ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

চিটাগাং চেম্বার সভাপতি

শিল্পায়ন ও ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণে বাজেটে বাস্তবমুখী পদক্ষেপ চাই

. | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০১৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৪, ২০১৪
শিল্পায়ন ও ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণে বাজেটে বাস্তবমুখী পদক্ষেপ চাই ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

চট্টগ্রাম: আসন্ন বাজেটে শিল্পায়ন ও ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণের লক্ষ্যে বাস্তবমুখী পদক্ষেপ কামনা করেছেন চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (সিসিসিআই) সভাপতি মাহবুবুল আলম।

বাজেটে তিনি আমদানি শুল্কহারের স্তর পুনর্বিন্যাসের প্রস্তাব দেন।



তিনি বলেন, নির্মাণ সামগ্রীর দাম স্থিতিশীল পর্যায়ে রাখার জন্য এম এস বিলেট এর শুল্কহার টন প্রতি ৩৫’শ টাকা থেকে কমিয়ে ১৫’শ টাকা। এআইটি প্রতি টনে ৮’শ টাকা কমিয়ে শূন্য এবং এটিভি ৪ শতাংশ প্রত্যাহারের প্রস্তাব করেন।


চেম্বার সভাপতি বলেন, এম এস বিলেট রড, লোহা, ইস্পাত সামগ্রীর কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এম এস বিলেট নির্মাণ শিল্পকে উৎসাহিত করে। এম এস বিলেটের দাম কমলে নির্মাণ সামগ্রীর দাম কমে যাবে। শিপব্রেকিং কার্যত নিরুৎসাহিত হবে। পরিবেশের উপর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।

চিটাগাং চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম প্রাক বাজেট নিয়ে বাংলানিউজের সঙ্গে একান্ত আলাপে এসব কথা বলেন।

মোটর সাইকেল, কার, পিক আপ আমদানিতে শুল্ক হ্রাস ও ট্রাক-বাসের উৎপাদনে প্রণোদনা প্রদানের প্রস্তাব জানিয়ে চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, পরিবেশবান্ধব, সহজলভ্য, বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ী, জ্বালানী সাশ্রয়ী ও সর্বত্রগামী ছোট সিসির মটরকার এদেশে খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে যা খুবই উপযোগী। জনমূখী ও জনস্বার্থে আমদানির বেলায় বৃহত্তর মধ্যবিত্ত শ্রেণী ও পেশাজীবীদের জন্য এই গাড়িগুলোকে ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে আনতে হলে শুল্ক কমানো উচিত বলে আমরা মনে করি। বর্তমানে আমদানি শুল্ক ২৫% থেকে কমিয়ে ১২% এ এবং সম্পূরক শুল্ক সম্পূর্ণভাবে রহিত করতে হবে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির সঙ্গে পরিবহন সেক্টরে মোটরসাইকেলের অবদান অপরিসীম। জীবনযাত্রার মানবৃদ্ধি ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কারণে মোটর সাইকেলের চাহিদা ১৮-২০% হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং এর ধারাবাহিকতায় স্থানীয় পর্যায়ে মোটরসাইকেল তৈরী হচ্ছে।

স্থানীয় শিল্প সংরক্ষনের স্বার্থে ও মধ্যবিত্ত জনগণের একান্ত নিজস্ব বাহনের মূল্য ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখার জন্য সিকেডি পর্যায়ে ফোর স্ট্রোক মোটর সাইকেল আমদানির উপর আমদানি শুল্ক হ্রাস করে সিবিউ গাড়ীর উপর অধিকতর হারে শুল্ক আরোপ করে সিকেডি এবং সিবিউর শুল্কের তারতম্য নূন্যতম ৪০শতাংশ থাকা উচিত। সম্পূরক শুল্ক ৩০শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০শতাংশ করার জন্য প্রস্তাব করছি।

