চট্টগ্রাম: ‘বর্ষ হয়ে আসে শেষ, দিন হয়ে এলো সমাপন, চৈত্র অবসান/গাহিতে চাহিছে হিয়া পুরাতন ক্লান্ত বরষের/ সর্বশেষ গান’। রোববার শক্তির মহা উৎসের কাছে জীর্ণ পুরাতনকে ভাসিয়ে নেওয়ার প্রণতির মধ্য দিয়ে বিদায় নেবে ১৪২০।
ডিসি হিল
সোমবার ভোর ছয়টায় ক্যাপ্টেন আজিজুল ইসলামের বাঁশির সুরের সঙ্গে বাদ্যের তালে তালে শুরু হবে পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠান। এরপর সম্মিলিত কণ্ঠে ‘এসো হে বৈশাখ’ সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে শুরু হবে অনুষ্ঠানের মূল পর্ব। দুপুর দুইটা পর্যন্ত প্রথম পর্বের অনুষ্ঠানে বিভিন্ন সংগঠনের শিল্পীরা একক ও দলীয়ভাবে আবৃত্তি, নৃত্য ও সঙ্গীত পরিবেশন করবেন। বিকেল তিনটা থেকে একটানা রাত নয়টা পর্যন্ত অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় অংশ চলবে। মোট ৬০টি সংগঠন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করবে।
সম্মিলিত পহেলা বৈশাখ উদযাপন পরিষদের উদ্যোগে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে একক গান পরিবেশন করবেন গিরিজা রাজবর, অপু বর্মণ, প্রদীপ দাশ, মোহাম্মদ মোবিন, কার্ত্তিক মজুমদার, খোকন মালাকার, গায়ত্রী চৌধুরী, নন্দ দুলাল গোস্বামী, প্রিয়াংকা দাশ ও নীলিমা দাশ, হাম্মাদুর রহমান, ফারাহ বিনতে আলম ও ইউসুফ টুটুল প্রমুখ। এছাড়াও, বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে থাকবে লোকশিল্পী ফকির শাহাবুদ্দিনের গান। একক আবৃত্তি করবেন রণজিৎ রক্ষিত, রাশেদ হাসান ও মিলি চৌধুরী প্রমুখ। সাংস্কৃতিক পরিবেশনার বাইরে বৌদ্ধ মন্দির থেকে বোস ব্রাদার্স পর্যন্ত থাকবে ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ মেলা।
সিআরবি
সিআরবির শিরীষতলায় বর্ষ বিদায়ের অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বৈশাখী উৎসব শুরু হয়েছে। পহেলা বৈশাখে প্রতিবারের মতো এবারও এখানকার প্রধান আকর্ষণ সাহাবুদ্দীনের বলীখেলা।
সিআরবিতে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান শুরু হবে সকাল সাড়ে সাতটায় সমবেত কণ্ঠের গান দিয়ে। এ ছাড়া দলীয় পরিবেশনার পাশাপাশি রয়েছে মিহির কানুনগো ও তাঁর দলের সেতার বাদন। গান করবেন তন্বী দত্ত, প্রদীপ দাশ, সুপর্ণা রায়, দৃষ্টি শর্মা, অমিত সেনগুপ্ত, ইউসুফ টুটুল, পাপড়ি ভট্টাচার্য্য, সুজিত রায়, মোস্তফা কামাল, সুবর্ণা রহমান, গীরিজা রাজবর, মোখলেছুর রহমান, শিমুল শীল ও সনজিত আচার্য্য।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
পহেলা বৈশাখের মূল অনুষ্ঠান আয়োজন করা হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে। এছাড়া ক্যাম্পাস জুড়েই থাকবে নানা আয়োজন। আয়োজনের মধ্যে রয়েছে সঙ্গীত, নৃত্য, আদিবাসী ঐতিহ্য উপস্থাপন, ফ্যাশন শো, মুকাভিনয়, ঐতিহ্যবাহী বলীখেলা, লাঠিখেলা, কাবাডি, বউচি খেলা, পুতুলনাচ, গ্রামীণ মেলাসহ নানা আয়োজন।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে সঙ্গীত পরিবেশন করবেন লোকসঙ্গীত শিল্পী ফকির সাহাবুদ্দিন ও খ্যাতনামা ব্যান্ডদল সোলস।
