ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

২০১৬

জালিয়াতি রোধে সক্রিয় শুল্ক গোয়েন্দা, নিষ্ক্রিয় কাস্টমস

মো.মহিউদ্দিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩৩৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৬
জালিয়াতি রোধে সক্রিয় শুল্ক গোয়েন্দা, নিষ্ক্রিয় কাস্টমস  শুল্ক ফাঁকি দিয়ে আনা কসমেটিকস ও ইলেকট্রনিক্স পণ্য। ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

চট্টগ্রাম: চলতি বছরের আগস্ট মাসে বন্ড সুবিধার অপব্যবহার করে ১৭ কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকির অপরাধে লিবার্টি এক্সেসরিজের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর। কারখানা পরিদর্শন করে ১ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন প্লাস্টিক দানার ঘাটতি পাওয়ায় বন্ড লাইসেন্সের শর্ত লঙ্ঘনের অভিযোগে এ মামলা দায়ের করা হয়।

কেবল এই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেই গত এক বছরে অন্তত ১০টির বেশি রাজস্ব ফাঁকির ঘটনা উদঘাটন করেছে শুল্ক গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। বিদায়ী বছরে (২০১৬) গোপন সংবাদ ও বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহের ভিত্তিতে ২১৩টি জালিয়াতির ঘটনা উদঘাটন করেছে শুল্ক গোয়েন্দা কর্মকর্তারা।

উদ্ধার করেছে সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে আনা বিলাসবহুল গাড়ি। এসব জালিয়াতির ঘটনায় সরকারের রাজস্ব আয় বেড়েছে প্রায় ৩০ কোটি টাকা।

বছর জুড়ে জালিয়াতির ঘটনা উদঘাটন ও সরকারি রাজস্ব ফাঁকি রোধে শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগ তৎপর থাকলেও নিষ্ক্রিয় ছিল দেশের সবচেয়ে বেশি রাজস্ব আহরণকারী প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস। উল্টো জালিয়াত চক্রের সঙ্গে কাস্টমসের কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। কয়েকজনকে সাময়িক বহিষ্কারও করা হয়েছে।

নিয়মিত কাজের অংশ হিসেবে গত এক বছরে প্রায় ৮৩৮টি মামলা করেছে এআইআর শাখা। এরমধ্যে অধিকাংশই বিভাগীয় মামলা। তবে বছরের শেষ দিকে এসে কয়েকটি বড় ধরনের জালিয়াতির ঘটনা উদঘাটন করেছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো কুমিল্লা ইপিজেডে অবস্থিত কাদেনা স্পোর্টস ওয়্যার লিমিটেড’র নামে আমদানি করা ১৩ কোটি টাকার বিদেশি সিগারেট। এ ঘটনায় নগরীর বন্দর থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। গঠন করা হয়েছে তদন্ত কমিটি।

শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের উপপরিচালক এসএম শামিম বাংলানিউজকে বলেন, সরকারি রাজস্ব ফাঁকি রোধে সবসময় সতর্ক থাকতে হয়। যে কোন সময় ছুটে যেতে হয় ঘটনাস্থলে।

গোপন সংবাদের ভিত্তিতে কাজ করতে গিয়ে অনেক সময় তথ্য সঠিক থাকে না। এরপরও বিভিন্নভাবে তথ্য সংগ্রহ করে কাজ করতে হয়। সরকারি রাজস্ব ফাঁকি ও জালিয়াতি রোধে শুল্ক গোয়েন্দা সবসময় তৎপর। শুল্ক ফাঁকি দিয়ে আনা গাড়ি

শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের চট্টগ্রাম কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত এক বছরে ২১৩টি মামলার বিপরীতে সরকারের অতিরিক্ত রাজস্ব আয় হয়েছে ২৯ কোটি ৬৫ লাখ ৭৬ হাজার টাকা। এরমধ্যে ২০১৬ সালের জানুয়ারি মাসে ১৪টি মামলায় ৬৪ লাখ ৬৭ হাজার ৮২০, ফেব্রুয়ারিতে ৯ মামলায় ৪ কোটি ৩৭ লাখ ৩৭ হাজার ৫৪৫, মার্চে ১১ মামলায় ১ কোটি ১১ লাখ ৬৯ হাজার ৪৫৫, এপ্রিলে ১৬ মামলায় এক কোটি ১৯ লাখ ৮ হাজার ১৪৮, মে মাসে ২৭ মামলায় ৯৭ লাখ ৫৫ হাজার ১৬৩, জুনে ২৭ মামলায় ৯ কোটি ৪৬ লাখ ৫৬ হাজার ৮৮১, জুলাইয়ে ১৩ মামলায় ৯৫ লাখ ৫১ হাজার ২৩২, আগস্টে ২৭ মামলায় ৪ কোটি ৯৭ লাখ ৭৩ হাজার ৫৩, সেপ্টেম্বরে ১১ মামলায় ১ কোটি ৩৪ লাখ ৯০ হাজার ৪৮৬, অক্টোবরে ২০ মামলায় ২ কোটি ৪৮ লাখ ৯৬ হাজার ১৬৬, নভেম্বরে ২৪ মামলায় ২ কোটি ৫ লাখ ১২ হাজার ৫৩০ এবং ডিসেম্বরে ১৪ মামলায় ৬ লাখ ৫৭ হাজার ৯৭৮ টাকা।

এদিকে সবচেয়ে বড় রাজস্ব আহরণকারী চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসকে জালিয়াতি রোধে খুব বেশি তৎপর দেখা যায়নি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কমিশনার এবং উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সিএন্ডএফ নেতাদের নিয়ন্ত্রণে থাকার কারণে কাস্টমস হাউসে জালিয়াতির ঘটনা ঘটছে।

কাস্টমসের এআইআর শাখা ও শুল্ক গোয়েন্দারা যেসব জালিয়াতির ঘটনা উদঘাটন করেছেন এর অধিকাংশের সঙ্গেই সিএন্ডএফ প্রতিষ্ঠানের মালিক বা কর্মকর্তা জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। একই সঙ্গে কাস্টমসের কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং ফালতু হিসেবে পরিচিত অস্থায়ী নিয়োগ পাওয়া কর্মচারীও জড়িত রয়েছে। গত নভেম্বর মাসে কাস্টমস হাউস থেকে চারজন ফালতুকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায় শুল্ক গোয়েন্দা কর্মকর্তারা।  

ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে ওয়াটার পাম্প আমদানির ঘোষণা দিয়েছিল আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান কে আর ট্রেডার্স। এই প্রতিষ্ঠানের নামে আমদানি করা সাত কন্টেইনার পণ্যের মধ্যে ছয় কন্টেইনার খালাস নিয়েছিল সিএন্ডএফ প্রতিষ্ঠান ইফরাত এন্টারপ্রাইজ। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সাত নম্বর কন্টেইনার কায়িক পরীক্ষা করে সেখানে ঘোষণা বহির্ভূত পণ্য পাওয়া যায়। মিথ্যা ঘোষণায় বাকি ছয়টি কন্টেইনারও খালাস নিয়েছিল বলে নিশ্চিত হয় কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। ওই জালিয়াতির ঘটনার সঙ্গে কাস্টমসের একজন ডেপুটি কমিশনার জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।

তবে এসব বিষয়ে সম্প্রতি চট্টগ্রাম কাস্টমস কমিশনার এএফএম আবদুল্লা খান বাংলানিউজকে বলেন, জালিয়াতি রোধে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস সক্রিয় রয়েছে। সরকারি রাজস্ব ফাঁকি রোধে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৩৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৬

এমইউ/আইএসএ/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।