চেম্বার সভাপতি বলেন, বর্তমানে পিক-আপ সিকেডি এবং সিবিইউ এর শুল্ক কর সমান। অন্যদিকে সিকেডির ক্ষেত্রে উৎপাদনে মূল্য সংযোজন কর ১৫ শতাংশ থাকার ফলে সংযোজিত পিকআপের মূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে বাণিজ্যিকভাবে আমদানিকৃত সিবিইউ পণ্যের সাথে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা অত্যন্ত কষ্টকর হচ্ছে। তাই বর্তমানে আমদানি শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ এবং উৎপাদন পর্যায়ে মূল্য সংযোজন কর ১৫ শতাংশ রহিত করার প্রস্তাব করছি।

তিনি বলেন, বর্তমানে কিছু উদ্যোক্তা স্থানীয় পর্যায়ে বাস ও ট্রাকের কিছু যন্ত্রাংশ উৎপাদন করছে। বিশেষ করে ট্রাকের ক্ষেত্রে কেবিনসহ অন্যান্য আইটেমসমূহ তৈরী করছে এবং উল্লেখযোগ্য হারে স্থানীয় উপকরণ সংযোজিত করে তথা ভ্যালু এডিশন করে চলছে।

বর্তমানে স্থানীয় পর্যায়ে মোটরসাইকেল উৎপাদনের ক্ষেত্রে সরকার উৎপাদনকারীদেরকে যে প্রণোদনা দিয়েছে তা যদি বাস ও ট্রাকের যন্ত্রাংশ স্থানীয় পর্যায়ে উৎপাদনকারীদেরকে ওই সুবিধা প্রদান করা হয় তাহলে স্থানীয় উপকরণ সংযোজনের হার অনেক বৃদ্ধি পাবে। তিনি ৭ আসন বিশিষ্ট গাড়ীর জন্য নতুন এইচএসকোড সংযোজনেরও প্রস্তাব করেন।

পোষাক শিল্পের আমদানিকৃত কাঁচামাল পুনঃরপ্তানিতে জটিলতা নিরসন প্রসঙ্গে চেম্বার সভাপতি বলেন, শতভাগ রপ্তানীমূখী শিল্প হিসেবে আমাদের পোষাক শিল্পের আমদানিকৃত কাঁচামাল বিশেষ করে কাপড় কোন কারণে অগ্রহণযোগ্য বিবেচিত হলে প্রয়োজনীয় শর্ত ও আনুষ্ঠানিকতা পূরণ সাপেক্ষে এর পুনঃ রপ্তানী প্রক্রিয়া সহজীকরণ ও দ্রুত করার লক্ষ্যে ব্যবস্থা গ্রহণ প্রয়োজন। এ ধরণের পুনঃ রপ্তানীর ক্ষেত্রে আইনগত বা অন্যকোন জটিলতা অথবা বিলম্বের কারণ থাকলে তা নিরসনের ব্যবস্থা নেওয়ার প্রয়োজনে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের গোচরে আনয়ন করতে হবে।  

চেম্বার সভাপতি শতভাগ রপ্তানিমুখী কার্টুন ও একসেসরিজ খাতের পলিব্যাগ ও হ্যাঙ্গার উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের জন্য তাদের আমদানিকৃত কাঁচামাল খালাস করতে ১০শতাংশ ব্যাংক গ্যারান্টি প্রদানের নিয়মটি প্রত্যাহার করার সুপারিশ করেন।

দেশীয় কাঁচামাল ভিত্তিক শিল্পগুলোকে বিশেষ উৎসাহ প্রদানের দাবি জানান চেম্বার সভাপতি। তিনি বলেন,‘সম্পূর্ণ দেশীয় কাঁচামাল ভিত্তিক শিল্পকে আমদানিকৃত কাঁচামাল ভিত্তিক একই রকম শিল্পের চেয়ে অধিকতর সুবিধা এবং প্রণোদনা প্রদান করা উচিত। এ ক্ষেত্রে দেশীয় কাঁচামাল ভিত্তিক রপ্তানী শিল্পকে আরো বেশী প্রণোদনা  দেয়া যেতে পারে। এতে করে দেশীয় কাঁচামাল ভিত্তিক শিল্পায়ন তথা রপ্তানী গতিশীলতা লাভ করবে।

