চট্টগ্রাম: কয়েক ঘণ্টা পরই পর্দা উঠবে টি-টোয়েন্টি’র পঞ্চম বিশ্ব আসরের। চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে হংকংয়ের বিপক্ষে মাঠে নামবে নেপাল।
রাতের আঁধারে দূর থেকে দেখলে মনে হবে কোনো জমকালো সাজানো বিয়ে বাড়ি। কাছে গেলেই ভুল ভাঙ্গবে। সবাই দেখবে সবুজ মাঠে ডানা মেলে উড়ছে প্রজাপ্রতি। আকাশের তারারাও নেমে এসেছে মাঠে। রয়েছে ব্যাট-বলও। পাশেই কুড়ে ঘর। মাছ ধরার ছাই দিয়ে স্থাপনা। আছে পালকিও। সবই ফুল দিয়ে সাজানো। বাদ যায়নি চট্টগ্রামের ঐতিহ্যের প্রতীক সাম্পান। সাইনবোর্ডে বান্দরবানের নীলাচল, জোড়া ঝর্ণাসহ তুলে ধরা হয়েছে বৃহত্তর চট্টগ্রামের বিভিন্ন পর্যটন স্পটও।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপকে সামনে রেখে এমন ফুলেল সাজে সেজেছে চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আসা খেলোয়াড় ও ক্রীড়ামোদিরা স্টেডিয়ামের ফুলের মনোরম সজ্জায় মোহিত হবেন।
স্টেডিয়ামের সৌন্দর্য বর্ধনের কাজের তদারক করেছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। কাজটি বাস্তবায়ন করেছেন চারুশিল্পী সায়েম হোসেনের নেতৃত্বে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের একঝাঁক নবীন শিক্ষার্থী।
সরেজমিন দেখা গেছে, স্টেডিয়ামে ঢোকার মুখেই আওয়ামী লীগের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক জহুর আহমদ চৌধুরী’র ভাস্কর্য। ব্যাকগ্রাউন্ডে চিত্রে তুলে ধরা হয়েছে চট্টগ্রামের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দৃশ্য। স্টেডিয়ামের সীমানায় প্রবেশ করলেই নয়নাভিরাম বাহারি ফুলের সজ্জা আপনাকে মোহিত করবে।
পাশেই চিত্রের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে বাংলাদেশের বিভিন্ন পর্যটন স্পটের ঐতিহ্যবাহী স্থাপনার দৃশ্য। চিত্রে চিত্রে তুলে ধরা হয়েছে বান্দরবানের জোড়া ঝর্ণা, নীলগিরি, কাপ্তাই লেক, নীলাচল, বাটারফ্লাই পার্ক, রাখাইন ফেস্টিভ্যাল, আদিবাসীদের পোশাক, সিটি গেইট, চন্দনপুরা মসজিদ, স্বর্ণ মন্দির ও কক্সবাজারের শুটকি শুকানোর দৃশ্যসহ অসংখ্য পর্যটন স্পট। এছাড়াও স্থাপন করা হয়েছে রিকশা, সাম্পান, পালকি, মাছ ধরার ছাইয়ের স্থাপনা ও গ্রামীণ কুঁড়ে ঘর।
চারুশিল্পী সায়েম হোসেন বাংলানিউজকে বলেন,‘মাঠের ভেতরে তো সবুজ। তাই বাইরে বাহারি রঙের ফুল দিয়ে সাজানোর চেষ্টা করছি। ফুলের বাগানের মাধ্যমে প্রজাপতি, কুঁড়ে ঘর, ব্যাট-বল, তারা, নৌকা এসব চিত্রায়ণের চেষ্টা করা হয়েছে। লোকজ উপাদানগুলোকে ব্যবহার করে গ্রামীণ শিল্প ও সংস্কৃতি তুলে ধরা হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন প্রিন্টেড ছবির মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দৃশ্য চিত্রায়ন করা হয়েছে। ’
তিনি বলেন,‘সাজসজ্জা দেখে বিদেশের খেলোয়াড় ও ক্রীড়ামোদিরা যাতে বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সম্পর্কে জানতে পারে সে চেষ্টা করছি এবং আমাদের কাজগুলোও সে আঙিকে তুলে ধরার চেষ্টা করছি। ’
মাঠের বাইরে নগরীর বন্দর মোড়, নিমতলা বিশ্বরোড, টাইগারপাস, জিইসি মোড়সহ বিভিন্ন মোড়কে দৃষ্টি নন্দন করে সাজিয়েছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। ২০১১ বিশ্বকাপে স্থাপন করা বিভিন্ন ভাস্কর্যেও লেগেছে তুলির আচড়।
বাংলাদেশের ক্রিকেটের বহু সাফল্যের সাক্ষী চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম। খ্যাতি পেয়েছে ‘লাকি গ্রাউন্ড’ হিসেবেও। এ মাঠে এ পর্যন্ত টেস্ট, ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি মিলে ২৯ টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত মাসে শ্রীলংকা-বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি সিরিজের মাধ্যমে এ স্টেডিয়ামে অভিষেক হয় ক্রিকেটের এ সংক্ষিপ্ত ভার্সনের। ২০০৬ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারী এই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেই তৃতীয় একদিনের ম্যাচের মধ্যেই আন্তর্জাতিক ভেন্যু হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে সাগর পাড়ের এ স্টেডিয়ামটি। একদিনের ম্যাচের অভিষেকের দুইদিন পর টেস্ট অভিষেক হয় এই স্টেডিয়ামটির।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ পঞ্চম আসরের ৩৫টি ম্যাচের মধ্যে ১৫টি অনুষ্ঠিত হবে এ ভেন্যুতে। আসরের প্রথম পর্বে এ ভেন্যুতে বাংলাদেশ দলের ২টি খেলা অনুষ্ঠিত হবে। এরমধ্যে ১৮ মার্চ নেপালের বিপক্ষে। ২০ মার্চ হংকংয়ের বিপক্ষে। লাকি গ্রাউন্ড টাইগারদের বিজয়ে সিক্ত করবে এমনটিই প্রত্যাশা ক্রিকেট প্রেমীদের।
বাংলাদেশ সময়: ১২০৮ ঘণ্টা, মার্চ ১৬, ২০১৪