ঢাকা, শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

দু’মাস পর মায়ের কোলে শিশু সোবাহান

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৩১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৬, ২০১৩
দু’মাস পর মায়ের কোলে শিশু সোবাহান ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম রেলস্টেশনের প্ল্যাটফর্মে কাগজ কুড়াতে গিয়েছিল সোবাহান নামে পাঁচ বছর বয়সী এক দূরন্ত শিশু। সেখান থেকে নিখোঁজ হয়ে যায় সে।

নিখোঁজের পরদিন লিভার ক্যান্সারে আক্রান্ত অসুস্থ তার বাবা মারা যায়।

একদিকে স্বামী হারানোর শোক, অন্যদিকে সন্তানের কোন খোঁজ না পাওয়া-সব মিলিয়ে পাগল হওয়ার দশা মা রাবেয়া বেগমের।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির সহায়তায় দু’মাস পর মা খুঁজে পেয়েছেন তার সন্তানকে।

বৃহস্পতিবার সকালে সোবাহানকে মহিলা আইনজীবী সমিতির কর্মকর্তারা বরিশাল থেকে চট্টগ্রাম নগরীর খুলশী থানায় নিয়ে আসে। সেখানে পুলিশের উপস্থিতিতে শিশুটিকে মায়ের হাতে তুলে দেন বেসরকারী ওই প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা।

জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির ডকুমেন্টেশন অফিসার কাজী মহিউদ্দিন আহমেদ বাংলানিউজকে জানান, গত ১০ নভেম্বর সন্ধ্যার দিকে বরিশাল শহরের রসুলপুর এলাকায় সোবাহানকে তাদের স্বেচ্ছাসেবক লিনা বেগম খুঁজে পান। পরবর্তীতে তারা শিশুটির কাছ থেকে তার ঠিকানা ঝাউতলা শুনে চট্টগ্রামে যোগাযোগ করেন। এভাবেই শিশুটির মায়ের সন্ধান পান তারা।

সোবাহানের মা নগরীর খুলশী থানার ঝাউতলা পানির টাংকি এলাকায় রেলস্টেশনের পাশে একটি বস্তিতে থাকেন।  
সোবাহানের মা রাবেয়া বেগম বাংলানিউজকে জানান, গত ২৪ অক্টোবর প্রতিদিনের মত সোবাহান একা কাগজ কুড়াতে বের হয়। চট্টগ্রাম রেলস্টেশনে গিয়ে সে আর বাসায় ফিরে আসেনি। পরদিন তার বাবা মোস্তফা মারা যায়।

সোবাহানের পুরো বিষয়টি মনে নেই। তবে সে জানায়, চট্টগ্রাম রেলস্টেশন থেকে দু’জন লোক তাকে প্রথমে ট্রেনে করে ঢাকায় নিয়ে যায়। সেখান থেকে তাকে লঞ্চে করে বরিশাল নিয়ে যায়। সেখানে কার হেফাজতে ছিল, তাকে খেতে দিয়েছে কিনা-এসব বিষয়ে সে কিছুই মনে করতে পারেনি।

রাবেয়া জানান, সবসময় স্টেশনে কাগজ কুড়িয়ে যে কোন ট্রেনের পেছন দিকে উঠে সোবাহান চলে আসত বাসায়। ঝাউতলা পর্যন্ত এলে চলন্ত ট্রেন থেকে ‍লাফ দিয়ে নেমে যেত।

রাবেয়ার ধারণা, সেদিনও একইভাবে ট্রেনে চেপে বসেছিল সোবাহান। নামতে না পারায় ট্রেন তাকে নিয়ে ঢাকায় চলে যায়। সেখান থেকে ঘুরতে ঘুরতে কোনভাবে বরিশালে পৌঁছে যায়।

সকালে সোবাহানকে ফিরে পাবার পর চোখের জল আর বাধা মানেনি রাবেয়ার। সন্তানকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকেন রাবেয়া। সন্তানকে ফিরে পাবার জন্য তিনি বারবার জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির কর্মকর্তাদের ধন্যবাদ জানান।

জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির ডকুমেন্টেশন অফিসার কাজী মহিউদ্দিন আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, প্রায় দেড় মাস শিশুটি আমাদের হেফাজতে ছিল। তাকে মায়ের কাছে ফিরিয়ে দিতে পেরে আমাদেরও খুব ভাল লাগছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৩০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৬,২০১৩
সম্পাদনা: তপন চক্রবর্তী, ব্যুরো এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।