চট্টগ্রাম: বাসায় ডেকে ভাত খাইয়ে নিজ দলের নেতাকর্মী, সমর্থক, শুভানুধ্যায়ীদের ‘দোয়া’ নিচ্ছেন সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী। রোববার দুপুরে দাওয়াত দিয়ে খাইয়েছেন নগর আওয়ামী লীগের মহিলা নেতাকর্মীদের।
সোমবার আয়োজন করা হয়েছে মেজবানের।
বছরের বিভিন্ন সময় বাসায় মেজবানের আয়োজন করে চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন পর্যায়ের লোকজনকে দাওয়াত দিয়ে আপ্যায়িত করেন মহিউদ্দিন। তবে সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যমে মেয়র নির্বাচনে প্রার্থী হবার আগ্রহ প্রকাশের পর মহিউদ্দিনের এ দাওয়াত কিছুটা আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে সবাইকে দাওয়াত দিয়ে খাওয়াচ্ছি, সবার দোয়া নিচ্ছি। এর সঙ্গে নির্বাচনকে এক করে ফেলো না।
দু’দিনের আয়োজনের বিষয়ে জানতে চাইলে মহিউদ্দিন বলেন, আজ (রোববার) দু’টা (গরু) কেটেছি। কাল (সোমবার) তিনটা কাটব। মানুষের কোন হিসাব নেই। যারাই আসবেন তারাই খাবেন।
রোববার দুপুরে নগরীর চশমা হিলে মহিউদ্দিনের বাসায় গিয়ে দেখা গেছে, বাসার দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় চেয়ার-টেবিল বসিয়ে খাবারের আয়োজন করা হয়েছে। দাওয়াতে আসা নারীদের অধিকাংশই মহিলা আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড, থানা পর্যায়ের নেতাকর্মী। তাদের একপ্রকার হাতে তুলে খাওয়াচ্ছেন নগর মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও মহিউদ্দিনের স্ত্রী হাসিনা মহিউদ্দিন।
নগরীর বিভিন্ন মঠ, মন্দিরের পরিচালনা কমিটির সদস্যরা, বেসরকারি কয়েকটি উন্নয়ন সংগঠনের কর্মী, ওয়ার্ড ও থানা পর্যায়ের আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগি সংগঠনের নেতাকর্মীদের খাওয়া-দাওয়া তদারক করছেন মহিউদ্দিন নিজেই। সঙ্গে ছিলেন নগর আওয়ামী লীগের উপ দপ্তর সম্পাদক ও কাউন্সিলর জহরলাল হাজারি।
তিন দফায় টানা ১৭ বছর মেয়রের দায়িত্ব পালনকারী মহিউদ্দিন আগামী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আবারও মেয়র প্রার্থী হওয়ার আগ্রহের কথা সরাসরি বাংলানিউজকে জানান। তিনি বলেন, মানুষের চাপ আছে। শহরটা ধ্বংস হয়ে গেছে। কেন্দ্রের অনুমতি নিয়ে আবারও নির্বাচন করতে চাই।
বাংলানিউজকে তিনি বলেন, এবারও সিটি গভর্ণমেন্ট নিয়েই নামছি। আমি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান করেছিলাম। ব্যবস্থাপনা ঠিক নেই, সেজন্য সেগুলোতে নানা সমস্যা। কিন্তু স্কুলের বিল্ডিংগুলো তো আছে। সেগুলোকে আবারও আগের জায়গায় নিয়ে যেতে হবে। প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় করেছিলাম, সেটা তো কেউ বন্ধ করতে পারবে না।
নির্বাচনে প্রার্থী হবার বিষয়ে দু’একদিনের মধ্যে সংবাদ সম্মেলন করে বিস্তারিত জানাবেন বলেও জানান মহিউদ্দিন।
এর আগে গত বছরের ১১ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে মহিউদ্দিন চৌধুরী মেয়র পদে নির্বাচনে ‘অনাগ্রহের’ কথা জানিয়েছিলেন।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সরাসরি কোন উত্তর না দিয়ে তিনি বলেন, ‘‘জনগণের দাবি আছে, আগেও চারবার করেছি, এবারও করব। ’’
২০১০ সালের ১৭ জুন অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে প্রায় ৯৫ হাজার ভোটের ব্যবধানে তার রাজনৈতিক শিষ্য বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী এম মনজুর আলমের কাছে হেরে যান।
আগামী বছরের ১৬ জুন বর্তমান মেয়রের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। স্থানীয় সরকার নির্বাচনের বিধি অনুসারে মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্ববর্তী ১৮০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে হয়।
মহিউদ্দিন যখন মেয়র নির্বাচনে প্রার্থী হবার আগ্রহের কথা জানাচ্ছেন তখন এম মনজুর আলমও জোরেশোরে মাঠে নামার প্রস্তুতি নিয়ে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে ‘উন্নয়ন সভা’ করছেন।
নির্বাচনে মেয়র পদে মহিউদ্দিন ছাড়া আরও চারজন আওয়ামী লীগ প্রার্থী হবার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। এরা হলেন, নগর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি নূরুল ইসলাম বিএসসি ও খোরশেদ আলম সুজন, সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন এবং অর্থ সম্পাদক ও সিডিএ’র চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম।
মেয়র পদে নিজেকে সম্ভাব্য প্রার্থী ঘোষণা দিয়ে ছালাম ইতোমধ্যে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় সভা-সমাবেশ শুরু করেছেন। এ নিয়ে দলের নেতাকর্মীদের বিরুপ প্রতিক্রিয়া আছে। নগর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটি তাকে এক দফা শোকজও করেছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৪০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৮, ২০১৪