চট্টগ্রাম: রেমিটেন্সকে দেশের অর্থনীতির অন্যতম মেরুদণ্ড উল্লেখ করে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. কামরুজ্জামান বলেছেন, প্রবাসী কর্তৃক প্রেরিত রেমিটেন্স দেশে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের একমাত্র খাত। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স দিন দিন দেশের অর্থনীতিকে অধিকতর শক্তিশালী করছে।
বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) চট্টগ্রাম সার্কিট হাউস সম্মেলন কক্ষে জেলা প্রশাসন এবং জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি কার্যালয় আয়োজিত আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস ও জাতীয় প্রবাসী দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মহেন্দ্র চাকমার সভাপতিত্বে এবং শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের প্রবাসী কল্যাণ ডেক্সের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. জহিরুল ইসলামের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম, বাংলাদেশ কোরিয়া টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার (বিকেটিটিসি) অধ্যক্ষ প্রকৌশলী পলাশ কুমার বড়ুয়া, মহিলা টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার (টিটিসি) অধ্যক্ষ প্রকৌশলী আশরিফা তানজীম।
প্রধান অতিথি বলেন, প্রবাসীরা আমাদের অমূল্য সম্পদ। কোনো এলাকায় একজন প্রবাসী থাকলে সে এলাকার যুবকদের বিদেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেন। এতে দেশের বেকার সমস্যা যেমন সমাধান হয় তেমনি অর্থনীতি হয় আরো শক্তিশালী। প্রবাসীরা যেরূপ তাদের কষ্টার্জিত রেমিটেন্স দেশে পাঠিয়ে এই দেশকে অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন, সেরূপ সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন না। তাই প্রবাসীদের বাড়তি সুযোগ-সুবিধা দেওয়া উচিত। দেশে ও বিদেশে কোনো প্রবাসী যাতে কোনোরকম হয়রানির শিকার না হন, তাদের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায় সে ব্যাপারে আরো সতর্ক থাকতে হবে।
মহেন্দ্র চাকমা বলেন, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মাধ্যমে বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে ১৬৮টি দেশে বৈধভাবে কর্মী পাঠানো হচ্ছে। প্রায় ১৭৬টি দেশে ১ কোটি ৩০ লাখের বেশি বাংলাদেশি অভিবাসী কর্মী আছেন এবং তাদের প্রেরিত রেমিটেন্স আমাদের জিডিপির প্রায় ১২ শতাংশ।
তিনি বলেন, চট্টগ্রাম জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিস থেকে গত জানুয়ারি থেকে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৬১ হাজার ২৪৯ জন অভিবাসন প্রত্যাশী কর্মীর নাম কেন্দ্রীয় ডাটা ব্যাংকে নিবন্ধন এবং ফিঙ্গার প্রিন্ট নেওয়া হয়েছে। এছাড়াও চট্টগ্রাম জেলায় বিকেটিটিসি, মহিলা টিটিসি, টিটিসি রাউজান ও সন্দ্বীপ অভিবাস প্রত্যাশী কর্মীদের প্রাক-বহির্গমন প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। আগ্রাবাদ জনশক্তি ও কর্মসংস্থান অফিসে দিনব্যাপী জব ফেয়ারের আয়োজন করা হয়েছে।
গত জানুয়ারি থেকে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত ১১ লাখ ১৯ হাজার ৯৫১ জন বাংলাদেশির বৈদেশিক কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে বিএমইটি তথা প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। বাংলাদেশের ৬৪ জেলার মধ্যে চট্টগ্রাম জেলার অবস্থান দ্বিতীয় এবং চট্টগ্রাম জেলার প্রায় ১৫ লাখ অভিবাসী কর্মী বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কর্মরত রয়েছে। জানুয়ারি থেকে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত চট্টগ্রামের ৩৭ হাজার ৭৮৫ জন পুরুষ ও ৩৫৭ জন নারীসহ মোট ৩৮ হাজার ১৪২ জন কর্মীর বিদেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। বিদেশে কর্মরত অবস্থায় মৃত্যুবরণকারী ৪০১ জন প্রবাসী কর্মীর মরদেহ বিমানবন্দরে গ্রহণ ও মৃতের ওয়ারিশদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। মৃত কর্মীর মরদেহ পরিবহন ও দাফন বাবদ ৩৫ হাজার টাকা করে মোট ১ কোটি ৪০ লাখ ৩৫ হাজার টাকার টাকার চেক ওয়ারিশদের দেওয়া হয়। একই সাথে রেমিটেন্স প্রেরণের ক্ষেত্রেও চট্টগ্রাম জেলা দ্বিতীয় অবস্থানে আছে। চলতি বছরের গত ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত এ জেলায় প্রেরিত রেমিটেন্সের পরিমাণ সর্বমোট ৯১২.৭ মিলিয়ন ইউএস ডলার।
আলোচনা সভার আগে সার্কিট হাউস চত্বর থেকে বর্ণাঢ্য র্যালি বের করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৮২৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৮, ২০২৪
এআর/পিডি/টিসি