ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

কাঠেও ক্ষতিকর গামা রে!

আবদুল্লাহ আল মামুন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৩১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০১৪
কাঠেও ক্ষতিকর গামা রে!

চট্টগ্রাম: একসময় কাঠের ব্যবহার ব্যাপক থাকলেও প্লাস্টিকের যুগে তা কিছুটা হলেও কমে এসেছিল। কিন্ত বর্তমানে শৌখিন মানুষেরা কাঠের তৈরি ঘরসহ বিভিন্ন আসবাব পত্র ব্যবহার করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছেন।

তবে এ কাঠের তৈরি ঘর কিংবা আসবাবপত্র আপনার জীবনেও নিয়ে আসতে পারে মৃত্যু ঝুকি!

কথাটা অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি। ‘Natural Radioactivity and Gamma-ray Attenuation Coefficients of Tropical Hardwoods’ শিরোনামে গবেষণায় এমনটিই পাওয়া গেছে।
তবে বাংলাদেশ এ আশংকামুক্ত বলেই জানিয়েছেন গবেষক।

গবেষণাটি করেছেন বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ কোম্পানি লিমিটেডের আন্তর্জাতিক তার অফিস (আইটিও) এর প্রধান তত্ত্বাবধায়ক সৈয়দ এনায়েতুর রহমান।

সৈয়দ এনায়েতুর রহমান জানান,‘উচ্চ মাত্রার তেজষ্ক্রিয় বিকিরণ মানবদেহে নানা রকম ক্যান্সারের জন্ম দিতে পারে। দীর্ঘদিন মাত্রাতিরিক্ত তেজষ্ক্রিয় বিকিরণের সংস্পর্শে থাকলে মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পায়, মানসিক বিকার এমন কি বিকলাঙ্গতাও দেখা দিতে পারে। এর ক্ষতিকর প্রভাব বংশ পরম্পরায়ও পরিলক্ষিত হয়। ’

নব্বইয়ের দশকের এ ছাত্রনেতা বলেন,‘গবেষণার উদ্দেশ্য ছিল গামা এনার্জি কাঠের অ্যাটেনিয়েশনের ক্ষেত্রে কতটুকু ইফেক্ট পড়ে এবং সেটা মানুষের জন্য কতটুকু ক্ষতিকর তা নির্ণয় করা। এছাড়া এটা কতটুকু প্রটেক্ট করা যায় তা দেখা। ’

তিনি বলেন, ‘আমি মূলত যেসব গাছ আমাদের নিত্য প্রয়োজনীয় আসবাব পত্র তৈরিতে ব্যবহার হয় সেসব গাছের উপর গবেষণা করেছি। গাছগুলোর মধ্যে রয়েছে- মেহগনি, গামারি, সেগুন, আমগাছ, ইউক্যালিপ্টাস, আকাশমনি, জামগাছ, ধারমারা, সোনালো, তেতুল। এসব গাছ কি পরিমান স্বতস্ফুর্ত তেজস্ক্রিয়তা ঘটায় সেটাই দেখতে চেয়েছি। ’

সৈয়দ রহমান বলেন, গবেষণায় দেখা গেছে সর্বোচ্চ গামা এনার্জি বিকিরণ হয় সেগুন গাছ থেকে। যার পরিমান ২৩দশমিক ৭৯বিকিউ/কেজি আর সর্বনিম্ন গামার গাছ থেকে। যার পরিমান ১ দশমিক ১৪ বিকিউ/কেজি। তবে এই বিকিরণ খুবই কম মাত্রার যা মানুষের জন্য ক্ষতিকর নয়।

গবেষণা পদ্ধতি নিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রতিটি গাছের জন্য আলাদা ডাটাবেইস করা হয়েছে। ২০০ কেইবি থেকে ২০০০ কেইবি পর্যন্ত ভাগ করে প্রতিটি এনার্জির আলাদা ডাটাবেইস তৈরি করেছি। এরপর ক্যালকুলাস করে ফলাফল বের করা হয়। এক্ষেত্রে আমাকে খুব সর্তক থাকতে হয়েছে। কারণ একটি গাছের অনেকগুলো উপাদান। সবগুলো উপাদান আলাদাভাবে বের করে বসাতে হয়েছে। একটু ভুল হলেই পুরো ডাটাই কোনো কাজে আসতো না। ’

বিটিসিএলের কর্মকর্তা সৈয়দ এনায়েতুর রহমান জানান, এ গবেষণাটা আমার জন্য চ্যালেঞ্জ ছিল। গবেষণায় ব্যবহারের জন্য কোন রেফারেন্স পাওয়া যায়নি। কারণ এর আগে এ ধরণের কাজ কেউ করেনি। এ গবেষণার তথ্য ভবিষৎ গবেষণা কাজে রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। তাছাড়া শিল্প, কৃষি, প্রতিরক্ষা এবং বৈজ্ঞানিক অ্যাপস তৈরিতেও এ গবেষণার তথ্য ব্যবহার করা যাবে।

সৈয়দ এনায়েতুর রহমান বাংলাদেশ ছাত্র সমিতির(ন্যাপ-মোজাফফর) কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

এছাড়া সংগঠনটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ৯০-এর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের অন্যতম সংগঠকও ছিলেন তিনি।

এনায়েতুর রহমান চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির সুয়াবিল এলাকার বাসিন্দা সাবেক কৃষি কর্মকর্তা মরহুম শাহছুফী সৈয়দ আহম্মদ এজাহার ও প্রগতিশীল আন্দোলনের নেত্রী জাহানারা বেগমের ২য় সন্তান।

সৈয়দ এনায়েতুর রহমান ‘ন্যাচারাল রেডিও অ্যাকটিভিটি অ্যান্ড গামা-রে অ্যাটেনিয়েশন কো-ইফেশিয়েন্টস অব ট্রপিক্যাল হার্ডউডস’ শিরোনামে গবেষণাটির জন্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৯০ তম সিন্ডিকেট সভায় এ ডিগ্রির অনুমোদন দেয়া হয়। এর আগে ২০০০ সালে তিনি ‘Distribution of radionuclides in the soil of moheshkhali island of Bangladesh’ শীর্ষক গবেষণার উপর এমফিল ডিগ্রী অর্জন করেন। ১৯৯৩ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিদ্যায় মাস্টার্স পাশ করেন তিনি।

গবেষণাকর্মটির মূল সুপারভাইজার হিসেবে ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদের সাবেক ডীন ও কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. নুরুল মোস্তাফা।

গবেষণায় কো-সুপারভাইজার হিসেবে ছিলেন বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের সাবেক পরিচালক ড. মনতাজুল ইসলাম চৌধুরী।

বাংলাদেশ সময়: ১২৩২ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারী ১৮, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad