চট্টগ্রাম: তারেক রহমানকে লন্ডন থেকে দেশে ফিরিয়ে আনা বিচারের মুখোমুখি না করা পর্যন্ত রাজপথে থাকার ঘোষণা দিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধারা। একই সঙ্গে তারেকের পক্ষে কোন কর্মসূচী নিয়ে কেউ মাঠে নামলে তাদের প্রতিহত করারও ঘোষণা দিয়েছেন একাত্তরের রণাঙ্গণের এ বীর যোদ্ধারা।
সোমবার সকালে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত এক মানববন্ধনে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কেন্দ্রিয় কমান্ড কাউন্সিলের চেয়ারম্যান অবরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল হেলাল মোর্শেদ বীরবিক্রম মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষ থেকে এসব ঘোষণা দেন।
সম্প্রতি লন্ডনে বিজয় দিবসের এক সভায় বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারপাসন তারেক রহমান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানকে পাকবন্ধু ও রাজাকার বলে অভিহিত করেন।
মানববন্ধনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে হেলাল মোর্শেদ বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধাদের রাজাকার-আলবদর ও তাদের দোসররা ভারতের চর, হিন্দু-মালাউন বলত। আর এখন তারেক জিয়া বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ধৃষ্টতাপূর্ণ বক্তব্য দিচ্ছেন যা মুখে আনাও পাপ।
তিনি বলেন, আমরা মুক্তিযোদ্ধারা কখনও তারেক রহমান, তার মা খালেদা জিয়া, বাবা সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান কিংবা তার স্ত্রী-সন্তান নিয়ে কটুক্তি করিনি। কখনও কোন অশালীন বক্তব্য দিইনি। অথচ তারেক রহমান মুক্তিযোদ্ধাদের পিতা বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটুক্তি করছেন। এ ধরনের বক্তব্য যিনি দিতে পারেন, তিনি বাংলাদেশের মানুষ হতে পারনে না।
তিনি বলেন, দেশে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দল একটি ষড়যন্ত্রকারী সংগঠন হিসেবে গড়ে উঠছে যার নেতা তারেক রহমান। শুনেছি, ছাত্রদল তারেক রহমানের পক্ষে রাস্তায় নামবে। আমি নির্দেশ দিচ্ছি, তারেক রহমানের পক্ষে ছাত্রদল কিংবা ১৮ দল যারাই মাঠে নামবে তাদের রাজপথে প্রতিহত করতে হবে। তাদের কাউকে আমরা রাস্তায় নামতে দেবনা।
হেলাল মোর্শেদ বলেন, আমাদের সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে গেছে। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ধৃষ্টতাপূর্ণ বক্তব্যের জন্য তারেক রহমানকে চরম মূল্য দিতে হবে। তাকে অবিলম্বে দেশে ফিরিয়ে এনে রাষ্ট্রদ্রোহের শাস্তি দিতে হবে। তারেকের বিচার না হওয়া পর্যন্ত আমরা মুক্তিযোদ্ধারা বিভিন্ন কর্মসূচী নিয়ে রাজপথে থাকব।
মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের মহাসচিব এমদাদ হোসেন মতিন বলেন, ৭ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে তারেক জিয়াকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। আমরা মুক্তিযোদ্ধারা আজ দেশব্যাপি জেলা পর্যায়ে বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করছি। তারেক জিয়াকে অবিলম্বে ফিরিয়ে না আনলে আন্দোলন উপজেলা থেকে ইউনিয়ন পর্যায়ে ছড়িয়ে দেয়া হবে।
মুক্তিযোদ্ধা সংসদের জেলা ইউনিট কমান্ডার মো. সাহাব উদ্দিন বলেন, বঙ্গবন্ধু আমাদের জাতির পিতা। তিনি শুধু মুক্তিযোদ্ধাদের পিতা নন। তিনি সারা বাঙালি জাতির জনক। তাকে নিয়ে কটুক্তি করার স্পর্ধা দেখিয়েছেন তারেক জিয়া। তার মত কুলাঙ্গারের বিচার বাংলার মাটিতে হবেই হবে।
মুক্তিযুদ্ধকালীন গেরিলা কমান্ডার শাহআলম বলেন, তারেক জিয়া শুধু বঙ্গবন্ধুর উপর আক্রমণ করেননি, তিনি বাঙালি জাতির উপর আক্রমণ করেছেন। এই তারেক জিয়াই একদিন বলেছিল জামায়াত বিএনপির যমজ ভাই। যে স্বাধীনতা বিরোধী জামায়াতকে ভাই মনে করে তার মুখ দিয়ে এ ধরনের বক্তব্য আসবে এটা অস্বাভাবিক কিছু নয়।
মানববন্ধনে আরও বক্তব্য রাখেন মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কেন্দ্রীয় কমান্ডের ভাইস চেয়ারম্যান এম এ মরতুজা, মহানগর ইউনিটের কমান্ডার মোজাফফর আহমেদ, মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলার সাবেক মহাসচিব বদিউল আলম, জেলা ইউনিটের ডেপুটি কমান্ডার মাহবুবুল আলম চৌধুরী ও সরওয়ার কামাল দুলু, রেল কমান্ডের কমান্ডার মো.লোকমান, প্রাতিষ্ঠানিক কমান্ডের আহ্বায়ক ফজল আহমেদ, মহানগর ইউনিটের ডেপুটি কমান্ডার মোহাম্মদ সৈয়দ।
মানববন্ধন শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল প্রেসক্লাবের সামনে থেকে জামালখান, চেরাগি পাহাড়, মোমিন রোড ঘুরে আন্দরকিল্লায় গিয়ে শেষ হয়। এরপর জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বরাবরে স্মারকলিপি দেয় জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ।
মানববন্ধনে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের বিভিন্ন উপজেলা কমান্ডের নেতৃবৃন্দ, গেরিলা, সাংষ্কৃতিক, নৌ, রেল ইউনিটের কমান্ডের নেতৃবৃন্দ এবং আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডসহ আরও কয়েকটি সংগঠন সংহতি প্রকাশ করে অংশ নেয়।
বাংলাদেশ সময়: ১২২১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২২,২০১৪