ঢাকা, সোমবার, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২০ মে ২০২৪, ১১ জিলকদ ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

ডা. রোজীর ফাঁসি ও সার্জিস্কোপ বন্ধের দাবি

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৩০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৩, ২০১৬
ডা. রোজীর ফাঁসি ও সার্জিস্কোপ বন্ধের দাবি ছবি: উজ্জ্বল ধর/বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

চট্টগ্রাম: ভুল অস্ত্রোপচার ও অবহেলায় নিহত মেহেরুন্নেসা রিমার (২৫)হত্যাকারী হিসেবে ডা. শামীমা সিদ্দিকা রোজীর ফাঁসি ও সার্জিস্কোপ হসপিটালের লাইসেন্স বাতিল করে বন্ধ ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন রিমার বাবা ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসির ভাই খায়রুল বাশার।

চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে বুধবার দুপুরে মানববন্ধনে এ দাবি জানান তিনি।



মানববন্ধনে রিমার ভাই, আত্মীয়-স্বজন, বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান, ‍মানবাধিকার সংগঠন ও বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীসহ বিপুলসংখ্যক মানুষ অংশ নেন।

খায়রুল বাশার বলেন, ডা. রোজী ৯ জানুয়ারি রাতে আমাকে বলেছিলেন, সব দায়িত্ব তার।
তার কথায় আস্থা রেখে, একজন ডাক্তার হিসেবে তাকে বিশ্বাস করে আমি অস্ত্রোপচারের ফরমে সই দিয়েছিলাম। টাকার লোভে তিনি সারারাত এখানে সেখানে ঘুরে ভোরে যেনতেনভাবে আমার মেয়ের অস্ত্রোপচার করেছিলেন বলেই আজ আমি মেয়ে হারিয়েছি, একজন নবজাতক তার মায়ের কোল হারিয়েছে। রোজী একা নন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও সমান দায়ী এ হত্যাকাণ্ডে।

তিনি ডা. রোজীকে অবিলম্বে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে প্রত্যাহার করে গ্রেফতারপূর্বক ফাঁসির দাবি জানান। একই সঙ্গে ‘কসাইখানা’ হিসেবে পরিচিত সার্জিস্কোপ হসপিটালের লাইসেন্স বাতিল করে তা বন্ধ ঘোষণারও দাবি জানান।

বাকরুদ্ধ কণ্ঠে তিনি বলেন, ভুল অস্ত্রোপচারের পর যখন সেলাই খুলে আমার মেয়ের অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে পুরো বিছানা ভিজে গিয়েছিল তখন ডা. রোজী আমাকে বলেছিলেন, আবার অস্ত্রোপচার করতে হবে, আপনার মেয়ের জরায়ু ফেলে দিতে হবে। নইলে তাকে বাঁচানো যাবে না। আমি বললাম, দরকার হলে তাই করুন। আমার মেয়েকে বাঁচান, আমার নাতনির মাকে বাঁচান। এরপর ডা. রোজী বলেন, রক্ত লাগবে। তিনি হয়তো মনে করেছিলেন আমি রক্ত জোগাড় করতে পারবো না। আমি বললাম, এই নিন ১৮ ব্যাগ। আমার ছেলেরা রক্ত দিল, তাদের বন্ধুরা রক্ত দিল। বড় মেয়ে হাজেরা তজু কলেজের শিক্ষক, তার ছাত্ররা রক্ত দিল। আমি ২০০ রক্তদাতা জোগাড় করে ফেললাম। কিন্তু ডা. রোজী আমার মেয়েকে মেরে পালিয়ে গেলেন।

বাংলানিউজকে খায়রুল বাশার জানান, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রিমার স্বামী অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী আবদুল্লাহ আল মামুন দেশে ফিরেছে। পুরো পরিবারটিই এখনো শোকাহত হওয়ায় নবজাতকের নাম ঠিক করাসহ অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করা হয়নি।

চার ভাই, দুই বোনের মধ্যে সবার ছোট রিমা। ভাইদের মধ্যে তৃতীয় মোস্তফা জামান। বন্ধুদের সঙ্গে তিনিও এসেছেন মানবন্ধনে। এক ফাঁকে বাংলানিউজকে মোস্তফা বললেন, ‘অস্ত্রোপচারের পর আমাদের কাউকে বোনের কাউকে যেতে দেওয়া হয়নি। একপর্যায়ে রিমার হাতের ইশারা পেয়ে আমার বড় বোন খায়রুন্নেসা ও রিমার ননদকে তার পাশে যেতে দেন। এ সময় রিমা তাদের জানায়, তার খুব ঠান্ডা লাগছে। তখন তারা চাদর ঠিক করে দেওয়ার সময় দেখতে পায় পুরো বিছানা লাল হয়ে গেছে। সেলাই খুলে গেছে। এ সময় দুজন নার্স মোবাইলে ফোনালাপ ও নিজেদের মধ্যে হাসিঠাট্টা করছিলেন। ’ বলতে বলতে চোখ ভিজে যায় তার।     

মানববন্ধন চলাকালে সমাবেশে জানানো হয়, ডা. রোজীর ফাঁসি ও সার্জিস্কোপের লাইসেন্স বাতিল করে বন্ধ ঘোষণার দাবিতে বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন ও বহদ্দারহাটের আইআইইউসি ক্যাম্পাসে মানববন্ধনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৩১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৩, ২০১৬
এআর/আইএসএ/টিসি

** মন্ত্রীর ভাতিজির মৃত্যুকে ঘিরে সার্জিস্কোপে ভাঙচুর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।