বহুদিন পর প্রিয় আঙ্গিনায় এসে তারা ফিরে গিয়েছিল সেই ‘আকাশি-সাদা ইউনিফর্মে’ বন্দি থাকার দিনগুলোতে। শুক্রবারের ভরদুপুরে তাই এপাশ-ওপাশ থেকে ভেসে আসছিল ‘এই মাঠেই না খেলতাম আমরা, আজ কত পরিবর্তন’, ‘এটাই না ছিল আমাদের ক্লাসরুম, আজ রং লেগেছে দেয়ালে দেয়ালে।
উপলক্ষ বিদ্যালয়ের ৫২ বছর পূর্তি। ওহ বিদ্যালয়ের নামটা বলা হয়নি।
৫২ বছর পূর্তি উপলক্ষে এদিন সকাল থেকেই স্কুল প্রাঙ্গণে ছিল সাজ সাজ রব। সকালে শোভাযাত্রা থেকে সম্মাননা, তারপর বিকেল থেকে রাত অব্দি গানে ডুব-কী ছিল না অনুষ্ঠানে?
অনুষ্ঠানের প্রথম পর্ব শুরু হয় সকাল ৮টায় শোভাযাত্রার মধ্যে দিয়ে। প্রথম অধিবেশনে ছিল প্রবীণ শিক্ষক সম্মাননা। বেলুন উড়িয়ে ও জাতীয় সংগীতের মধ্যে দিয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন চকবাজার ওয়ার্ড কাউন্সিলর সাইয়েদ গোলাম হায়দার মিন্টু। পরবর্তীতে আলোচনা সভায় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুকুমার দেবনাথের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন কাউন্সিলর চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনী, অধ্যক্ষ চৌধুরী মনজুরুল হক, আলী আকবর, দেবী চৌধুরী, সুশীলা দাশ, মমতাজ বেগম, মলয় লালা, রোকেয়া বেগম, লিপীকা মল্লিক, রোমেলি বড়ুয়া, কায়সার আহমেদ, আমিনুল হক রমজু, দেলোয়ার হোসেন, মোহাম্মদ ইব্রাহিম, আবুল খায়ের বাচ্চু।
প্রাক্তন শিক্ষার্থী মরজিনা আক্তারের সঞ্চালনায় আরও উপস্থিত ছিলেন আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক অভিনুর শবনম। হারিয়ে যাওয়া ব্যাক্তিদের সম্মানে শোক প্রস্তাব পাঠ করেন প্রাক্তন শিক্ষার্থী অদিতি বিশ্বাস।
‘ধনে ধান্য পুষ্পে ভরা’ দেশাক্তবোধক গানটির মাধ্যমে শুরু হয় অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্ব। ঘড়িতে তখন দুপুর ঠিক আড়াইটায়। স্কুলের ‘গার্ল গাইট’র শিক্ষার্থীদের দলীয় পরিবেশনায় আরো ছিল ‘একদিন ছুটি হবে, অনেক দূরে যাবো’ গানটিও। তারা পরিবেশন করে দলীয় নাচও।
নাচে স্থান পায় জনপ্রিয় গান, ‘ধিন্ তা না, আজি ধানের ক্ষেত্রে রৌদ্র ছায়া, কনকপাচার ধান ও ফাগুনের মোহনা” সহ বেশ কিছু জনপ্রিয় গান। এর পর অনুষ্ঠানের ভিন্নমাত্র নিয়ে আসে প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের পরিবেশনা। এদের পরিবেশনা ছিল চোখে পড়ার মত। দল বেঁধে তারা গান -‘মন চায়, মন চায়’, ‘মধু হই হই বিষ খাওয়াইলা’, ‘আ হা হা করিয়া, বাজানরে দোতারা, সুন্দরী মধুবালা নাচে,’ ‘আমার ঘুম ভাঙ্গাইয়া গেল গো মরার কোকিলে,’ ‘তোমাকে চাই আমি আরও কাছে’ প্রভৃতি দলীয় গান।
এরপর পর মঞ্চে উঠে চট্টগ্রামের জনপ্রীয় ব্যান্ড ‘তিরন্দাজ’। তারা দর্শকদের মাতিয়ে রাখে ‘যখন নিঝুম রাতে’, ‘তোমার জন্য ইচ্ছে তারা’, ‘নিটোল পায়ে রিনিক ঝিনিক’, ‘তুমি কি সাড়া দিবে’, ‘চাইতে পারো’, ‘নিকাশ কালো এই আঁধারে’ ও ‘সোনা দিয়ে বাধায়াছে ঘর’ সহ মোট আটটি গানে।
এবার পালা শিরোনামহীনের। দেশের জনপ্রীয় এই ব্যান্ডের ভোকাল ‘তুহিন’ গেয়ে চলেন একের পর এক জনপ্রিয় গান। গান পরে থাক। তার গীটার আর কি-বোর্ডেই উল্লাসে ফেটে পড়েন শিক্ষার্থীরা। পরে গাইলেন, ‘ক্যাপেটেরিয়া’, ‘একা’, ‘একটা পাখি বসে আছে’, ‘ইচ্ছে ঘুড়ি’, ‘বন্ধ জানালা’, ‘তুমি যে আছো তাই, আমি পথ হেঁটে যাই’ ও ‘ভেবে দেখছো কি’ সহ বেশ কিছু জনপ্রিয় গান।
এর পরেরটা ‘তাহসান’ যুগ। তরুণ প্রজন্মের কাছে তাহসান যে কতটা জনপ্রীয় তার আরেকবার নমুনা দেখা গেল রাত আটটার পরের সময়ে। তাকে দেখে শিক্ষার্থীদের এত উল্লাস দেখে তাহসান নিজেও যেনো কিছুটা অভিভূত। উচ্ছ্বাসের সেই রেশ থামিয়ে তিনি শুরু করলেন নিজের প্রথম এলবামের প্রথম গান ‘দূরে তুমি দাঁড়িয়ে’ গানের মাধ্যমে। তারপর একে একে ‘আমি সেই সুঁতো হবো’, ‘প্রেমাতাল’, ‘বড় অবেলায় পেলাম তোমায়’, ‘তুমি ছুয়ে দিলে মন’, ‘কে তুমি’ গান গুলো। গান শেষ করেন নিজের জনপ্রিয় ‘আলো’ গানের মাধ্যমে।
রাতের বয়স বাড়ছে। সাড়ে দশটার আশেপাশে সময় তখন। একঝাঁক প্রাক্তন শিক্ষার্থীর নাচ আর র্যাফেল ড্র’র মধ্যে দিয়ে শেষ হয়ে যায় অনুষ্ঠান।
ঘড়ি বলছে এবার বিদায়ের পালা। পথ আবারও পৃথক হবে এবারের মতো। তবে এর আগের ১৫ ঘণ্টা বলে গেল-হারিয়ে যাওয়া সুখের সময়গুলো আটকে থাকে না, থেকে থেকে ফিরে আসে, অবেলায় হলেও ফিরে আসে বন্ধুদের মুখ-কণ্ঠ। তাই আবারও এমন অবেলার অপেক্ষায় থাকা বন্ধুদের কণ্ঠগুলো বলছিল ‘আবার হবে তো দেখা, এ দেখাই শেষ দেখা নয় তো?
বাংলাদেশ সময়: ১৯০০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৭, ২০১৭
টিএইচ/টিসি