চট্টগ্রাম: কাজ না দেওয়ায় অজুহাতে অফিসে গিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের এক কর্মকর্তাকে মারধর করেছে নগর আওয়ামী লীগের সদস্য রোটারিয়ান মো. ইলিয়াস। বুধবার দুপুরে বন্দরের মেরিন ওয়ার্কশপের ডেপুটি ইঞ্জিনিয়ার এমদাদুল হকের উপর এ হামলার ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় ইলিয়াসের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হচ্ছে জানিয়ে বন্দর জোনের উপপুলিশ কমিশনার হারুনুর রশিদ হাজারি বাংলানিউজেক বলেন, নিজের লাইসেন্স করা অস্ত্র (শর্টগান) প্রদর্শন করে মেরিন ওয়ার্কশপের কর্মকর্তা-কর্মচারী ভয়ভীতি দেখান এবং ওয়ার্কশপের প্রধানকে মারধর করেন। মামলা দায়েরের পর তার অস্ত্রের লাইসেন্স বাতিলের আবেদন জানানো হবে।
চট্টগ্রাম বন্দরের ভারপ্রাপ্ত সচিব মো.নাছির উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, নিজ কার্যালয়ে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা খুবই ন্যাক্কারজনক। এ ঘটনায় বন্দরের কর্মকর্তারা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করবে বন্দর প্রশাসন। তিনি বলেন, নিজ কার্যালয়েই যদি জীবনের নিরাপত্তা না থাকে তাহলে তো কাজ করতে পারবে না কর্মকর্তারা।
বন্দর সূত্রে জানা গেছে, বুধবার দুপুর পৌনে ১টার দিকে অস্ত্র-শস্ত্রসহ ২০ থেকে ২৫ জন লোক নিয়ে মেরিন ওয়ার্কশপে প্রবেশ করেন নগর আওয়ামী লীগের সদস্য রোটারিয়ান ইলিয়াস। কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে ওয়ার্কশপের প্রধান প্রকৌশলী এমদাদুল হকের কক্ষে প্রবেশ করেন। এসময় সেখানে উপস্থিত আরও দুইজন কর্মকর্তাকে রুম থেকে বের করে দিয়ে এমদাদুল হকের মুখে আঘাত করেন রোটারিয়ান ইলিয়াস। এরপর তাকে মারধর করতে থাকেন।
তিনি কৌশলে বাথরুমে ঢুকে ভেতর থেকে দরজা বন্ধ করে দ্রুত বন্দরের সদস্য (হারবার এন্ড মেরিন) কমডোর শাহিন আলমকে ফোনে বিষয়টি জানান। এরপর তিনি বন্দরের পরিচালক (নিরাপত্তা) লে. কর্নেল আবদুল গাফফার ও পুলিশকে ফোন করলে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয় পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। বিষয়টি টের পেয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন সন্ত্রাসীরা।
এ বিষয়ে হামলার শিকার ডেপুটি চিফ ইঞ্জিনিয়ার (মেরিন) এমদাদুল হক বাংলানিউজকে বলেন, রোটারিয়ান ইলিয়াসের নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী হত্যার উদ্দেশ্যে আমার কার্যালয়ে প্রবেশ করে। এসময় ইলিয়াস আমাকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে।
‘তোর জন্য আমি টাকা কামাইতে পারি না। আমি বলি কাজ পাওয়ার নিয়ম আছে। সে (ইলিয়াস) বলে, কিসের আইন, আমি যা বলি তা-ই আইন। পরে আমি কৌশলে বাথরুমে গিয়ে জীবন রক্ষা করি। ’
এদিকে বন্দর কর্মকর্তার উপর হামলার ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছেন নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও বন্দর আসনের সংসদ সদস্য এম এ লতিফ।
কিছু লোক দলের নাম ভাঙিয়ে এ ধরনের কর্মকাণ্ড করে যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ ধরনের কিছু লোকের অপকর্মের কারণে প্রধানমন্ত্রীর সব অর্জন ভেস্তে যাচ্ছে। ক্ষুণœ হচ্ছে দলের ভাবমূর্তি।
রোটারিয়ান ইলিয়াসের বিরুদ্ধে এর আগেও বিভিন্ন সময়ে বন্দর কর্মকর্তা এমনকি পুলিশ সদস্যদের মারধরের অভিযোগ রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, মানুষ এখন মাস্তানি-চাঁদাবাজি পছন্দ করে না।
বন্দর সূত্রে জানা গেছে, কর্মকর্তাদের উপর রোটারিয়ান ইলিয়াসের হামলা বা মারধরের ঘটনা এটাই প্রথম নয়। এ পর্যন্ত অনেক কর্মকর্তাকে মারধরের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তবে আগে কোন কর্মকর্তা বিষয়টি প্রকাশ না করায় আরও বেপরোয়া হয়েছে উঠে। এছাড়া বন্দর থেকে কাজ পেলেও শর্তানুয়ী কাজ না করে টাকা নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
বাংলাদেশ সময়: ২১০৫ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৮, ২০১৬
এমইউ/টিসি