চট্টগ্রাম: দেশের একমাত্র কার্প জাতীয় মাছের প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদী থেকে এবার প্রায় ১৪ হাজার কেজি ডিম সংগ্রহ হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৯ মে) দিনগত রাত থেকে শুক্রবার (৩০ মে) দুপুর পর্যন্ত বংশ পরম্পরায় অভিজ্ঞ হালদাপারের সাড়ে পাঁচশ’ ডিম সংগ্রহকারী এসব নিষিক্ত ডিম সংগ্রহ করেছেন।
বিষয়টি বাংলানিউজকে নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় হালদা রিভার রিসার্স ল্যাবরেটরির কো-অর্ডিনেটর ড. মনজুরুল কিবরীয়া।
তিনি জানান, ১ কেজি মা মাছের ডিম থেকে কী পরিমাণ রেণু পাওয়া যাবে তা নির্ধারিত হবে চার দিন পর। ডিম থেকে রেণু ফোটানোর কাজটি স্পর্শকাতর। এর সঙ্গে অনেক প্যারামিটার জড়িত। বিশেষ করে তাপমাত্রা, পানির অক্সিজেন লেবেল, জোয়ারের ঢোকা লবণাক্ত পানির আধিক্য ইত্যাদি। মাছের সংগৃহীত ডিম বিক্রি হয় না। ডিম থেকে রেণু তৈরির পর সেটি বিক্রি হয়। রেণু দেখে বোঝা যায় না সেটি রুই, কাতলা, মৃগেল বা কালিবাউশের মধ্যে কোন মাছের। এক কেজি রেণু মানভেদে ২ লাখ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছিল আগে। মঙ্গলবার রেণুর পরিমাণ নির্ধারণের জন্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট, মৎস্য অধিদপ্তর একযোগে কাজ করবে।
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, মা মাছের নিষিক্ত ডিম থেকে প্রথমে রেণু তৈরি হবে। সেই রেণু ছোট ছোট পুকুরে ১৫ দিন থেকে ১ মাস চাষ করে ধানি পোনা হবে। তখনি মাথা, আকার, রং দেখে আন্দাজ করা যায় কোন মাছের পোনা। যেমন কাতলা মাছের পোনার মাথা বড় হবে। তারপর আরেকটু বড় পুকুরে আঙুলি পোনা তৈরি করা হবে। সেটি সারা দেশের মাছচাষিদের কাছে ছড়িয়ে যাবে।
ড. মনজুরুল কিবরীয়া বলেন, রুই, কাতলা, মৃগেল ও কালিবাউশ এ চারটি কার্প জাতীয় মাছের নিষিক্ত ডিম নদী থেকে বিশেষ কৌশলে সংগ্রহ করেছেন অভিজ্ঞ ডিম সংগ্রহকারীরা। এসব ডিম থেকে মদুনা ঘাট ছায়ার চর থেকে রামদাস মুন্সিরহাট, আমতুয়া, নাপিতার গোনা, আজিমের ঘাট, মাচুয়া গোনা, কাগতিয়া, আইডিএফ হ্যাচারি, সিপাহি ঘাট, নোয়াহাট, কেরামতালির বাক এবং অঙ্কুরিঘোনা পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এলাকা থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণ ডিম সংগ্রহ করতে পেরে সংগ্রহকারীরা খুবই খুশি। অনেকে প্রতি নৌকায় গড়ে ৫-৬ বালতি পর্যন্ত ডিম সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছেন। এখন নদীর পাড়ে স্থাপিত সরকারি ও বেসরকারি হ্যাচারী এবং ঐতিহ্যবাহী মাটির কুয়াগুলোতে ডিম সংগ্রহকারীরা ডিমের পরিস্ফুটনে ব্যস্ত সময় পার করছেন। নদীতে মৎস্য অধিদপ্তর, বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট, নৌ পুলিশ এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরি যৌথ ভাবে ডিম সংগ্রহের তথ্য সংগ্রহ এবং নদীর সার্বিক পরিবেশ মনিটরিং করছে।
হালদা গবেষক ও চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজের জীববিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সহকারী অধ্যাপক ড. মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, বৃহস্পতিবার রাত ২টার দিকে জোয়ারের সময় হালদা নদীর আমতুয়া অংশে কার্পজাতীয় মা মাছ পুরোদমে ডিম ছাড়ে। পরবর্তীতে ডিমগুলো হালদা নদীর বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়ে। যারা প্রথম দিকে ডিম সংগ্রহ করতে নদীতে ছিল তারা বেশি ডিম সংগ্রহ করেছিল। ডিম সংগ্রহকারীরা গড়ে দুই থেকে আড়াই বালতি করে ডিম সংগ্রহ করেছে। কাঙ্ক্ষিত ডিম সংগ্রহ করতে পেরে ডিম সংগ্রহকারীরা ভীষণ আনন্দিত। বর্তমানে ডিম সংগ্রহকারীরা হ্যাচারি ও মাটির কূয়ায় ডিম ফুটানোর কাজে ব্যস্ত।
এআর/পিডি/টিসি