ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ

জামায়াতের তোফায়েলের তথ্যে আ’লীগের শফি গ্রেপ্তার

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮০৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২১, ২০১৪
জামায়াতের তোফায়েলের তথ্যে আ’লীগের শফি গ্রেপ্তার ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

চট্টগ্রাম: বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান ও জামায়াত নেতা তোফায়েল আহমেদের মিথ্যা তথ্যে চট্টগ্রাম নগর গোয়েন্দা পুলিশ শফিউল্লাহকে গ্রেপ্তার করেছে বলে অভিযোগ করেছে আওয়ামী লীগ।

শফিউল্লাহকে মিথ্যা মামলা থেকে অব্যাহতি এবং নি:শর্ত মুক্তি দেয়ার দাবিতে রোববার বিকেলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগ এ দাবি জানিয়েছে।



শফিউল্লাহ বর্তমানে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানব উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক। মায়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদি সংগঠন রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও) এবং রোহিঙ্গা লীগ ফর ডেমোক্রেসি বার্মা‘র (আরএলডিবি) সঙ্গে শফিউল্লাহ’র সম্পৃক্তরা অভিযোগে অভিযুক্ত শফিউল্লাহ স্থানীয়ভাবে ‘আরএসও শফি’ নামে পরিচিত।


গত ২৩ নভেম্বর নগরীর হোটেল লর্ডস ইন থেকে শফিউল্লাহসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে নগর গোয়েন্দা পুলিশ। এদের মধ্যে একজন পাকিস্তানি নাগরিকও আছেন যিনি গ্লোবাল রোহিঙ্গা সেন্টার (জিআরসি) নামে নেদারল্যান্ডভিত্তিক একটি বেসরকারি সংস্থার পরিচালক।

আর নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগ যে তোফায়েলের বিরুদ্ধে অভিযোগের তীর ছুঁড়েছে তিনি রামুতে বৌদ্ধ মন্দির পুড়িয়ে দেয়ার অন্যতম হোতা হিসেবে অভিযুক্ত। তার বিরুদ্ধেও মায়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদি রোহিঙ্গাদের আশ্রয় ও মদদ দেয়ার অভিযোগ আছে।

২০১৪ সালে শফিউল্লাহকে হারিয়ে তোফায়েল নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।

শফিউল্লাহকে মুক্তির দাবিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তছলিম ইকবাল চৌধুরী।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করতে জামায়াত-শিবির ও যুদ্ধাপরাধীদের দোসর, শান্তিচুক্তি বিরোধী তোফায়েল আহমেদের দেয়া মিথ্যা অভিযোগের ভিত্তিতে নগর গোয়েন্দা পুলিশ শফিউল্লাহকে আটক করেছে। তাকে গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে সরকার বিরোধি শক্তির ষড়যন্ত্রমূলক এজেন্ডা বাস্তবায়নে সহায়তকরা হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়।

লিখিত বক্তব্যে চট্টগ্রাম নগর গোয়েন্দা পুলিশকে এ ধরনের গর্হিত, বিভ্রান্তিকর ও বিব্রতকর কার্যকলাপ থেকে বিরত থাকারও আহ্বান জানানো হয়।

এক প্রশ্নের জবাবে তছলিম ইকবাল চৌধুরী বলেন, পুলিশ ও প্রশাসনের ভেতরে সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলার জন্য অনেকে ঘাপটি মেরে আছেন। সরকারের বিরুদ্ধ চক্রটিই ভুল তথ্যের উপর ভিত্তি করে শফিউল্লাহকে গ্রেপ্তার করেছে।

পুলিশ কিংবা প্রশাসনের ভেতরের সরকার বিরোধি চক্রটিকে চিহ্নিত করতে পেরেছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেটি সাংবাদিকরা তদন্ত করলেই জানতে পারবেন।

তোফায়েলের তথ্যে শফিউল্লাহকে গ্রেপ্তারের অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ কমিশনার কুসুম দেওয়ান বাংলানিউজকে বলেন, এটি পুরোপুরি মিথ্যা। পুলিশ কমিশনার মহোদয় অনুমতি দিলে আমরা এ বিষয়ে আমাদের সুনির্দিষ্ট বক্তব্য তুলে ধরব।

উগ্রপন্থী রোহিঙ্গাদের সঙ্গে শফিউল্লাহ’র সম্পর্কের বিষয়ে জানতে চাইলে তছলিম ইকবাল বলেন, এটি সরকার বিরোধী লোকজনের প্রচারণা। অনেক যুদ্ধ, সংগ্রাম মোকাবেলা করে আমাদের নাইক্ষ্যংছড়িতে রাজনীতি করতে হয়। এখানে সরকারের বিরোধিরা অনেক বেশি সক্রিয়।

তিনি বলেন, কক্সবাজারে কিংবা বান্দরবানে যারা রাজনীতি করেন তাদের সঙ্গে রোহিঙ্গাদের কিংবা আরএসও’র সম্পৃক্ততার কথা সেখানকার পত্রিকায় সবসময় লেখা হয়। কিন্তু বিষয়গুলো আদৌ সত্য নয়।

একই প্রশ্নের জবাবে উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সু সু মং মারমা বলেন, রোহিঙ্গারা মায়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদি। মায়ানমার বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী অধ্যুষিত দেশ। নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগ কিংবা ছাত্রলীগে আমরা বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মারমা, চাক, মগ, ম্রো চার জাতির মানুষও আছি। শফিউল্লাহ রোহিঙ্গাদের সঙ্গে থাকলে আমরা বৌদ্ধ হিসেবে তার মুক্তি চাইতাম না।

রোহিঙ্গা সংগঠনের পরিচালক পাক নাগরিকের সঙ্গে হোটেলে কেন ছিলেন শফিউল্লাহ, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, উনি ব্যবসায়িক কারণে হোটেলে গিয়েছিলেন। সেখানে তিনি ওইদিন সকালে গিয়েছিলেন। তার নামে হোটেলে কোন রুম বুকিং ছিলনা।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে শফিউল্লাহকে নিরাপরাধ আওয়ামী পরিবারের সদস্য উল্লেখ করে বলা হয়, তাকে কৃত্রিমভাবে জঙ্গি বানিয়ে সরকারকে বিব্রত করা হয়েছে এবং সরকার বিরোধি শক্তিকে খুশি করা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বাহাইন মারমা, উপদেষ্টা ট্রা লং মারমা, যুগ্ম সম্পাদক মো.ইমরান, সাংগঠনিক সম্পাদক আজগর আলী, শ্রম বিষয়ক সম্পাদক মতিলাল সূত্রধর, উপজেলা মহিলা লীগের সভানেত্রী জহুরা বেগম, উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হোসাইন এবং দুছড়ি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হোসেন।

দু’দফা রিমাণ্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের পর গ্রেপ্তার হওয়া শফিউল্লাহসহ চারজন গত ৯ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের একটি আদালত থেকে জামিন পান। জামিন পাওয়া বাকি তিনজন হল, আব্দুল মজিদ (৩০), ছালামত উল্লাহ (৪৫), এবং মোহাম্মদ কবির আমিন (৫০)।

তবে একইদিন তাদের ঢাকার লালবাগ থানায় সন্ত্রাস বিরোধী আইনে দায়ের হওয়া একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর ফলে মুক্তি পাননি তারা।

গ্রেপ্তার হওয়া পাকিস্তানের নাগরিক মোহাম্মদ আলমের (৪৫) অবশ্য এ পর্যন্ত জামিন মেলেনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৮০৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২১, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।