চট্টগ্রাম: দুবাই-করাচি-চট্টগ্রাম রুটে সরাসরি কনটেইনার জাহাজ চালু হওয়ায় মেরিটাইমে গুরুত্বপূর্ণ দুই বিবেচ্য বিষয় ‘ভাড়া’ ও ‘সময়’ সাশ্রয় হচ্ছে। এতে আগ্রহী হচ্ছেন এ রুটের আমদানি ও রপ্তানিকারকেরা।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশন, চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসসহ সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে এসব বিষয় জানা গেছে।
সূত্র জানায়, পানামা পতাকাবাহী এমভি ইউয়ান জিয়াং ফা ঝং (YUAN XIANG FA ZHAN) নামের কনটেইনার জাহাজটি দ্বিতীয় ট্রিপে শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে পৌঁছতে পারে। এবার জাহাজটিতে চট্টগ্রাম বন্দরে নামানো হবে এমন ৭৮০ বক্সে ৮২৫ টিইইউ’স (২০ ফুট দীর্ঘ হিসেবে) পণ্য আসছে। এর মধ্যে বিভিন্ন শিল্পের কাঁচামাল, চিনি, সোডা অ্যাশ, পেঁয়াজসহ বিভিন্ন পণ্য থাকতে পারে। জাহাজটি দুই দিন জেটিতে কনটেইনার লোড আনলোড শেষে চট্টগ্রাম বন্দর ত্যাগ করার শিডিউল রয়েছে। যাওয়ার পথে চট্টগ্রাম থেকে ইন্দোনেশিয়ার বন্দরের জন্য ৪০০ টিইইউ’স এবং মালয়েশিয়ার বন্দরের জন্য ৬০০ টিইইউ’স খালি কনটেইনার নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
পানামা পতাকাবাহী এমভি ইউয়ান জিয়াং ফা ঝং (YUAN XIANG FA ZHAN) নামের কনটেইনার জাহাজটি প্রথম ট্রিপে দুবাই থেকে করাচি হয়ে চট্টগ্রাম পৌঁছে গত ১১ নভেম্বর। জাহাজটিতে ৩২৮ বক্স কনটেইনারে ৩৭০ টিইইউ’স (২০ ফুট হিসেবে) কার্গো নামানো হয়। এর মধ্যে পাকিস্তানের করাচি বন্দর থেকে আনা হয় ২৯৭ একক কনটেইনার এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে আনা হয় ৭৩ একক কনটেইনার। কনটেইনারগুলোর মধ্যে বেশিরভাগেই ছিল টেক্সটাইল শিল্পের কাঁচামাল, কাচ শিল্পের কাঁচামাল, গাড়ির যন্ত্রাংশ, রং, কাঁচামাল, কাপড়। ৪২টি রেফার (শীততাপ নিয়ন্ত্রিত) কনটেইনারে ছিল পেঁয়াজ ও ১৪ কনটেইনারে ছিল আলু। এ ছাড়া ফেব্রিকস, চুনাপাথর, সোডা অ্যাশ, পেঁয়াজ, ম্যাগনেশিয়াম কার্বোনেট, ডলোমাইট ইত্যাদিও ছিল। এসব পণ্য আমদানি করেছিল বাংলাদেশের আকিজ গ্লাস কারখানা, প্যাসিফিক জিনস, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস, নাসির গ্লাস, এক্স সিরামিকস, হাফিজ করপোরেশন, এমআর ট্রেডিং ইত্যাদি প্রতিষ্ঠান।
দুবাইভিত্তিক কনটেইনার জাহাজ পরিচালনাকারী সংস্থা ফিডার লাইনস ডিএমসিসি দুবাই-করাচি-চট্টগ্রাম-মালয়েশিয়া-ইন্দোনেশিয়া-ভারত-দুবাই রুটে ‘এমভি ইউয়ান জিয়াং ফা ঝং’ জাহাজটি চালু করেছে। রিজেনসি লাইনস লিমিটেড জাহাজটির বাংলাদেশে লোকাল এজেন্ট। রিজেনসি লাইনস লিমিটেডের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর আনিস উদ দৌলা বাংলানিউজকে বলেন, করাচি-চট্টগ্রাম রুটের প্রথম জাহাজ এমভি ইউয়ান জিয়াং ফা ঝং। জাহাজটি দ্বিতীয় ট্রিপে প্রথমবারের চেয়ে দ্বিগুণের বেশি কনটেইনার নিয়ে আসছে। এতে বাংলাদেশের আমদানিকারকদের কনটেইনার প্রতি অন্তত ৩০০ ইউএস ডলার সাশ্রয় হচ্ছে। পাকিস্তানের কনটেইনার সিঙ্গাপুর বা মালয়েশিয়ার ট্রানজিট পোর্ট ঘুরে চট্টগ্রাম বা মোংলা আসার তুলনায় অন্তত চার দিন কম সময় লাগছে। পিক সিজনে এমনও হয় ট্রানজিট পোর্টে একেকটি কনটেইনার দুই তিন সপ্তাহ পড়ে থাকে।
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, করাচি-চট্টগ্রাম রুটে কনটেইনার ক্রমে বাড়ছে। এভাবে চাহিদা থাকলে আমাদের প্রিন্সিপালের এ রুটে নতুন আরেকটি জাহাজ নামানোর পরিকল্পনা রয়েছে। এ জাহাজটি অন্তত ৫-৬টি দেশকে সংযুক্ত করেছে। এতে করে বড় বড় মেইন লাইন অপারেটরসহ সংশ্লিষ্টরা তাদের ট্রানজিট কনটেইনারের জন্য ফিডার ভ্যাসেলের অপেক্ষা না করে আমাদের জাহাজে দিয়ে দিতে পারে। মূল কথা হচ্ছে বিজনেসের কারণে বন্দরের দুয়ার খোলে, আবার বন্ধ হয়। এর সঙ্গে কার্গো ভাড়া ও লিড টাইম জড়িত।
বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ বাংলানিউজকে বলেন, দুবাই-করাচি-চট্টগ্রাম রুটে জাহাজ চালুর ফলে নিঃসন্দেহে আমদানিকারকদের সময় ও পণ্যের ভাড়া সাশ্রয় হচ্ছে। একই সঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দরের খালি কনটেইনার মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়াসহ সংশ্লিষ্ট বন্দরে পাঠানোর সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। নতুন রুটে সারভাইব করতে পারতে যেকোনো কোম্পানি জাহাজের সংখ্যা বাড়াবে। সব কিছু নির্ভর করছে চাহিদা ও জোগানের ওপর।
আরও পড়ুন: >> করাচি টু চট্টগ্রাম রুটে চালু হলো কনটেইনার জাহাজ
>>পাকিস্তান থেকে জাহাজে চট্টগ্রামে এলো শিল্পের কাঁচামাল, পেঁয়াজ, আলু
>>করাচি-চট্টগ্রাম রুট নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে: বন্দর চেয়ারম্যান
>>পাকিস্তানের করাচি থেকে গোলা-বারুদের জাহাজ আসার সংবাদটি গুজব
বাংলাদেশ সময়: ২২১৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৮, ২০২৪
এআর/পিডি/টিসি