প্রতিদিনের মতো রোববার (১ জানুয়ারি) রাতেও কাজ শেষে ঘুমাতে গিয়েছিল সুমনরা। কিন্তু একটু পরই আগুন লাগার খবর শুনে কোনোরকমে বস্তি থেকে বেরোতে পেরেছে তারা।
সোমবার (২ জানুয়ারি) বেলা ১১টার দিকে আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়া বস্তিতে কথা হয় তাদের সঙ্গে।
বাংলানিউজকে তারা বলেন, ‘আমাদের সব শেষ। গায়ের কাপড়টাই আছে। আর কিছু রইল না। চারজনের আট হাজার নগদ টাকা জমা ছিল। তাও বের করতে পারিনি। আগুনের কথা শুনে কোনোমতে প্রাণটা হাতে নিয়ে বের হই। রাতে রাস্তায় ঘুমিয়েছি। সকাল থেকে এখন পর্যন্ত কিছুই খাওয়া হয়নি। ’
রোববার রাত সোয়া একটায় লাগা এই আগুনে শুধু চার কিশোরের স্বপ্ন পুড়েনি, পুড়েছে আরও কয়েক হাজার মানুষের সর্বস্ব।
বস্তিবাসী ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই বস্তিতে ২৬ জন মালিকের অধীনে প্রায় এক হাজার ছোট বাসা ছিল। এছাড়া ১৫টি দোকানও ছিল এই বস্তিতে। সবমিলিয়ে কয়েক হাজার মানুষ থাকতো এই বস্তিতে।
অবশ্য সোমবার বেলা ১১টার দিকে ঘটনাস্থলে গিয়ে কোনো বাসার চিহ্ন খুঁজে পাওয়া যায়নি। সবকিছুই পুড়ে ছাই।
আগুনে সব হারানোদের আরেকজন পেকুয়ার বাসিন্দা জমিলা বেগম। ২০০৭ সালে কুমিল্লার মোহাম্মদ বজলুকে বিয়ে করার পর থেকে থাকছেন এই বস্তিতে। রোববার রাতের আগুন তার সব কেড়ে নিয়েছে। আগুনের কথা শুনে শিশুপুত্র ইকবালকে নিয়ে কোনোমতে বস্তি থেকে বের হয়েছিলেন তিনি।
জমিলা বেগম বলেন, ‘আমি মানুষের বাসায় কাজ করি আর স্বামী রিকশা চালায়। দুজন মিলে কষ্ট করে সংসার চালাতাম। কষ্টের টাকায় ফার্নিচারসহ অনেক কিছু কিনেছিলাম। কিন্তু আগুন আমার সব নিয়ে গেল। গায়ের কাপড়টা ছাড়া আর কিছু নেই। দুপুরে কি খাব তাও জানি না। ’
এদিকে ফায়ার সার্ভিসের পক্ষে বলা হচ্ছে বৈদ্যুতিক গোলযোগ থেকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। তবে বিষয়টি মানতে নারাজ বস্তিবাসী। তাদের অভিযোগ কেউ উদ্দেশ্যে প্রণোদিতভাবে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে।
ঘটনাস্থলে ক্ষতিগ্রস্থদের তথ্য সংগ্রহ করছিল পুলিশ। পাশাপাশি ফায়ার স্টেশনের কর্মকর্তারাও ঘটনাস্থলে রয়েছেন।
ঘটনাস্থলে থাকা ফায়ার সার্ভিসের ডিস্ট্রিক্ট ইনচার্জ জসিম উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, ‘এই বস্তিটি অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে। ভেতরে প্রবেশের রাস্তাগুলো খুবই সরু। একজনের বেশি মানুষ হাঁটা যায় না। তাই আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে আমাদের প্রচুর বেগ পেতে হয়েছে। আগুন যেন ছড়িয়ে না পড়ে সেজন্য আমরা চারপাশে ঘিরে একযোগে কাজ করেছি। তবে আমাদের ভাগ্য ভালো। খুব কম সময়ের মধ্যে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে পেরেছি। না হলে আরও শত শত কোটি টাকার ক্ষতি ও জীবনহানির শংকা ছিল। ’
তিনি বলেন, মোট কয়টি বাসা পুড়ছে তা এবং ক্ষতিগ্রস্থদের তালিকা এখনো নির্ধারণ করতে পারিনি। তবে আমাদের ধারণা হাজারখানেক ছোট বাসা হতে পারে। ’
বৈদ্যুতিক গোলযোগ থেকে আগুনের সূত্রপাত হতে পারে জানিয়ে তিনি বলেন, ঘটনা তদন্তে আমরা তিন সদস্যর তদন্ত কমিটি গঠন করবো। মঙ্গলবার থেকে কমিটি তদন্ত শুরু করে দেবে।
ঘটনাস্থলে ক্ষতিগ্রস্থদের তালিকা ও আগুনের উৎস নির্ধারণে কাজ করছিলেন সদরঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মর্জিনা আকতার।
তিনি বলেন, ‘আমরা ক্ষতিগ্রস্থদের তালিকা তৈরির চেষ্টা করছি। পাশাপাশি আগুনের সূত্রপাতের পেছনে অন্য কোনো কারণ আছে কিনা তা খতিয়ে দেখছি। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৩৩২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০২, ২০১৭
টিএইচ/আইএসএ/টিসি