শিল্পকলা একাডেমি
শিক্ষার্থীদের সমবেত সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে সকাল আটটায় বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের প্রভাতী অধিবেশ শুরু হবে। এতে দলীয় নৃত্য পরিবেশন করবে স্কুল অব ফোক ডান্স ও নটরাজ নৃত্যাঙ্গন। একক সংগীত পরিবেশন করবেন চট্টগ্রামের বিশিষ্ট সংগীত শিল্পীরা।
বিকাল পাঁচটায় সংগীত ভবনের পরিবেশনায় সমবেত সংগীতের মধ্য দিয়ে শুরু হবে দ্বিতীয় অধিবেশন। এতে দলীয় নৃত্য পরিবেশন করবে স্কুল অব ওরিয়েন্টাল ডান্স এবং মায়াবী ডান্স একাডেমি। বৃন্দ আবৃত্তি পরিবেশন করবে প্রমা আবৃত্তি সংগঠন। একক সংগীত পরিবেশন করবেন চট্টগ্রামের বিশিষ্ট সংগীত শিল্পীরা। এছাড়াও পরিবেশিত হবে কিশোরগঞ্জ থেকে আগত খোকন বয়াতি ও তার দলের শিল্পীদের পরিবেশনায় পালাগান।
চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব
ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেক মিলনায়তনে ‘মেতে উঠি উৎসবে বৈশাখী আনন্দে’ স্লোগানে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন হবে সকাল সাড়ে নয়টায়। সকাল ১০টায় নারী সাংবাদিকদের সম্মাননা জানানো হবে। সাড়ে ১০টায় অনুষ্ঠিত হবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। দুপুর ১২টায় থাকবে র্যাফেল ড্র।
ফয়’স লেক
ফয়’স লেকের কনকর্ড অ্যামিউজমেন্ট পার্কে নববর্ষের দিন বিকেল তিনটায় রয়েছে বৈশাখী কনসার্ট। এতে গান করবে ব্যান্ডদল সোলস, প্রমিথিউস, রঙ, কণ্ঠশিল্পী আসিফ আকবর, পাওয়ার ভয়েসের বেলী ও আনিকা। অনুষ্ঠান উপস্থাপনায় থাকবেন মীরাক্কেলের জামিল। এ ছাড়া ওয়াটার পার্ক সি-ওয়ার্ল্ডে দিনব্যাপী চলবে ডিজে শো।
পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত
সকালবেলা শুরু হবে বর্ষবরণের দিনব্যাপী অনুষ্ঠান। সূচনা ক্রিয়েশন অ্যান্ড মিডিয়া কমিউনিকেশনের আয়োজনে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলবে সন্ধ্যা পর্যন্ত। আঞ্চলিক গান, ভাটিয়ালি, কবি গানের আয়োজন থাকছে সমুদ্রসৈকতের এ অনুষ্ঠানে।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন
বাটালী রোডের রেলওয়ে হাসপাতাল কলোনি স্কুল মাঠে থাকবে দিনব্যাপী নানা আয়োজন। সকাল ৯টায় অনুষ্ঠান উদ্বোধন করবেন মেয়র মোহাম্মদ মনজুর আলম। এরপর শিক্ষার্থী ও আমন্ত্রিত অতিথিদের অংশগ্রহণে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বৈশাখী মেলা ও পিঠা উৎসব চলবে সন্ধ্যা পর্যন্ত।
লালদিঘী মাঠ
‘সকল অপশক্তি ডিঙিয়ে উন্মীলিত হোক বাংলাদেশ ও বাঙালি সত্তা’ স্লোগানে লালদিঘী মাঠে উৎসব উদযাপন করবে বর্ষ বরণ পরিষদ। সকাল ৭ টায় ছন্দানন্দ সঙ্গীত একাডেমী উদ্বোধনী সংগীতের মাধ্যমে বর্ষবরণের অনুষ্ঠান শুরু হবে। এরপর সংগীত পরিবেশন করবে অভ্যুদয় সঙ্গীতাঙ্গন, নৃত্য পরিবেশন করবেন সৃজনশীল নৃত্যাঙ্গণ, দলীয় পরিবেশনায় থাকবে তানসেন ললিতকলা একাডেমি, অর্চি সাংস্কৃতিক সংগঠন, জয়বাংলা সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী, উপমা