ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

মৃদুল চৌধুরী অপহরণ

র‌্যাবের সম্পৃক্ততার প্রমাণ পায়নি অনুসন্ধান কমিটি

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩৩ ঘণ্টা, মার্চ ১৮, ২০১৪
র‌্যাবের সম্পৃক্ততার প্রমাণ পায়নি অনুসন্ধান কমিটি

চট্টগ্রাম: ধনাঢ্য স্বর্ণ ব্যবসায়ী মৃদুল চৌধুরী অপহরণের সঙ্গে র‌্যাব সদস্যের সম্পৃক্ততার কোন প্রমাণ পায়নি এ ঘটনা অনুসন্ধানে গঠিত কমিটি। কারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে তা-ও অনুসন্ধান করে চিহ্নিত করতে ব্যর্থ হয়েছে কমিটি।



মঙ্গলবার অনুসন্ধান কমিটি তাদের প্রতিবেদন পুলিশ সদর দপ্তরে পাঠিয়েছে। প্রতিবেদনে র‌্যাবের নথি সংরক্ষণ ব্যবস্থায় ত্রুটির সমালোচনা করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।


অনুসন্ধান কমিটির প্রধান ও চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) বনজ কুমার বাংলানিউজকে বলেন, অনুসন্ধানে আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোন সদস্যের অপহরণের ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ততার কোন প্রমাণ পাইনি। কারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে সেটি জানা সম্ভব হয়নি। এ ঘটনায় যে মামলা আছে, তার তদন্তে আশা করছি সব রহস্য উন্মোচিত হবে।

র‌্যাবের চট্টগ্রাম জোনের সাবেক কর্মকর্তা ও বর্তমানে ঢাকায় র‌্যাব-২ এর মেজর রাকিবুল আমিনের বিরুদ্ধে অপহরণের সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগ উঠেছিল। ৮০ ভরি স্বর্ণালংকার লুটের ঘটনায় মেজর রাকিবুল আমিনের বিরুদ্ধে ঢাকার একটি আদালতে মামলা করেছিলেন মৃদুল চৌধুরী। এ ঘটনার জেরে অপহরণ বলে সন্দেহ করেছিল তার পরিবার।

পুলিশের অনুসন্ধান কমিটির কাছে মেজর রাকিবুল আমিন গত ৫ মার্চ নিজের বক্তব্য দেন। এসময় তিনি অপহরণের সঙ্গে তার সম্পৃক্ততার অভিযোগ অস্বীকার করেন।

পুলিশ র‌্যাবের সম্পৃক্ততার অভিযোগ তদন্তে সংস্থাটির চট্টগ্রাম জোনের কার্যালয়ে গিয়ে অনুসন্ধান চালান। এসময় সংস্থার নথিপত্র যাচাইবাছাই করা হয়। তবে মেজর রাকিবুল আমিন বর্তমানে র‌্যাব-২ এ কর্মরত থাকলেও পুলিশের অনুসন্ধান কমিটি সেখানে যাননি।  

পুলিশ সূত্র জানায়, অনুসন্ধান কমিটি তাদের প্রতিবেদনে কয়েক দফা সুপারিশ করেছে। এতে র‌্যাব কার্যালয়ে বিধি অনুযায়ী নথি সংরক্ষণের সুপারিশ করা হয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে।

গত ১ মার্চ পুলিশ সদর দপ্তর থেকে মৃদুল চৌধুরীকে অপহরণের সঙ্গে র‌্যাব কিংবা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অন্য কোন সদস্য জড়িত আছে কিনা তা অনুসন্ধানে একটি কমিটি গঠন করা হয়।

নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) বনজ কুমার মজুমদারকে প্রধান করে গঠিত তিন সদস্যবিশিষ্ট এ কমিটিতে র‌্যাবের চট্টগ্রাম জোনের উপ অধিনায়ক স্কোয়াড্রন লিডার নাজমুল হক এবং চট্টগ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) মোহাম্মদ ইলতুৎমিশকে সদস্য করা হয়।

কমিটির কার্যক্রম শুরুর পর গত ৫ মার্চ একইদিনে তারা অপহরণের শিকার মৃদুল চৌধুরী এবং মেজর রাকিবুল আমিনের বক্তব্য নেন।

পুলিশের অনুসন্ধান কমিটির কাছে লিখিতভাবে দেয়া বক্তব্যে মৃদুল চৌধুরী জানান, অপহরণের পর নির্যাতনের সময় অপহরণকারীরা তিনি কেন র‌্যাবের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন সে বিষয়টি বারবার জানতে চেয়েছেন। তার উপর নির্যাতনের বিষয়টি অপহরণকারীরা উপভোগ করত বলে তার কাছে মনে হয়েছে।

তবে অপহরণকারীদের কাউকে চিনতে না পারলেও তাকে যে স্থানে রাখা হয়েছে তার একটি সম্ভাব্য বর্ণনা দিয়েছিলেন মৃদুল চৌধুরী।

উল্লেখ্য গত ১১ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নগরীর পুরাতন টেলিগ্রাফ রোডে নিজ বাসার সামনে থেকে র‌্যাবের বিরুদ্ধে মামলা করে আলোচিত ধনাঢ্য স্বর্ণ ব্যবসায়ী মৃদুল চৌধুরীকে তুলে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। এসময় তাদের এক আত্মীয় বাধা দেয়ার চেষ্টা করলে দুর্বৃত্তরা নিজেদের র‌্যাব ও ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে দ্রুত ওই স্থান ত্যাগ করে।

গণমাধ্যমে এ ঘটনা নিয়ে তোলপাড় শুরু হওয়ার পর ১৭ ফেব্রুয়ারি ভোরে মৃদুল চৌধুরীকে কুমিল্লা জেলার বুড়িচং থানার কংসনগর বাজারের পাশে ধানক্ষেতে ফেলে রেখে যায় অপহরণকারীরা। সেখান থেকে উদ্ধার হওয়ার পর ১৯ জানুয়ারি তিনি আদালতে সাক্ষী হিসেবে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৬১৪ঘণ্টা, মার্চ ১৮,২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।