ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

মুরাদের ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন পূরণে মোস্তফা হাকিম ফাউন্ডেশন

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৪২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৬, ২০১৬
মুরাদের ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন পূরণে মোস্তফা হাকিম ফাউন্ডেশন সাবেক মেয়র মনজুর আলমের কাছ থেকে ভর্তি ফির টাকা গ্রহণ করছে মুরাদ

রাউজান উপজেলার নোয়াপাড়া এলাকার বাসিন্দা প্রবাসী সৈয়দ নাজিম উদ্দিনের সন্তান সৈয়দ মো. মুরাদ উদ্দিন যখন চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র তখন সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান বাবা নাজিম।

চট্টগ্রাম: রাউজান উপজেলার নোয়াপাড়া এলাকার বাসিন্দা প্রবাসী সৈয়দ নাজিম উদ্দিনের সন্তান সৈয়দ মো. মুরাদ উদ্দিন যখন চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র তখন সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান বাবা নাজিম।

দুই মেয়ে এক ছেলেকে নিয়ে সৈয়দা নিলুফার আক্তারের সংসারে নেমে আসে ঘোর অন্ধকার।

তবে ঘোর সংকটেও হাল ছাড়েননি। ছেলে মেয়েদের শিক্ষিত করার স্বপ্ন বুকে নিয়ে কষ্ট স্বীকার সংসারের হাল ধরেন।

বিফলে যায়নি সেই কষ্ট। বড় মেয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতক পড়ছে। মেঝ ছেলে মুরাদ গত বছর চট্টগ্রাম সরকারি সিটি কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এইচএসসি পাস করে।

মায়ের ইচ্ছে ছেলে ডাক্তার হবে। ছেলেও মায়ের স্বপ্ন পূরণে পরিশ্রম করে মেধার স্বাক্ষর রেখেছেন। যেখানে বাসায় শিক্ষক আর কয়েকটি কোচিং সেন্টারে পড়েও ভর্তির সুযোগ পায়নি সেখানে চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষায় মেধা তালিকায় দ্বিতীয় স্থান দখল করেছে টিউশনি করে পড়ার খরচ চালিয়ে যাওয়া মুরাদ।

তবে তার উচ্চ শিক্ষায় বাধা হয়েছিল মেডিক্যাল কলেজের ভর্তি ফি। প্রায় দুই লাখ টাকার অভাবে যখন মুরাদের ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন ক্ষিণ তখনই পাশে দাঁড়ালো মোস্তফা হাকিম ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন।

সোমবার মা ও শিশু হাসপাতাল মেডিকেল কলেজের ভর্তি ফি ১ লাখ ৭৩ হাজার ১৫০ টাকা প্রদান করেন মোস্তফা হাকিম ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের নির্বাহি পরিচালক ও সাবেক মেয়র মো. মনজুর আলম। পাশাপাশি ডাক্তারি কোর্স সম্পন্ন করতে যাবতীয় খরচ ফাউন্ডেশন পক্ষ থেকে দেওয়ার ঘোষণা দেন।

সমাজের শিক্ষার উন্নয়নে অব্যাহত কার্যক্রমের অংশ হিসেবে এ অর্থ দেওয়া হয়েছে ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

সামাজিক কর্মকাণ্ডের অংশ হিসেবে এ অর্থ দেওয়া হয়েছে জানিয়ে মোস্তফা হাকিম গ্রুপের পরিচালক মো. সরোয়ার আলম বলেন, বিগত ৩৫ বছর ধরে সমাজের শিক্ষাবঞ্চিতদের জন্য কাজ করছে মোস্তফা হাকিম ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন। এরই অংশ হিসেবে মুরাদের দায়িত্ব নেওয়া হয়।

তিনি বলেন, মুরাদের মেধা আছে। কিন্তু অর্থ নেই। ফলে তার স্বপ্নটা থেমে যাচ্ছিল। শুধু মুরাদ নয় সমাজের সকল শিক্ষাবঞ্চিতদের স্বপ্ন বাস্তবায়নে সব সময় সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিবে মোস্তফা হাকিম ফাউন্ডেশন।

ছোটকাল থেকেই ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন ছিল জানিয়ে মুরাদ বলেন, বাবার মৃত্যুর পর সে স্বপ্ন অনেকটা ক্ষিণ হয়ে যায়। মায়ের আন্তরিক প্রচেষ্টা আর শিক্ষকদের সহায়তায় ২০১৪ সালে চট্টগ্রাম সরকারি মুসলিম উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসিতে গোল্ডেন এ প্লাস নিয়ে পাস করি।

ছেলে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর ভর্তি ফি নিয়ে বেশ টেনশনে ছিলেন জানিয়ে মুরাদের মা সৈয়দা নিলুফার আক্তার বাংলানিউজকে বলেন, ফি জমা দেওয়ার সময় ছিল মাত্র সাতদিন। এ সময়ের মধ্যে এতবড় অংকের টাকা জোগাড় করা আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না।

তিনি বলেন, এক্ষেত্রে মোস্তফা হাকিম ফাউন্ডেশন এগিয়ে না এলে হয়তো আমার ছেলেকে ডাক্তারি পড়াতে পারতান মা। তাদের এ মহানুভবতার কথা আমাদের সারা জীবন মনে থাকবে।

বাংলাদেশ সময়: ২০৪০ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৬, ২০১৬

এমইউ/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।