ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

জাহাজ থেকে ওয়াচম্যান নামিয়ে দেয়ার অভিযোগ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮২৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৮, ২০১৩
জাহাজ থেকে ওয়াচম্যান নামিয়ে দেয়ার অভিযোগ ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

চট্টগ্রাম:চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে জাহাজে ওয়াচম্যান নিয়োগ ও কর্মরতদের জাহাজ থেকে নামিয়ে দেয়ার অভিযোগ করেছে চট্টগ্রাম বন্দর মেরিন কন্ট্রাক্টর পাহারাদার কল্যাণ সমিতি।

বুধবার বিকেলে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন সংগঠনের সভাপতি মনোয়ার আলী রানা।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে রানা জানান, সংগঠনের ৬৩৫ সদস্যের মধ্যে গড়ে দুই থেকে আড়াই’শ শ্রমিক জাহাজে কাজ করে থাকে। কিন্তু সম্প্রতি কর্মরত এসব শ্রমিকদের জাহাজ থেকে নামিয়ে টাকার বিনিময়ে নতুন শ্র্রমিক নিয়োগ দেয়ার চেষ্টা শুরু করেছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।

তিনি জানান, চট্টগ্রাম বন্দরের ৭৫ শতাংশ জাহাজে সংগঠনের শ্রমিকরা জাহাজ পাহারায় নিয়োজিত থাকে। তবে জেটিতে অবস্থান করা জাহাজে তারা দায়িত্ব পালন করতে পারেন না।

সংবাদ সম্মেলনে রানা অভিযোগ করেন, বন্দর কর্তৃপক্ষ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশন ও কন্ট্রাক্টারস অ্যাসোসিয়েশনকে তাদের অবৈধ সেলে বুকিং দেয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করে। কিন্তু এতে তারা রাজি না হওয়াতে চট্টগ্রাম বন্দর নিরাপত্তা বিভাগ গত ১৩ ডিসেম্বর এমটি ‘বাংলার সৌরভ’ ও এমটি ‘বাংলার জ্যোতি’ থেকে এবং ১৫ ডিসেম্বর এমটি ‘তেরেসা ওরিয়ন‘ জাহাজ থেকে ওয়াচম্যানদের জোর পূর্বক নামিয়ে দেয়।

এ ঘটনায় সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক বন্দর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। এতে করে বন্দর কর্তৃপক্ষ তাদের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে।

আদালতে আইন অমান্য করে ওয়াচম্যান নিয়োগ দেয়ার পেছনে চট্টগ্রাম বন্দরের এক শ্রেণির কর্মকর্তা ও কিছু নামধারী শ্রমিক জড়িত বলে অভিযোগ করেন মনোয়ার আলী।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গত তত্বাবধায়ক সরকারের আমলে কোস্টগার্ড পূর্ব জোনের কমান্ডার আলতাফ হোসেনকে প্রধান করে গঠিত চার সদস্যের কমিটি ওয়াচম্যান নিয়োগ ও পরিচালনায় একটি নীতিমালা তৈরি করেন। ওই নীতিমালা বাস্তবায়ন না করায় ২০০৮ সালের ৭ নভেম্বর সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক উচ্চ আদালতে একটি রিট পিটিশন দাখিল করেন।

২০০৯ সালের ২৪ নভেম্বর মামলার শুনানি শেষে সংগঠনের পক্ষে রায় দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে তৎকালীন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী রায় বাস্তবায়নের জন্য চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেন। তবে বন্দর কর্তৃপক্ষ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে জানিয়ে অপেক্ষা করতে বলেন।

এরই মধ্যে আপিল মামলা চলাকালীন ২০১০ সালের ১৫ জুন পুরনো শ্রমিক পরিচয় পত্র বাতিল করে নতুন ওয়াচম্যান নিয়োগ শুরু করে।

নতুন শ্রমিকদের কাছ থেকে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ আদায় করে নিয়োগ দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন সংগঠনের সভাপতি।

‘আদালতের প্রতি অসম্মান দেখিয়ে এ ধরণের কাজের একটাই উদ্দেশ্যে, তা হলো সাধারণ ও গরীব প্রার্থীদের কাছ থেকে চাকরির নামে বিপুল পরিমান অর্থ হাতিয়ে নেয়া’

এদিকে ২০১২ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি উচ্চ আদালতে রায় বহাল রেখে ওয়াচম্যান নিয়োগের আদেশ দেন। এরপর চট্টগ্রাম বন্দরের কিছু কর্মকর্তা ও কয়েকজন শ্রমিক নেতা রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ পিটিশন দাখিল করে ২০১২ সালের ১৮ নভেম্বর। পরে বন্দরের বর্তমান চেয়ারম্যানসহ ৬ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা দায়ের হয়। আদালত ৬ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে রুল জারি করে।

রিভিউ মামলা ও আদালত অবমাননা মামলা দুটির শুনানি শেষে রায়ের অপেক্ষায় রয়েছে।     

সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে এক্সট্রা হাউজগ্যাং শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো.জামাল উদ্দিন, কোস্টার হেজ শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মহিউদ্দিন কবির, ডক শ্রমিক ইউনিয়নের যুগ্ম সম্পাদক জসিম উদ্দিন, চট্টগ্রাম বন্দর মেরিন কন্ট্রাক্টর পাহাদার কল্যাণ সমিতির উপদেষ্টা জাকির মিয়া, সহ-সভাপতি নিজাম উদ্দিন আহমদ, যুগ্ম সম্পাদক কামরুল হাসান, দপ্তর সম্পাদক খায়রুজ্জামান বাবু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ সময়:১৮০৫ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৮, ২০১৩

সম্পাদন: তপন চক্রবর্তী, ব্যুরো এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।