ঢাকা, সোমবার, ১ বৈশাখ ১৪৩২, ১৪ এপ্রিল ২০২৫, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

মহাসড়কে চলছে ছোট যান, ঘটছে প্রাণহানি

সৈয়দ বাইজিদ ইমন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৫৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৩, ২০২৫
মহাসড়কে চলছে ছোট যান, ঘটছে প্রাণহানি ফাইল ছবি।

চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে অবৈধ তিন চাকার ছোট যান। উল্টো পথ ব্যবহার করেও অহরহ চলাচল করছে সিএনজি অটোরিকশা, নসিমন, করিমন, ভটভটিসহ ব্যাটারিচালিত রিকশা।

 

মহাসড়কে এসব গাড়ি চলাচল নিষিদ্ধ থাকলেও কোনভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। যার কারণে প্রতিনিয়তই ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা।

উপজেলার সড়ক থেকে হঠাৎ করে মহাসড়কে উঠে পড়ছে গাড়ি। দ্রুত ছুটে চলা বড় গাড়িগুলোর সামনে হঠাৎ এসে পড়ছে অটোরিকশা, নসিমন, করিমন। পিচ্ছিল সড়কে ব্রেক করলেই ঘটছে দুর্ঘটনা।

মহাসড়কে এসব যানবাহন চলাচলে উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তা কার্যকরে কোনো উদ্যোগ নেই পুলিশ প্রশাসনের। ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর থেকেই অলি-গলি ছাপিয়ে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে চলাচল শুরু করে অননুমোদিত এসব যান। দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছাতে মানুষ এসব যান ব্যবহার করছে। অদক্ষ চালকের কারণে অহরহ দুর্ঘটনা ঘটছে। সরকার পরিবর্তনে ট্রাফিক পুলিশের অনুপস্থিতিতে আশঙ্কাজনকহারে বেড়েছে অবৈধ যানের সংখ্যা। দিনমজুর বা দোকান কর্মচারি, পঙ্গু, অসহায় বা এলাকার বেকার কিশোররা রাতারাতি বনে গেছে অটোরিকশা চালক।  

পুলিশ বলছে, এসব যানের অধিকাংশই চালায় অপেশাদার চালকেরা। এদের মধ্যে অনেকে আছে নেশাগ্রস্ত, বেপরোয়া স্বভাবের। দীর্ঘদিন ধরে হ য ব র ল ট্রাফিক ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা ফেরাতে তৎপরতা শুরু করেছে পুলিশ।  

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পটিয়া, দোহাজারি, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া উপজেলায় দেখা যায়, অবাধে চলছে সিএনজিচালিত ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। আবার কোথাও কোথাও প্রকাশ্যেই চলছে নসিমন ও ভটভটি। দ্বিমুখী লেনেই উল্টো পথে চলছে তিন চাকার যান। এ কারণে বাস, ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, লরিসহ বড় গাড়িগুলোর চালকদের হঠাৎ গতি নিয়ন্ত্রণ করতে হচ্ছে। মহাসড়কটিতে এক ঘণ্টার যাত্রায় কোথাও হাইওয়ে পুলিশের কোনো সদস্যকে দেখা যায়নি।

জানা গেছে, ২০১৫ সালে মহাসড়কে সিএনজি, অটোরিকশা, নসিমন-করিমনসহ সব ধরনের ধীরগতির তিন চাকার যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ করে সড়ক ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয়। ২০১৯ সালে এসব যানবাহনকে মহাসড়কে দুর্ঘটনার জন্য দায়ী করে উচ্চ আদালতও। চলাচল বন্ধ করার জন্য প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়। এরপর পুলিশ প্রশাসনের কঠোর অবস্থানের কারণে মহাসড়কে তিন চাকার যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তবে কিছুদিন যেতে না যেতেই আবার চলতে শুরু করে।

রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকে হাইওয়ে পুলিশের ঢিলেঢালা দায়িত্ব পালনের সুযোগে এসব যানবাহন আরও বেপরোয়া চলাচল করছে। গত এক বছরে অটোরিকশার কারণে চট্টগ্রামের মহাসড়কগুলোতে অর্ধশতাধিক মানুষ প্রাণ হারিয়েছে।  

