ঢাকা, শনিবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

নেতৃত্ব ধরে রাখতে মরিয়া বন্দর সিবিএ সভাপতি-সম্পাদক

মো.মহিউদ্দিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩০০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৫, ২০১৪
নেতৃত্ব ধরে রাখতে মরিয়া বন্দর সিবিএ সভাপতি-সম্পাদক ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম (ফাইল ফটো)

চট্টগ্রাম: চলতি বছরের ১৩ ডিসেম্বর অবসরে গেছেন চট্টগ্রাম বন্দর কর্মচারী পরিষদের সভাপতি মমতাজ উদ্দিন। ৩০ ডিসেম্বর যাচ্ছেন সাধারণ সম্পাদক ওয়াহিদুল্লাহ সরকার।



বিগত পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে এক সঙ্গে কাজ করে এসেছেন সংগঠনের প্রধান দুই কর্ণধার। কিন্তু চাকরিতে থেকে অবসর নেওয়ার কিছুদিন আগে থেকে দ্বন্দ্বে জড়ান তারা।
 

সভাপতি নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান ও বন্দর চেয়ারম্যানের পক্ষে অবস্থান নিলেও নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর পক্ষে রয়েছেন সাধারণ সম্পাদক।

তবে এই দ্বন্দ্ব লোক দেখানো আখ্যা দিয়ে বন্দর সিবিএ নেতা ও কর্মচারীরা বলছেন, অস্থিরতা সৃষ্টি করে নিজেদের অবস্থান প্রমাণ দেওয়ার জন্য এ কৌশল বেছে নিয়েছেন তারা। উপরে দ্বন্দ্বে জড়ালেও মূলত তারা স্বার্থের জায়গায় এক।

দুইজনের মধ্যে কোন বিরোধ নেই বলে স্বীকার করেছেন সাধারণ সম্পাদক ওয়াহিদুল্লাহ সরকার। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, বন্দরে সাইফ পাওয়ারটেক লিমিটেড’র দুর্নীতির প্রতিবাদ করছেন নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মহিউদ্দিন চৌধুরী। আমি তার সঙ্গে রয়েছি।

সভাপতি সাহেব নৌ-মন্ত্রী ও বন্দর চেয়ারম্যানের পক্ষে কথা বলছেন। এছাড়া আমাদের মধ্যে অন্য কোন দ্বন্দ্ব বা বিরোধ নেই।

বন্দর কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিগত সময়ে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক এক সঙ্গে থেকে কাজ করেছেন। এসময় তারা নিয়োগ বাণিজ্য, পদোন্নতি, বদলি, বাসা বরাদ্দ বাণিজ্য করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।

তখন এসব বিষয়ে দু’জনই এক থাকাতে প্রতিবাদ করেও কোন লাভ হয়নি। অবসরে যাওয়ার বছর আগেও তারা মন্ত্রী ও বন্দর চেয়ারম্যানের আশির্বাদপুষ্ট হয়ে এসব কাজ করে গেছেন।   কিন্তু  অবসরে যাওয়ার আগে হঠাৎ করেই বিরোধে জড়িয়ে পড়েন দু’জন। এই দ্বন্দ্বে রহস্য দেখছেন খোদ তাদের কাছের নেতা-কর্মীরা।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের দ্বন্দ্ব মূলত অস্থিরতা সৃষ্টি করতে। কারণ সিবিএ নেতারা দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়লে নতুন নের্তৃত্ব নির্বাচন নিয়ে চিন্তা করবে না। পাশপাশি কর্তৃপক্ষ মনে করবে যোগ্য কোন নেতা সৃষ্টি হয়নি। এসবের মধ্যে দায়িত্ব পালন করে যেতে পারবেন তারা।

সূত্র জানায়, অবসরে গেলেও পদ আঁকড়ে রাখতে বিভিন্নভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। পদে থাকার জন্য মন্ত্রী ও বন্দর চেয়ারম্যানের সঙ্গে লেয়াজো করছেন।

ইচ্ছা না থাকলেও মন্ত্রী ও বন্দর চেয়ারম্যান চাইলে দায়িত্ব পালনে আগ্রহী বলে জানিয়েছেন সিবিএ সভাপতি মমতাজ উদ্দিন। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, মন্ত্রী গতকাল(মঙ্গলবার) আমাকে ডেকে দায়িত্ব পালন করতে বলেছেন।

‘আমি বলেছি আমার থাকার কোন ইচ্ছে নাই। বন্দরের স্বার্থে আপনাদের প্রয়োজন হলে, সবাই যদি চায় তাহলে আমি থাকবো। ’

জানা গেছে, বন্দরের বিভিন্ন অনিয়ম দুর্নীতি নিয়ে আন্দোলন শুরু করেন মহিউদ্দিন চৌধুরী। এই আন্দোলনে সিবিএ’র পক্ষ থেকে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন ওয়াহিদুল্লাহ সরকার। সংগঠনের দায়িত্ব টিকিয়ে রাখতেই মহিউদ্দিন চৌধুরীর পক্ষ নিয়েছেন এমনই ধারণা সিবিএ নেতা-কর্মীদের।  

সভাপতি মমতাজ উদ্দিন বলেন, মহিউদ্দিন চৌধুরীর সঙ্গে লিয়াজোঁ করে পদে থাকতে চাইছেন সাধারণ সম্পাদক ওয়াহিদুল্লাহ সরকার।
 
নতুন মেরুকরণ:
বন্দর সূত্রে জানা গেছে, বন্দরের অনিয়মের বিরুদ্ধে সম্প্রতি নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বন্দর রক্ষা পরিষদের আহ্বায়ক এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর শুরু করা আন্দোলনকে ঘিরে বন্দর কর্মচারী পরিষদের তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে।

একটি পক্ষে আছেন বর্তমান সভাপতি মমতাজ উদ্দিন। তিনি এ আন্দোলন থেকে সরে এসেছেন। বন্দর চেয়ারম্যান ও নৌপরিবহনমন্ত্রীর সমর্থক হিসেবে পরিচিতি আছে তাঁর।

অভিযোগ উঠেছে, আন্দোলন থেকে সরে আসা ও নৌমন্ত্রীর আশীর্বাদপুষ্ট হওয়ার কারণে তিনি বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা ভোগ করছেন। এরই অংশ হিসেবে অবসরে যাওয়ার ১২দিন আগে বিদেশ সফর করেছেন তিনি।  

সাধারণ সম্পাদক ওয়াহিদুল্লাহ সরকার তার সমর্থকদের নিয়ে মহিউদ্দিন চৌধুরীর সঙ্গে থাকলেও সিবিএ’র বেশ কিছু নেতা-কর্মী নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিনের পক্ষে কাজ করছেন। এই পক্ষে নের্তৃত্বে আছেন কাজী আব্দুস সাদেক নান্না।

বাংলাদেশ সময়: ১৩০০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৫, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।