চট্টগ্রাম: পত্রিকার সার্কুলেশন দ্রুত কমে যাচ্ছে উল্লেখ করে তিন দশকের মধ্যে দেশে নিউজপেপার থাকবেনা বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) একাংশের সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল।
মঙ্গলবার চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের দ্বিবার্ষিক সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, দেশে সাংবাদিকতার ধরণ দ্রুত পাল্টে যাচ্ছে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বুলবুল বলেন, একটি খুনের ঘটনা ঘটলে ২৪টি টিভি চ্যানেল ২৪ ঘণ্টায় কমপক্ষে ২৪০ বার নিউজটি প্রচার করে। পরদিন পত্রিকার পাতা খুলে পাঠক তো আর সেই নিউজ পড়তে চাইবেনা। বিশ্বের বিভিন্ন সংবাদপত্র খেয়াল করলে দেখা যাবে, তারা ঘটনার খবর ছাপায় ভেতরের পেইজে ছোট করে। কিন্তু ঘটনার নেপথ্যের অনুসন্ধানী খবর থাকে পত্রিকার প্রথম পাতায় বড় আকারে।
তিনি বলেন, প্রযুক্তির যুগে পত্রিকাগুলোকে টিকে থাকতে হলে টিভি, অনলাইনের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে নতুন ধারার সাংবাদিকতা করতে হবে। পত্রিকাকে ভাল ভাল সাংবাদিকদের টানতে হবে। আর নতুন ধারার সাংবাদিকতা করতে হলে প্রথাগত সাংবাদিকতা ছেড়ে বের হয়ে আসতে হবে। পেশাগতদ দক্ষতা বাড়াতে হবে। ফাইভ ডব্লিউ ওয়ান এইচ এর ধারণা এখন আর কতটুকু কার্যকর তা ভেবে দেখতে হবে।
বুলবুল বলেন, পত্রিকাকে টিকে থাকতে হলে অনুসন্ধানী, বিশ্লেষণধর্মী সাংবাদিকতার দিকে যেতে হবে। একটা নিয়ম আছে, যারা সিনিয়র হয়ে গেছে তাদের পত্রিকাগুলো বাদ দিয়ে দেয়। সেটা সঠিক নয়। সিনিয়রদের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে বিশ্লেষণধর্মী রিপোর্ট বের করে আনতে হবে। তরুণরা ডেইলি রিপোর্ট করবে।
হাল আমলের সাংবাদিকতার সমালোচনা করে বুলবুল বলেন, এখন প্রটৌকল সাংবাদিকতা আছে, কেরাণী সাংবাদিকতা আছে, কিং ফিশার সাংবাদিকতা আছে। আগে ক্যামেরা, পেছনে বুম নিয়ে সাংবাদিকরা ঘোরাফেরা করেন পথে কাউকে পেলেই টুপ করে ধরে ফেলেন। বুম সামনে ধরে বলেন-কিছু একটা বলেন, ২টার নিউজে ধরাতে হবে।
তিনি বলেন, সাংবাদিকরা এখন জুরাইন কবরস্থানের ভেতরে দাঁড়িয়ে লাইভ দেন। এটা অনৈতিক সাংবাদিকতা।
প্রেসক্লাব এবং সাংবাদিক ইউনিয়নের মধ্যে সূক্ষ্ম পার্থক্য থাকা উচিৎ মন্তব্য করে বুলবুল বলেন, প্রেসক্লাব এবং ইউনিয়ন একসাথে চলবে। কিন্তু আমরা যেন প্রেসক্লাবকে ইউনিয়ন আর ইউনিয়নকে প্রেসক্লাব বানিয়ে না ফেলি। প্রেসক্লাব থাকবে জাতীয় আন্দোলনের সঙ্গে। যে আন্দোলন আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ, বাঙালি জাতীয়তাবাদের প্রতীক। আর সাংবাদিক ইউনিয়নের কিছু ভিন্ন দাবিদাওয়া আছে। তারা রুটির রুজির সংগ্রামে থাকবে।
বুলবুল বলেন, প্রেসক্লাব হচ্ছে সমাজের বাতিঘর। বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার মধ্য দিয়ে প্রেসক্লাব সমাজের মানুষের মধ্যে আলো ছড়াচ্ছে।
একই অনুষ্ঠানে দৈনিক আজাদী সম্পাদক ও পূর্বাঞ্চলীর সংবাদপত্র পরিষদের সভাপতি এম এ মালেক বলেন, প্রেসক্লাবকে আমরা আমাদের দ্বিতীয় ঘর হিসেবে দেখতে চাই। যারাই এর নেতৃত্বে আসবেন আমরা চাই, প্রেসক্লাব সুন্দরভাবে চলুক। আর প্রেসক্লাব এবং সাংবাদিক ইউনিয়নের মধ্যে পার্থক্য থাকা বাঞ্চনীয়। আমার সঙ্গে প্রেসক্লাব কিংবা ইউনিয়নের সঙ্গে কোন বৈরিতা নাই। আমরা সবাই একই পরিবারের সদস্য।
এম এ মালেক প্রেসক্লাবে সত্তরোর্ধ সাংবাদিকদের জন্য একটি কক্ষ বানানোর ঘোষণা দিয়ে বলেন, আমরা প্রেসক্লাবে ঢুকলে অনেকে চেয়ার ছেড়ে উঠে যান। আমাদের কোথায় বসাবেন ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এসব দেখে প্রেসক্লাবে আসতে ইচ্ছা করেনা। যদি আমাদের জন্য আলাদা একটি রুম করেন, তাহলে পারি আর না পারি, সপ্তাহে একদিন অন্তত আসব।
চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সভাপতি আলী আব্বাসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন সাবেক সভাপতি আবু সুফিয়ান, সিইউজে’র সভাপতি এজাজ ইউসুফী, প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মহসিন চৌধুরী।
দু’দিনব্যাপী সম্মেলনে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বার্ষিক সাধারণ সভা এবং বুধবার ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩০, ২০১৪