শনিবার (১২ এপ্রিল) বিকেলে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পটিয়ার নাইখাইন গ্যাস পাম্পের পাশে ঈগল পরিবহনের সঙ্গে সিএনজি অটোরিকশার সংঘর্ষ হয়। এতে আহত হন অটোরিকশার চালক মো. হাসান (২৫)। এছাড়া পটিয়ায় সড়কে দাঁড়িয়ে থাকা একটি ট্রাকের পেছনে ধাক্কা লেগে সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক নিহত হন। আহত হন অটোরিকশার যাত্রী পুলিশের তিন উপপরিদর্শক (এসআই)।

চলতি বছরের ২৭ জানুয়ারি চন্দনাইশের দোহাজারীতে সিএনজি অটোরিকশা ও মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে মোহাম্মদ নঈম নামে একজন নিহত হন। এ ঘটনায় আহত হন আরও তিনজন। গেল বছরের ২২ সেপ্টেম্বর সাতকানিয়ায় সিএনজিচালিত দুটি অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে আরমান হোসেন নামের নগদের এক ডিএসও নিহত হন। সাতকানিয়ার পাটানীপুল এলাকায় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে বাস ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার সংঘর্ষে ছয়জন নিহত হন।

গত তিনমাসে এই সড়কে ৫৪টি দুর্ঘটনা ঘটেছে, যার মধ্যে ৪০ জন নিহত এবং ৭৩ জন আহত হয়েছেন। সর্বশেষ ঈদুল ফিতরের প্রথম তিনদিনে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় ১৭ জন প্রাণ হারিয়েছেন এই মহাসড়কে। আহত হয়েছেন ৩০ জনেরও বেশি।  

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের মারসা পরিবহনের চালক জাকের হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, মহাসড়কে তিন চাকার যানবাহনের জন্য গাড়ি চালানো দায় হয়ে পড়েছে। সংযোগ সড়ক থেকে হঠাৎ করেই মহাসড়কে উঠে পড়ছে। তখন দ্রুত ব্রেক করলে দুর্ঘটনায় হতাহতের ঘটনা ঘটে।

পটিয়া হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জসিম উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে আমাদের নিয়মিত অভিযান অব্যাহত রয়েছে। প্রতিদিন ৫-১০ জন চালককে মামলা দিচ্ছি। মাঝখানে চলাচল কমে গিয়েছিল। হঠাৎ করে আবার বেড়েছে।  

দুর্ঘটনায় মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ হওয়ার ঘটনায় কক্সবাজার চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করার দাবি জোরালো হচ্ছে। মরণফাঁদ থেকে বাঁচতে জনদাবি নিয়ে সর্বস্তরের মানুষ মানববন্ধন, বিক্ষোভসহ সভা- সমাবেশ করছে। চার লেনের সড়কের দাবিতে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন কার্যালয়, সাতকানিয়া, লোহাগাড়ায় মানববন্ধন করেছে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী এবং এলডিপি’র নেতা-কর্মীরা। এছাড়াও সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ও প্রধান উপদেষ্টাকে স্মারকলিপিও দেওয়া হয়েছে।  

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক অল্পদিনের মধ্যে ছয় লেনে উন্নীত করা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ধর্ম মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন ও রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান ও সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ সোহাইব বলেন, দেশের অন্যতম ব্যস্ত এই সড়কটি পাড়ার গলির চেয়েও সরু। তাছাড়া জাঙ্গালিয়ার মত কিছু কিছু জায়াগায় রাস্তা ঢালু এবং আঁকাবাঁকা। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে আগত পর্যটকরা রাস্তাটি সম্পর্কে অবগত নন। রাতের বেলায় লবণের গাড়ি যাতায়াতের ফলে রাস্তা পিচ্ছিল হয়ে যায়। সবমিলিয়ে রাস্তাটা মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। এছাড়া এসড়কে দুর্ঘটনার আরেকটি বড় কারণ- ছোট গাড়ির দৌরাত্ম্য।

বাংলাদেশ সময়: ১২৫০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৩, ২০২৫ 
বিই/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।