চট্টগ্রাম: স্বাধীনতা বিরোধীদের সাংবিধানিক ও রাজনৈতিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন খ্যাতিমান সাংবাদিক ও কলামিস্ট আবেদ খান।
শুক্রবার বিকালে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি পরিষদ আয়োজিত সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী গণসম্মিলনে এ মন্তব্য করেন তিনি।
সাংবাদিক আবেদ খান বলেন, সাতক্ষীরায় ভয়াবহ জামায়াতি উৎপীড়ন শুরু হয়েছে।
দুঃখ প্রকাশ করে তিনি বলেন,‘১৯৭১ সালের ৭ ডিসেম্বর সাতক্ষীরা মুক্ত করেছিলাম। সেই সাতক্ষীরায় বিজয়ের মাসে ভয় সংকোচ নিয়ে আমরা যেতে চাই না। সেখানে আমাদের আরেকটি যুদ্ধ করার জন্য যেতে হবে। ১৯৭১ সালে ১৬ ডিসেম্বর বিজয় অর্জন সম্পূর্ণ করতে পারিনি। একাত্তরের শত্রুরা ক্রমান্বয়ে শক্তিশালী হয়েছে। তথাকথিত মুক্তিযোদ্ধা দাবিদাররা মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষ শক্তির সঙ্গে আতাঁত করেছে। ’
আবেদ খান বলেন, কয়েকটি জনপ্রিয় পত্রিকা দশম সংসদ নির্বাচন নিয়ে বিভ্রান্ত ছড়িয়ে তাদের শক্তি সঞ্চারের সুযোগ করে দিয়েছে। আমাদের কাছে এখন নিবার্চন বড় নয়, মুক্তিযুদ্ধই বড় বিষয়। এখন দেশকে মুক্ত করাই প্রধান লড়াই।
বাংলাদেশে নিরপেক্ষতার কোন সুযোগ নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন,‘যুদ্ধে কেউ নিরপেক্ষ থাকতে পারে না। এখন তথাকথিত নিবার্চন নিয়ে মাথা ঘামানোর কোন সুযোগ নেই। ’
‘বাংলাদেশ বিশ্বের একমাত্র দেশ যেখানে স্বাধীনতা বিরোধীদের সাংবিধানিক অধিকার দিয়েছে। জিয়াউর রহমান তাদের এ অধিকার দিয়েছে। স্বাধীনতা বিরোধীদের সাংবিধানিক ও রাজনৈতিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করতে হবে। ’
সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী দেশের বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর ধারাবাহিকভাবে নিপীড়ন-নির্যাতন চালাচ্ছে। এর বিরুদ্ধে প্রগতিশীল শক্তিকে ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দাড়ানোর আহবান জানান এ সাংবাদিক।
ইতিহাসবিদ ও একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সহ সভাপতি মুনতাসীর মামুন বলেন, ‘এখন সোজা ভাষায় সোজা কথা বলার সময় এসেছে। আমরা সাম্প্রদায়িক উপাদানগুলো নির্মূল করেছি বলে মনে করেছিলাম। তা তো হয়নি বরং এসব উপাদান এখন প্রভাব ফেলছে। ’
জিয়াউর রহমানকে মুক্তিযুদ্ধে যেতে বাধ্য করার কারণে মুক্তিযুদ্ধের প্রতি তিনি ভীতশ্রদ্ধ ছিলেন উল্লেখ করে এই ইতিহাসবিদ বলেন,‘জিয়াউর রহমান ১৯৭৫ এর পর মুক্তিযুদ্ধের প্রতিটি বোধকে নষ্ট করে এর শোধ নিয়েছেন। ধর্ম নিরপেক্ষতাকে বাদ দিয়ে সংবিধানের মূল বিষয় নষ্ট করে দিয়েছেন। ১৯৭৬ সালে স্বাধীনতা বিরোধীদের গাড়ি-বাড়িতে জাতীয় পতাকা দিয়ে বলেছিল তারা আমার ভাই। ’
জিয়াউর রহমান এ দেশের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করেছেন অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘সুতরাং এখনই সিদ্ধান্ত নিতে হবে এদেশে কারা রাজনীতি করবে। পাকিস্তানিরা না বাঙালীরা। বাংলাদেশে বাঙালী ছাড়া আর কারো রাজনীতি করার অধিকার নেই। জামায়াত-বিএনপি’র রাজনীতি বিনাশ করাই হবে আমাদের রাজনীতি।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আনোয়ারুল আজিম আরিফের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন- একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সাধারণ সম্পাদক কাজী মুকুল, মুক্তিযোদ্ধা গবেষক ডা. মাহফুজুর রহমান ও এ কে এম নাসিমুল কালাম, চবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সেকান্দর চৌধুরী, আবৃত্তি শিল্পী রণজিৎ রক্ষিত, শিক্ষক নেতা লকিয়ত উল্লাহ, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক রিয়াজ হায়দার, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি পরিষদের সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট সীমান্ত তালুকদার।
সম্মিলনের ঘোষণা পত্র পাঠ করেন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি পরিষদের প্রধান সমন্বয়কারী শওকত বাঙালি।
বাংলাদেশ সময়: ২০৪৩ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২০, ২০১৩
সম্পাদনা: তপন চক্রবর্তী, ব্যুরো এডিটর