সোমবার বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ঘটনাস্থল পরিদর্শন করলে সব হারানো বস্তির মানুষদের মুখ থেকে ‘আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে’ এই বাক্যটাই কানে আসল।
তাদের দাবির পেছনে যুক্তি আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গেই বস্তির মানুষেরা যখন দ্রুত প্রাণ নিয়ে পালাচ্ছিলেন তখন কিছু মানুষ সেখানে ঢুকে লুটপাঠে ব্যস্ত ছিলেন।
এর একজন পারভিন বেগম। এই বস্তির সবচেয়ে বড় দোকানটি ছিল তার।
চল্লিশোর্ধ্ব এই নারী কাঁদছিলেন হারিয়ে যাওয়া সেই দোকানের সামনে। দেখছিলেন দোকানের শেষাংশ পোড়ার দৃশ্য।
তিনি বলেন, ‘শুক্রবার রাতেও এই বস্তির পশ্চিমাংশের বাসাগুলোতে আগুন দেওয়া হয়েছিল। তবে তাৎক্ষণিকভাবে তা নিয়ন্ত্রণে আনতে পারি আমরা। এরপর আমরা ভয়ে ছিলাম। কারণ আবার আগুণ লাগাতে পারে এমন আশঙ্কা করছিলাম। তাই আমাদের বাসার মালিক শওকতকে বলছিলাম আমি কি আমার দোকানের জিনিসপত্র আস্তে আস্তে সরিয়ে ফেলবো? এই প্রশ্নের জবাবে সে সেদিন বলেছিল ‘‘তোমার দোকানের একটি জিনিসও ক্ষতিগ্রস্থ হলে আমি ফেরত দেব’’। কিন্তু রোববার রাতে আগুন লাগার পর থেকে সোমবার সকাল ১১ টা পর্যন্ত তাকে কতবার ফোন করলাম। সে ফোন ধরলো না। ’
একইভাবে বস্তিতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ করছেন প্রায় সবাই।
তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কিছু দুর্বৃত্ত দীর্ঘদিন ধরে আগুন লাগিয়ে বস্তিবাসীর জিনিসপত্র লুট করার চেষ্টা করছিল। পাশাপাশি এই বস্তির মালিকানা নিয়ে মালিকদের মধ্যেও ঠাণ্ডা লড়াই ছিল। এসব কারণে কেউ আগুন লাগিয়ে দিতে পারে বলে তাদের আশঙ্কা।
সূত্র জানায়, এই বস্তিতে ৩১ জন মালিকের অধীনে প্রায় এক হাজার ছোট বাসা ছিল। এছাড়া ১৫টি দোকানও ছিল এই বস্তিতে। সবমিলিয়ে কয়েক হাজার মানুষ থাকতো এই বস্তিতে। এর মধ্যে ২৬ জন মালিকের মালিকানাধীন ৯০০ এর উপর বাসা পুড়ে গেছে।
এদিকে বস্তিবাসী দুর্বৃত্তরা আগুন লাগিয়ে দিয়েছে এমন অভিযোগ করলেও পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা বলছেন বৈদ্যুতিক গোলযোগ থেকেই আগুনের সূত্রপাত।
ফায়ার সার্ভিসের ডিস্ট্রিক্ট ইনচার্জ জসিম উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, ‘এই বস্তিটি অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে। ভেতরে প্রবেশের রাস্তাগুলো খুবই সরু। একজনের বেশি মানুষ হাঁটা যায় না। তাই আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে আমাদের প্রচুর বেগ পেতে হয়েছে। আগুন যেন ছড়িয়ে না পড়ে সেজন্য আমরা চারপাশে ঘিরে একযোগে কাজ করেছি। তবে আমাদের ভাগ্য ভালো। খুব কম সময়ের মধ্যে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে পেরেছি। না হলে আরও শত শত কোটি টাকার ক্ষতি ও জীবনহানির শংকা ছিল। ’
তিনি বলেন, মোট কয়টি বাসা পুড়ছে তা এবং ক্ষতিগ্রস্থদের তালিকা এখনো নির্ধারণ করতে পারিনি। তবে আমাদের ধারণা হাজারখানেক ছোট বাসা হতে পারে। ’
বৈদ্যুতিক গোলযোগ থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ঘটনা তদন্তে আমরা তিন সদস্যর তদন্ত কমিটি গঠন করবো। মঙ্গলবার থেকে কমিটি তদন্ত শুরু করে দেবে।
একই বিষয়ে সদরঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মর্জিনা আকতার বাংলানিউজকে বলেন, ‘বৈদ্যুতিক গোলযোগ থেকেই আগুনের সূত্রপাত হয়েছে। আমরা ক্ষতিগ্রস্থদের তালিকা তৈরি করে জেলা প্রশাসনকে দিয়েছি। আগুনে ২৫ মালিকের ৯০০ মতো বাসা পুড়ে গেছে। ’
‘আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে’-বস্তিবাসীর এমন অভিযোগের বিষয়ে মর্জিনা আকতার বলেন, ‘তারা বললে তো হবে না। বৈদ্যুতিক গোলযোগ থেকেই আগুনের সূত্রপাত হয়েছে বলে আমরা নিশ্চিত হয়েছি। ’
‘গায়ের কাপড়টাই আছে, আর কিছু রইল না’
বাংলাদেশ সময়: ১৯১৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০২, ২০১৭
টিএইচ/টিসি