিকা সুলতানা চৌধুরী, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক রিদুয়ান সিদ্দিকী, নীলা আফরোজ, আরিফ মঈনুদ্দীন, তাওহীদ আলিফ, সিটিজেন ফোরামের সহ-সভাপতি মো. আবু সাঈদ সেলিম, ইলমার প্রধান নির্বাহী জেসমিন সুলতানা পারু, অ্যাডভোকেট মিলি চৌধুরী, চট্টগ্রাম বৌদ্ধ বিহারের ভিক্ষু ড. সুমন প্রিয়, রাষ্ট্রচিন্তার প্রতিনিধি সিয়াম আল জাকি, স্বপ্নিল ব্রাইট ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ আলী শিকদার, ব্র্যাকের বিভাগীয় ম্যানেজার নজরুল ইসলাম, ব্রাইট বাংলাদেশ ফোরামের প্রধান নির্বাহী উৎপল বড়ুয়া প্রমুখ।
একটি আধুনিক, জনমুখী এবং মানবাধিকার-সংবেদনশীল পুলিশ বাহিনী গড়ে তোলার ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করা হয় সংলাপে। বক্তারা পুলিশি ব্যবস্থার সংস্কারকে একটি সম্মিলিত প্রয়াস হিসেবে উল্লেখ করেন, যেখানে সাধারণ মানুষের মতামত ও অংশগ্রহণের গুরুত্ব অপরিসীম। এই সংলাপ যেন সেই জনমতেরই প্রতিচ্ছবি—এমনটাই আশা প্রকাশ করেন বক্তারা।
তিনটি প্রধান বিষয়কে কেন্দ্র করে হয় সংলাপ। কীভাবে জনগণের জন্য নিরাপত্তা পরিষেবার মান আরও উন্নত করা যায় এবং পুলিশের সাথে তাদের পারস্পরিক যোগাযোগ আরও সহজ ও বন্ধুত্বপূর্ণ করা যায়, সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। অংশগ্রহণকারীরা তাদের নিজ নিজ অভিজ্ঞতা ও প্রত্যাশার কথা তুলে ধরেন। পুলিশের কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনার ওপর বিশেষ জোর দেওয়া হয়। এ জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কারগুলো নিয়েও বিশদ আলোচনা হয়, যেখানে বিভিন্ন প্রকার আইনি এবং পদ্ধতিগত পরিবর্তনের প্রস্তাব আসে।
এ ছাড়া কীভাবে নারী, পুরুষ, শিশু এবং সমাজের প্রান্তিক মানুষের জন্য পুলিশের সেবা আরও সহজলভ্য এবং সমতাপূর্ণ করা যায় তা তুলে ধরেন বক্তারা। সমাজের সব স্তরের মানুষের প্রয়োজন ও অনুভূতির প্রতি সংবেদনশীল একটি পুলিশি ব্যবস্থা গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তা উঠে আসে।
সঞ্চালক জানান এ আলোচনার মাধ্যমে উঠে আসা সব মতামত ও সুপারিশ একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন আকারে পুলিশ সংস্কার কমিশনের কাছে জমা দেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭১০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৮, ২০২৪
এআর/পিডি/টিসি