ঢাকা, শনিবার, ৬ পৌষ ১৪৩১, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

সমর্থকদের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় স্থাপনায় নাশকতার পরিকল্পনা

রমেন দাশগুপ্ত, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৩১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৫, ২০১৩
সমর্থকদের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় স্থাপনায় নাশকতার পরিকল্পনা ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

চট্টগ্রাম: নিজেদের সমর্থক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাজে লাগিয়ে রাষ্ট্রীয় স্পর্শকাতর স্থাপনায় নাশকতার পরিকল্পনা নিয়েছে জামায়াত-শিবির।

শনিবার রাতে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজে কর্মরত একজন কর্মচারীর মাধ্যমে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায় ‍জামায়াত-শিবির।

রেললাইনে প্রতিনিয়ত ঘটে চলা নাশকতায়ও তাদের কর্মচারী জড়িত থাকার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

একই প্রক্রিয়ায় সরকারী অন্যান্য স্থাপনাগুলোতেও জামায়াত-শিবিরের নাশকতার পরিকল্পনা আছে বলে তথ্য আছে নগর পুলিশের কাছে।


চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সিভিল এভিয়েশন বিভাগের ব্যবস্থাপক উইং কমান্ডার নূর ই আলম চৌধুরী বাংলানিউজেকে বলেন, নিরাপত্ত‍া ব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ করে আন্তর্জাতিক এই বিমানবন্দরের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতেই সংরক্ষিত এলাকায় ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে দুর্বৃত্তরা।

নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (বন্দর) মোস্তাক আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, নিরাপত্তাকর্মীদের চোখ ফাঁকি দিয়ে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের এক কর্মচারী বিমানবন্দরের দোতলার জানালা দিয়ে ককটেল ছুঁড়েছে। এ ঘটনা বিমানবন্দরের সার্বিক নিরাপত্তার জন্য হুমকি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিৎ হবে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ঢেলে সাজানো।

নগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার বাবুল আক্তার বাংলানিউজকে বলেন, দলের সমর্থকদের মাধ্যমে জাম‍ায়াত-শিবিরের নাশকতার পরিকল্পনার বিষয়ে আমাদের কাছে তথ্য ছিল। বিমানবন্দরের ঘটনায় এটা আরও পরিস্কার হয়েছে। এভাবে ভবিষ্যতে অন্যান্য স্থাপনাগুলোতেও হামলার আশংকা আছে।

শনিবার সন্ধ্যা ৭টা ৫০ মিনিটে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সামনে ভিআইপি গাড়ি পার্কিংয়ের স্থানে একটি শক্তিশালী ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটে। এ ঘটনার পর বিমানবন্দরের নিজস্ব নিরাপত্তা কর্মীরা সাহাবউদ্দিন (২৭) নামে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের এক কর্মচারীকে আটক করেন। পরে তাকে পতেঙ্গ থানায় সোপর্দ করা হয়।

নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (বন্দর) মোস্তাক আহমেদের নেতৃত্বে একদল পুলিশ সাহাবউদ্দিনকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করেন।

জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মোস্তাক আহমেদ বাংলানিউজকে জানান, সাহাবউদ্দিন ইউনাইটেড এয়ারওয়েজে পণ্য উঠানামার কাজে নিয়োজিত শ্রমিক ছিল। একসময় চট্টগ্রাম কলেজের ছাত্র সাহাবউদ্দিন শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল। বর্তমানে সে জামায়াতের সমর্থক।

শনিবার মাগরিবের নামাজের পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র শিবিরের এক কর্মীসহ দু`জন এসে সাহাবউদ্দিনকে ককটেলের প্যাকেটটি দিয়ে যায়। এসময় সাহাবউদ্দিন ককটেলসহ বিমানবন্দরের ভেতরে ঢুকেন। ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের কর্মচারী হওয়ায় তাকে সন্দেহ করেনি বিমানবন্দরের নিজস্ব নিরাপত্ত‍া কর্মীরা।

মাত্র কয়েক মিনিটের জন্য ভিআইপি কার পার্কিংয়ের স্থান ফাঁকা পেয়ে বিমানবন্দরের দোতলার জানালা দিয়ে ককটেল ছুঁড়ে আবার নিচে নেমে ইউনাইটেডের অফিসে চলে যায় সাহাবউদ্দিন।

এদিকে বিমানবন্দরের প্রবেশপথে কঠোর তল্লাশির মধ্যে সাহাবউদ্দিন কিভাবে ককটেল নিয়ে ভেতরে ঢুকতে পারল তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।    

সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিজস্ব নিরাপত্তা কর্মী আছে দেড়’শ জনের মত। এর বাইরে আনসার সদস্য আছে আরও প্রায় দু’শ জন।

বিমানবন্দরের সিভিল এভিয়েশন বিভাগের ব্যবস্থাপক উইং কমান্ডার নূর ই আলম চৌধুরী বাংলানিউজকে জানান, ককটেল বিস্ফোরণের পর বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। সাময়িকভাবে দর্শনার্থী গ্যালারি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। যাত্রীদের স্বজনদের বসার নির্ধারিত কনকর্ডস হলেও কাউকে যেতে দেয়া হচ্ছেনা।

বিমানবন্দরের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ঢোকার জন্য ১০ নম্বর ফটকটি নির্ধারিত করে দেয়া হয়েছে। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রবেশেও কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। এছাড়া বিমানবন্দরের সংরক্ষিত এলাকার পরিধিও বাড়ানো হয়েছে।

এছাড়া বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের অনুরোধে র‌্যাব ও পুলিশের টহল জোরদার করা হয়েছে। বিমানবন্দরে যেসব বেসরকারী বিমানের অফিস আছে তাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপর নজরদারি বাড়ানোর জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছে সিভিল এভিয়েশন বিভাগ।  

উইং কমাণ্ডার নূর ই আলম চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমি বেসরকারী এয়ারলাইনসের ম্যানেজারদের সঙ্গে বৈঠক করে তাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিষয়ে সতর্ক থাকার কথা বলেছি। ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ জানিয়েছে, তারা তাদের কর্মচারী সাহাবউদ্দিনকে বরখাস্ত করেছে। এছাড়া এলাকার জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে তাদেরও সহযোগিতা চেয়েছি। ’

নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (বন্দর) মোস্তাক আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, ‘বিমানবন্দরে নাশকতার পরিকল্পনা এবং এর সঙ্গে কারা কারা  যুক্ত ছিল, সব তথ্য আমরা পেয়েছি। সাহাবউদ্দিনের বিরুদ্ধে দ্রুত বিচার ও বিস্ফোরক আইনে একটি মামলা দায়ের হয়েছে। আমরা এর সঙ্গে জড়িত অন্যান্যদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছি। ’

নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (গোয়েন্দা) বাবুল আক্তার বাংলানিউজকে জানান, চট্টগ্রামে ‘এ, বি ও সি’ ক্যাটাগারিতে অন্তর্ভুক্ত বর্তমানে ৪৬টি রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা আছে। নাশকতা ঠেকাতে এসব স্থাপনার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিষয়ে সম্প্রতি নগর গোয়েন্দা পুলিশ নজরদারি শুরু করেছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪১০ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৪,২০১৩
সম্পাদনা: তপন চক্রবর্তী, ব্যুারো এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।