সাংস্কৃতিক অঙ্গন। একক নৃত্য পরিবেশন করবেন প্রমা অবন্তী, তন্ময় বড়–য়া, পাপিয়া দে প্রমুখ। সকাল সাড়ে ৯ টায় রবীন্দ্র সঙ্গীত পরিবেশ করবেন গাজী মওদুদুর রহমান, শ্রেয়সী রায়, অনুরিণা চৌধুরী, বনানী শেখর রুদ্র, কান্তা দে, রুম্পা সেন, শ্যামলী পাল, তুলি দাশ গুপ্তা, তন্বী দত্ত প্রমুখ। সকাল সাড়ে ১০ টায় একক আবৃত্তি পরিবেশন করবেন রনজিৎ রক্ষিত, শাওন পান্থ, মিলি চৌধুরী, রাশেদ হাসান, মাঈনুদ্দীন দুলাল, আয়েশা হক শিমু,ফারুক তাহের, দেবাশীষ রুদ্র প্রমুখ। বৃন্দ আবৃত্তি পরিবেশন করবেন প্রমা, উচ্চারক আবৃত্তি কুঞ্জ, ত্রিতরঙ্গ আবৃত্তি দল। বিকেল সাড়ে ৪ টায় স্কুল অব ওরিয়েন্টার ড্যান্সের নৃত্য দিয়ে শুরু হবে অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্ব। দলীয় পরিবেশনায় থাকবে স্মরলিপি সাংস্কৃতিক ফোরাম, গীতধ্বনি, কিডস কালচারাল ইনষ্টিটিউট। সন্ধ্যা ৭টায় নৃত্য পরিবেশন করবে ওড়িশী ও টেগোর ড্যান্স মুভমেন্ট, চট্টগ্রাম। একক গান পরিবেশন করবেন সুজিত রায়, আব্দুর রহিম, বাণী কুমার চৌধুরী, মোস্তফা কামাল, সুব্রত দাশ অনুজ, সুতপা চৌধুরী মুমু, সুবর্ণা রহমান প্রমুখ।
আইইবি
সংগঠনের উদ্যোগে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানমালার মধ্যে রয়েছে চিরন্তন বাঙালি সাজ, প্রকৌশলী গৃহিনী ও কন্যা সন্তানদের চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা, মেহেদী অনুষ্ঠান, প্রাচীন পুঁথি পাঠ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, লোকজ গান ও পুরষ্কার বিতরণ। এছাড়াও রয়েছে নানান ধরণের দেশীয় খাদ্য, পিঠা-পুলি এবং বুটিক মেলা।
বাওয়া উচ্চবিদ্যালয়
বাংলা বর্ষবিদায় ও বরণ সম্মিলন পরিষদের উদ্যোগে বিদ্যালয় মাঠে সন্ধ্যা ছয়টায় অনুষ্ঠান শুরু হবে। নববর্ষ আবাহনের মাধ্যমে শুরু হওয়া আয়োজনে রবীন্দ্রসংগীত পরিবেশন করবেন সুমা রায়। থাকবে বাংলাদেশ একাডেমি অব ফাইন আটর্সের দলীয় নৃত্য। লালনগীতি করবেন রোখসানা রূপসা ও কুষ্টিয়ার শেখ হেমায়েত।
ফুলকি
গত শুক্রবার তিন দিনব্যাপী ছোটদের বৈশাখী মেলা শুরু হয়েছে। পহেলা বৈশাখ সকাল নয়টা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত মেলায় থাকবে বিভিন্ন সংগঠনের সাংস্কৃতিক পরিবেশনা।
চট্টগ্রাম ফটোগ্রাফিক সোসাইটি
ডিসি হিলের বিপরীতে পাহাড়িকা স্কুল সংলগ্ন সড়কে ৩৫ জন শিল্পীর ৫০টি ছবি প্রদর্শন করা হবে। ‘আবহমান বাংলা’ শীর্ষক এ প্রদর্শনীর উদ্বোধন করবেন প্রত্যয় একাত্তর সভাপতি সাইফুদ্দিন খালেদ বাহার।
দিবাকর ক্লাব
নাচ, গান, আবৃত্তি, অভিনয়, বায়োস্কপ, বানরের নাচ, সাপের খেলা গ্রামীণ ঐতিহ্যের নানা অনুষঙ্গ নিয়ে দুইদিন ব্যাপী বর্ষবরণ ও বৈশাখী উৎসব’র আয়োজন করেছে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন দিবাকর ক্লাব।
প্রতিবছরের মতো লতিফপুর আবদুল জলিল উচ্চ বিদ্যালয় ও লতিফপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে সোম ও মঙ্গলবার এ মেলা অনুষ্ঠিত হবে।
বাংলাদেশ সময় ১৫৪৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৩, ২০১৪