এছাড়া তিনি লুব্রিকেন্ট অয়েল, ইন্ডাস্ট্রিয়াল র ম্যাটেরিয়াল, থ্রেটেড স্ক্রু আমদানিতে শুল্ক হার কমানো,চা আমদানির উপর অতিরিক্ত শুল্ক প্রত্যাহার, গ্রীজ এর সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন।

চট্টগ্রামের এ ব্যবসায়ী নেতা বলেন,‘বাংলাদেশের ঔষধ শিল্পের অবকাঠামো ও ভিত্তি বর্তমানে খুবই শক্তিশালী এবং বিদেশেও রপ্তানী করছে। কিন্তু ঔষধের কাঁচামাল যা এপিআই নামে পরিচিত, তা বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। ২০১৬ সালের পরে এই  আমদানি সুযোগ রহিত হবে। তাই বর্তমানে ডব্লিউটিও এর আওতায় প্রাপ্ত সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ঔষধ রপ্তানিকে ত্বরান্বিত করতে এবং ২০১৬ সালের পর বাংলাদেশ যাতে স্থানীয়ভাবেই ঔষধের প্রয়োজনীয় কাঁচামাল সংগ্রহ করতে পারে সেজন্য চট্টগ্রামে জরুরী ভিত্তিতে একটি এপিআই পার্ক করতে হবে এবং সরকারও এ বিষয়ে সম্মত। তাই কাল বিলম্ব না করে চট্টগ্রামে এপিআই পার্ক এবং ঔষধের মান নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে সকল কোম্পানীর জন্য একটি কমন সুবিধা সম্বলিত ল্যাবরেটরি স্থাপনের করা উচিত। ’

চেম্বার সভাপতি পলিস্টার সূতার কাঁচামাল পেটচিপস্ এর উপর শুল্কহার শূণ্য হারে নির্ধারণ ও দেশে উৎপাদিত পলিষ্টার সুতা বিক্রির উপর সম্পূর্ণরূপে ভ্যাট প্রত্যাহার, প্রচলিত এডভান্স ট্রেডভ্যাট (এটিভি) কর্তন পদ্ধতি পরিবর্তন, একই পণ্যের বিক্রির ক্ষেত্রে দ্বৈত মূসক আদায় রহিত করার প্রস্তাব করেন।

এ ছাড়া সিআর কয়েলের এর উৎপাদন পর্যায়ে মূসক আরোপের জন্য টনপ্রতি আট হাজার টাকায় ট্যারিফ মূল্য ধার্য করা, ক্যাপিটাল মেশিনারী ও কাঁচামাল আমদানির মূসক অব্যাহতি বহাল রাখা, থার্ড পার্টি ম্যানুফ্যাকচারিং এর ক্ষেত্রে উৎসে মূসক ও অগ্রিম আয়কর কর্তনের সুনির্দিষ্ট বিধান করা, বিলাসবহুল রেষ্টুরেন্ট এবং শপিংমলকে মূসকের আওতায় আনা, শিল্প কারখানা স্থাপনের সময় নির্মাণ কাজের জন্য প্রদেয় মুল্যের উপর মূসক হ্রাস করা, ট্যাক্স প্রদানে উৎসাহিত করতে স্টীল ইন্ডাষ্ট্রির এই স্বীকৃত ৬% ওয়েস্টেজ বিক্রি করার সময় কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমতি নেয়ার প্রথা বাতিল এবং কোন প্রকার মূসক আদায় না করাসহ বিভিন্ন প্রস্তাবের কথা জানান।

বাংলাদেশ সময়: ১৯২৬ ঘন্টা, এপ্রিল ২৪, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।