ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

দোহাজারী

ধানে লাভ নেই, ১২ মাসই সবজি চাষে কৃষকরা

তাসনীম হাসান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪১২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৭, ২০১৬
ধানে লাভ নেই, ১২ মাসই সবজি চাষে কৃষকরা ১২ মাসই সবজি চাষে কৃষকরা। ছবি: উজ্জ্বল ধর-বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

চন্দনাইশ উপজেলার দোহাজারী ইউনিয়নের কৃষক দিদারুল ইসলাম শুরুর দিকে জমিতে ধান চাষ করতেন। কিন্তু বেশ কয়েক বছর লাভ তো দূরের কথা, খরচই তুলতে পারেননি তিনি।  পরিবার চালানো হয়ে পড়ে দুঃসাধ্য। তাই ঝুঁকেন সবজি চাষের দিকে। এখন তিনি স্বাবলম্বী। পুরো বছরই চাগাচরে সবজি চাষ করেন এই কৃষক।

দোহাজারী থেকে ফিরে: চন্দনাইশ উপজেলার দোহাজারী ইউনিয়নের কৃষক দিদারুল ইসলাম শুরুর দিকে জমিতে ধান চাষ করতেন। কিন্তু বেশ কয়েক বছর লাভ তো দূরের কথা, খরচই তুলতে পারেননি তিনি।

  পরিবার চালানো হয়ে পড়ে দুঃসাধ্য। তাই ঝুঁকেন সবজি চাষের দিকে।
এখন তিনি স্বাবলম্বী। পুরো বছরই চাগাচরে সবজি চাষ করেন এই কৃষক।

সম্প্রতি দক্ষিণ চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় বাজার হিসেবে খ্যাত ‘দোহাজারী সবজি বাজারে’ কথা হয় কৃষক দিদারুল ইসলামের সঙ্গে। এতে উঠে আসে উপরের কথাগুলো। কৃষক দিদারুল তার উ‍ৎপাদিত ফুলকপি নিয়ে বাজারে বিক্রির জন্য এসেছিলেন।

শুধু দিদারুল ইসলাম নন, এই অঞ্চলের প্রায় চার হাজার কৃষক সারাবছর সাংগু নদীর পাড়ের হাজারীবাজার, বারতখানা, চাগাচর, জামিরজুরী, লালটিয়া, দিয়াকুল, রায়জোয়ারা, কিল্লাপাড়া, লালিয়ার চর, লালটিয়ার চর সহ বিভিন্ন এলাকায় সবজি চাষ করেন। সবমিলিয়ে ৬০০ হেক্টর জমিতে সবজি চাষ হচ্ছে।

ইউনিয়ন কৃষি অফিস সূত্র জানায়, চৈত্র থেকে আষাঢ় মাস খরিপ-১ মৌসুম, শ্রাবণ থেকে আশ্বিন খরিপ-২ মৌসুম ও কার্তিক থেকে ফাল্গুন রবি মৌসুম বলে পরিচিত। এই তিন মৌসুমেই অর্থাৎ সারাবছরই সবজি চাষ করছেন এই অঞ্চলের মানুষ। ১২ মাসই সবজি চাষে কৃষকরা

এর মধ্যে খরিপ-১ মৌসুমে ৪০০ হেক্টর জমিতে সবজি চাষ হয়। কৃষকরা বরবটি, ঢেঁড়স, মুলা, লালশাক, বেগুন, পালংশাক সহ মৌসুমের সঙ্গে মানানসই সবজি চাষ করেন।

খরিপ-২ মৌসুমে ৩০০ হেক্টর জমিতে সবজি চাষ হয়। এসময় মুলা, শিম, ঢেঁড়স, বেগুন চাষ হয় বেশি।

রবি মৌসুমে সবচেয়ে বেশি অর্থাৎ ৬০০ হেক্টর জমিতেই সবজি চাষ হয়। এই মৌসুমে প্রায় সব সবজিই চাষ হয়। এর মধ্যে ফুলকপি, বাধাকপি, মুলা, বেগুন, শিমসহ নানা জাতের শাক চাষ হয়।

কৃষক দিদারুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ‘সবজি চাষ করেই আমার পরিবারে সচ্ছলতা ফিরেছে। এবার এক কানি জমিতে প্রায় চারহাজার ফুলকপি চাষ করেছি। এতে ২০ হাজার টাকার মতো খরচ হয়েছে। আশা করছি ফুলকপি বিক্রি করে ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা আয় হবে। ’

লালটিয়ার চরের সবজির সবচেয়ে বড় চাষাবাদ হয়। চরে গিয়ে কথা হয় ‍কৃষক আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে। তিনি চার কানি জমির উপর ফুলকপি, বাধাকপি, মুলা ও বিভিন্ন জাতের শাক চাষ করছেন। ১২ মাসই সবজি চাষে কৃষকরা

আনোয়ার হোসেন বলেন, এই অঞ্চলে আগে ধানের চাষ করতাম আমরা। কিন্তু ধানে সেভাবে লাভ করতে পারি না। পরবর্তীতে শতভাগ কৃষকই সবজি চাষের দিকে ঝুঁকেন। সবজি চাষ করে প্রায় সবাই এখন সাবলম্বী। ’

সরেজমিনে দেখা যায়, সাংগু নদীর পাড়ের এলাকাগুলোতেই মূলত সবজি চাষ হচ্ছে। এই নদীর পানি দিয়েই এসব সবজির চাষ হয়। এসব এলাকা ধান চাষের জন্যও উপযোগী হলেও কৃষকদের দাবি ধানে লাভ নেই।   তাই সবজিই চাষ করেন তারা।

দোহাজারী ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মৃণাল কান্তি দাশ বাংলানিউজকে বলেন, ‘দোহাজারী ইউনিয়নের দুই হাজার ও আশপাশের ইউনিয়নের দুই হাজার করে মোট চার হাজার কৃষক সবজি চাষের সঙ্গে জড়িত। সারাবছরই তারা সবজি চাষ করেন। ’

প্রতিদিন ভোর ছয়টা থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত দোহাজারী সবজি বাজারে সবজি বিক্রির জন্য তুলেন কৃষকরা। এই মৌসুমে প্রতিদিন প্রায় ১০০ থেকে ১৫০ পিকআপ সবজি চট্টগ্রাম নগরীসহ বিভিন্ন উপজেলায় বিক্রির জন্য নিয়ে যান ক্রেতারা। এখানে প্রতিদিন ২০ লাখ টাকার মতো বেচাকেনা হয় বলে জানিয়েছেন কৃষকরা।

বাংলাদেশ সময়: ১০১২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৭, ২০১৬

টিএইচ/আইএসএ/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।