চট্টগ্রাম: অনেক কথা বলার আছে ছেলেকে। তাই ফোনে কান্নাকাটি করে ছেনোয়ারা বারবার তাগাদা দিচ্ছিলেন ছেলে শফি যেন শীঘ্রই দেশে আসে।
এমনই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে জেলার ভূজপুরের আমান বাজার এলাকায়। সোমবার মায়ের কান্না থামাতেই দেশে ফিরেছিলেন ওই এলাকার শারজাহ প্রবাসী মো. শফি। মা’ও বিমানবন্দরে ছুটে গিয়েছিল সন্তানকে আনতে। কিন্তু বাড়িতে ফেরার পথে মাইক্রোবাসের সিলিন্ডার বিষ্ফোরণে নিহত হন শফির মা ছেনোয়ারাসহ পরিবারের আরো দু’সদস্য।
শারজাহ প্রবাসী মো.শফি বাংলানিউজকে কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, এমন মৃত্যু যেন শত্রুরও না হয়। কি করুণ মৃত্যু। আমার চোখকে যেন বিশ্বাস করতে পারছি না।
নিজের মাকে চোখের সামনে জলন্ত আগুনে পুড়ে মরতে দেখেছি। আমার জন্যই তিনটা তাজা প্রাণ গেল। কি অধম, পাপী আমি! আক্ষেপ করেন তিনি।
চোখের জল অবিরাম ঝরছে, ভালো করে কথা বলতে পারছেন না শফি। বারবার মুর্চা যাচ্ছেন। দুই ভাই এর মধ্যে শফি বড়। সংসারের হাল ধরার জন্য পাঁচ বছর আগে প্রবাসে পাড়ি জমিয়েছিলেন। মায়ের কান্না থামাতেই আবারে ছুটে এসেছিলেন দেশে। কিন্তু নিজেকেই ভাসতে হলো কান্নার সাগরে।
শফি জানান, সকাল নয়টায় চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে পৌঁছেন তিনি। তারপর সেখান থেকে মাইক্রোবাসে করে বাড়ীর উদ্দেশ্যে রওনা হন। গাড়ীতে সর্বমোট ১৭জন যাত্রী ছিলেন। পৌনে বারটার সময় নাজিরহাট-কাজিরহাট সড়কের সুয়াবিল ইউনিয়নের ব্রিকফিল্ড এলাকায় পৌঁছালে তাদের বহনকারী গাড়িটির সিলিন্ডার বিস্ফোরণ ঘটে।
তিনি বলেন, মুহুর্তের মধ্যেই আগুনের লেলিহান শিখা গাড়ীর চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এরমধ্যে মাইক্রোবাসের সামনে যারা বসেছিলেন তারা হুড়াহুড়ি করে নেমে যেতে পারলেও পিছনে বসা আমার মা, শ্বাশুড়ী ও ভাবী পুড়ে ছাই হয়ে যায়।
সিটের নিচেই ছিল গ্যাস সিলিন্ডার
ছেনুয়ারার নাতনী নাসিমা আক্তার বাংলানিউজকে বলেন, অনেক আনন্দ করে আমরা বিমানবন্দর থেকে বাড়ী ফিরছিলাম। পিছনের সিটে বসা আমার দাদী চালককে বলেছিল যে, সিট মাত্রারিক্ত গরম হয়ে আছে। কিন্তু চালক সেকথা আমলে না নিয়ে বলেছিল সিলিন্ডারের গরম।
তিনি বলেন, ড্রাইভার যদি একটু দেখত তবে এ ধরনের ঘটনা ঘটতো না।
প্রসঙ্গত, ঘটনার পর থেকে গাড়ীর চালক পলাতক রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ২১৪৮ ঘণ্টা, মার্চ ১৭, ২০১৪
** চট্টগ্রামে মাইক্রোবাসের সিলিন্ডার বিস্ফোরণে নিহত ৩