চট্টগ্রাম: এবার নৌ-মন্ত্রীর উপস্থিতিতেই চট্টগ্রাম ও চট্টগ্রাম বন্দরের বিদ্বেষী মনোভাবের অভিযোগ তুলেছেন নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী।
মঙ্গলবার বিকেলে বন্দর উপদেষ্টা কমিটির নবম সভায় মহিউদ্দিন চৌধুরী বলেন, বিদ্বেষী মনোভাবের কারণেই চট্টগ্রাম বন্দরের টাকায় পায়রা বন্দর করা হচ্ছে।
নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খানের সভাপতিত্বে উপদেষ্টা কমিটির বৈঠক চট্টগ্রাম বন্দরের প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে অনুষ্ঠিত হয়।
বন্দরের বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্ছার মহিউদ্দিন চৌধুরী বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরকে তিলে তিলে নিঃশেষ করে দেওয়ার ষড়যন্ত্র পায়রা বন্দর। দেশের প্রধান এই সমুদ্র বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধি, অবকাঠামো উন্নয়ন ও কর্ণফুলী ড্রেজিং করা হচ্ছে না। অথচ এই বন্দরের টাকায় আরেকটি বন্দর করা হচ্ছে।
তিনি বলেন,‘চট্টগ্রাম ও চট্টগ্রাম বন্দরের প্রতি বিদ্বেষী মনোভাব থেকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। ‘‘‘’
চট্টগ্রাম বন্দরের ১৩টি অনিয়ম দুর্নীতি অভিযোগ তুলে ধরে দুর্নীতি বন্ধ করে সঠিকভাবে বন্দর পরিচালনার ব্যবস্থা করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, দুর্নীতি বন্ধ হলে চট্টগ্রাম বন্দর সঠিকভাবে চলবে।
এদিকে চট্টগ্রাম বন্দরের পরিধি বাড়ানোর সুযোগ থাকলেও তা না করে পায়রা বন্দর তৈরি করার সিদ্ধান্তের বিরোধীতা করেছেন সংসদ সদস্য মাঈনুদ্দিন খান বাদল।
তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের সন্দ্বীপ ও মিরসরাই চ্যানেলে পরিধি বাড়ানোর সুযোগ আছে। এসব এলাকা সম্পূর্ণ হলে অন্যত্র আরেকটি বন্দর করা যায়। কিন্তু এখানের সুযোগ কাজে না লাগিয়ে অন্য একটি বন্দর করা যৌক্তিক নয়।
এনসিটি নিয়ে ব্যবসায়ীদের ক্ষোভ:
নির্মাণের সাত বছর পরও চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনাল(এনসিটি) চালু না করায় বৈঠকে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ব্যবসায়ীরা।
শিগগির এনসিটি চালুর দাবি জানিয়েছেন বন্দর উপদেষ্টা কমিটির সদস্য সাংসদ শামসুল হক। এছাড়া বন্দরের উন্নয়নে কাজ করারও দাবি জানান তিনি।
এনসিটি চালু না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বিজিএমইএর সাবেক প্রথম সহসভাপতি নাছির উদ্দিন চৌধুরী বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের ৭০০ কোটি টাকায় এটি নির্মাণ করা হয়েছে। অথচ বেসরকারি কোন প্রতিষ্ঠান হলে এতোদিনে কমপক্ষে ১৪শ কোটি টাকা আয় করতো। কেবল সরকারি টাকা বলেই এসবের কোন জবাবদিহিতা নেই।
চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম দ্রুত এনসিটি চালুর দাবি জানিয়ে বলেন, দিনদিন ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়লেও বন্দরের সক্ষমতা সে অনুযায়ী বাড়ছে না।
সাংবাদিকদের বের হয়ে যাওয়ার অনুরোধ:
মঙ্গলবার বিকেলে তিনটায় চট্টগ্রাম বন্দরের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে উপদেষ্টা কমিটির বৈঠক শুরু হওয়া কথা। সভার সংবাদ কাভার করতে বন্দরের পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের আমন্ত্রণ জানানো হয়।
যাতায়াতের সুবিধার্তে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে থেকে বন্দরের নিজস্ব গাড়িতে করে সাংবাদিকদের নিয়ে যাওয়া হয়। সভার শুরুর আগেই সভাস্থলে যান অনেক সাংবাদিক।
বিষয়বস্তু জানানোর পর মূল সভা শুরুর আগে হঠাৎ করেই সাংবাদিকদের বের হয়ে যাওয়ার অনুরোধ করেন সভার সভাপতি ও নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান। ডেকে নিয়ে বের হয়ে যাওয়ার অনুরোধ করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন উপস্থিত সাংবাদিকরা।
বৈঠকে উপদেষ্টা কমিটির সদস্য সাংসদ মাইনুদ্দিন খান বাদল, শামসুল হক, এম এ লতিফ, চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল নিজাম উদ্দিন আহমেদ, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বারের সভাপতি খলিলুর রহমান, চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম, বিজিএমইএর সাবেক প্রথম সহসভাপতি নাছির উদ্দিন চৌধুরী, সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি একেএম আকতার হোসেন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
এছাড়া চট্টগ্রাম বন্দরের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও বন্দর ব্যবহারকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা সভায় উপস্থিত ছিলেন।
** বন্দরের দুর্নীতি তদন্ত চলবে আইনি প্রক্রিয়ায়: নৌ-মন্ত্রী
বাংলাদেশ সময়: ২১৩০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৩, ২০১৪