চট্টগ্রাম: কথায় কথায় প্রতিপক্ষের ওপর গুলি ছুড়তেন চট্টগ্রামের আলোচিত সন্ত্রাসী সাজ্জাদ প্রকাশ ছোট সাজ্জাদ। তার বাহিনীতে রয়েছে প্রশিক্ষিত একাধিক সদস্য।
গত ৫ আগস্টের পর নগরের তৎপরতা বাড়ায় ছোট সাজ্জাদ। তার বাহিনীর তৎপরতায় অতিষ্ঠ নগরের চান্দগাঁও, পাঁচলাইশ, খুলশী, বায়েজিদ বোস্তামীসহ হাটহাজারী ও রাউজান উপজেলার কয়েক লাখ বাসিন্দা। প্রথমে বায়েজিদ বোস্তামীতে জোড়া খুন, এরপর চান্দগাঁওয়ে তাহসিনকে হত্যা, সবশেষ কারাগারে থাকা অবস্থায় তার পরিকল্পনায় নগরের বাকলিয়া এক্সেস রোড এলাকায় জোড়া খুনের ঘটনা ঘটে। এসব খুনে ব্যবহৃত অস্ত্রের হদিস পাওয়া যায়নি। এর বাইরে এসময়ের মধ্যে সাজ্জাদ ও তার বাহিনীর সদস্যদের হাতে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন অনেকে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সাজ্জাদের সংগ্রহে রয়েছে কয়েক ডজন আগ্নেয়াস্ত্র। এর মধ্যে আছে ডজনখানেক অত্যাধুনিক ও বিদেশি অস্ত্র। এসব অস্ত্রের খোঁজে কারাগারে থাকা সাজ্জাদকে একের পর এক মামলায় রিমান্ডে আনছে পুলিশ। নানা কৌশলে পুলিশের সিনিয়র-জুনিয়র কর্মকর্তারা জিজ্ঞাসাবাদ করছেন তাকে। কিন্তু রিমান্ডে থাকা চতুর সাজ্জাদ দিচ্ছে না কোনও তথ্য। টানা জিজ্ঞাসাবাদে কোনো কোনো সময় রেগেও যাচ্ছে সাজ্জাদ।
গত সপ্তাহে সাজ্জাদকে নিয়ে রাউজান ও বায়েজিদ বোস্তামী থানা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে পুলিশ। এসময় মাইকিং করে এলাকাবাসীকে সাজ্জাদের মতো সন্ত্রাসীদের তথ্য দিতে বলা হয়।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (পিআর) মাহমুদা বেগম বাংলানিউজকে বলেন, সন্ত্রাসী সাজ্জাদ হোসেনের রিমান্ড চলমান রয়েছে। তার কাছ থেকে অস্ত্র উদ্ধারে পুলিশ পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে। একাধিক স্থানে অভিযান চালানো হয়েছে।
গত ১৫ মার্চ দিবাগত রাতে রাজধানীর তেজগাঁও থানার বসুন্ধরা সিটি থেকে সাজ্জাদকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গত ২৯ মার্চ দিবাগত রাত সোয়া দুইটার দিকে বাকলিয়া থানার এক্সেস রোড এলাকায় প্রাইভেট কারে দুর্বৃত্তের গুলিতে মো. আব্দুল্লাহ ও মো. মানিক নামে দুজন নিহত হয়। এই জোড়া হত্যাকাণ্ডেও পরিকল্পনাকারী হিসেবে কারাগারে থাকা সাজ্জাদের নাম ওঠে আসে। হামলাকারীদের হাতে ছিল অত্যাধুনিক অস্ত্র।
‘বুড়ির নাতি’ নামে পরিচিত সাজ্জাদকে ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করেছিল পুলিশ। গত ২৮ জানুয়ারি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নগরের বায়েজিদ বোস্তামী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) হুমকি দিয়েছিল সাজ্জাদ। ৩০ জানুয়ারি সাজ্জাদকে ধরতে তথ্য দানকারী কিংবা সহায়তাকারীকে নগদ অর্থ পুরস্কার দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়।
গত বছরের ৫ ডিসেম্বর নগরের অক্সিজেন মোড়ে তাকে ধরতে অভিযান চালায় পুলিশ। এসময় পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়তে ছুড়তে পালায় সে। গুলিতে পুলিশের দুই সদস্যসহ চারজন গুলিবিদ্ধ হয়।
অপরাধজগতে পা রেখে দিন দিন বেপরোয়া হয়ে ওঠে সাজ্জাদ। ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগের এক তরুণ নেতার আশ্রয়ে চলে যায় সাজ্জাদ। নগরের বায়েজিদ বোস্তামী, চান্দগাঁও, পাঁচলাইশ ও হাটহাজারী থানার প্রায় তিন লাখ বাসিন্দা তার আতঙ্কে দিনাতিপাত করেন। তার চাঁদা দাবির বিষয়টি অনেকটা প্রকাশ্যেই চলে। মূলত নির্মাণাধীন ভবন ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে চাঁদা তোলে এই সন্ত্রাসী।
সাজ্জাদের বিরুদ্ধে হত্যা, অস্ত্র, চাঁদাবাজির ১০টি মামলা রয়েছে। গত বছরের ১৭ জুলাই চান্দগাঁও থানা-পুলিশ অস্ত্রসহ সাজ্জাদকে গ্রেপ্তার করে। পরের মাসে তিনি জামিনে বেরিয়ে আসেন। বায়েজিদ বোস্তামী থানাসংলগ্ন হাটহাজারীর শিকারপুরের মো. জামালের ছেলে তিনি।
গত বছর ২৯ আগস্ট নগরের বায়েজিদ বোস্তামি থানার অক্সিজেন-কুয়াইশ সড়কে প্রকাশ্যে গুলি করে মাসুদ কায়সার (৩২) ও মোহাম্মদ আনিস (৩৮) নামে দুজনকে হত্যা করা হয়। এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, ব্যবসা ও রাজনৈতিক মতাদর্শ নিয়ে দুপক্ষের দ্বন্দ্বের জেরেই এ খুন হয়। এই চাঞ্চল্যকর ডাবল মার্ডারের ঘটনার দুই মামলায় সাজ্জাদ ও তার সহযোগীদের আসামি করা হয়।
গত বছরের ২১ অক্টোবর বিকেলে নগরের চান্দগাঁও থানার অদুরপাড়ায় একদল যুবক প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করে তাহসিনকে। এলাকায় আধিপত্য নিয়ে দুই সন্ত্রাসী গোষ্ঠী-সারোয়ার হোসেন ওরফে বাবলা ও ছোট সাজ্জাদের বিরোধে খুন হন তাহসিন। তিনি বাবলার অনুসারী ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৪০৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৯, ২০২৫
এমআই/টিসি