ঢাকা, মঙ্গলবার, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২১ মে ২০২৪, ১২ জিলকদ ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

‘বন্ধু, কী খবর বল...’

চট্টগ্রাম প্রতিদিন ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫১৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৭, ২০১৭
‘বন্ধু, কী খবর বল...’ স্যার আশুতোষ সরকারি কলেজের হীরকজয়ন্তী উৎসব (ছবি: সংগঠনের পাঠানো)

চট্টগ্রাম: পড়ালেখার পাঠ চুকিয়ে বিদায় নেয়ার পর দেখা হয়নি হয়ত আর কখনও।  পেরিয়ে গেছে দশকের পর দশক।  নিজ নিজ পেশায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন, সংসারী হয়েছেন।  মুখের বলিরেখায় বয়সের ছাপ স্পষ্ট।  সময় হারিয়ে গেছে, কিন্তু মন থেকে বন্ধুতা হারায়নি।

দেখা হতেই একে অপরকে বুকে জড়িয়ে নিয়েছেন।   আবেগঘন মহামিলনে জানতে চেয়েছেন একে অপরের কাছে, ‘বন্ধু, কী খবর বল...’স্যার আশুতোষ সরকারি কলেজের হীরকজয়ন্তী উৎসব (ছবি: সংগঠনের পাঠানো)

এই সতীর্থদের সবাই এই উপমহাদেশের গ্রামাঞ্চলে উচ্চশিক্ষা বিস্তারের লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত প্রথম প্রতিষ্ঠান বোয়ালখালী উপজেলার কানুনগোপাড়ায় স্যার আশুতোষ সরকারি কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থী।

  কলেজের হীরকজয়ন্তী উৎসবের আয়োজন করে তাদের এই আবেগঘন মহামিলনের সুযোগ করে দিয়ে দিয়েছে স্যার আশুতোষ সরকারি কলেজ প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রী সমিতি।

স্যার আশুতোষ সরকারি কলেজের হীরকজয়ন্তী উৎসব (ছবি: সংগঠনের পাঠানো)

এই মহামিলনে শুধু সহপাঠীরাই এক হয়েছেন তা-ই নয়।

  জেষ্ঠ্যরা দেখেই বুকে টেনে নিয়েছেন কনিষ্ঠদের।   কনিষ্ঠরা মাথা নীচু করেছেন শ্রদ্ধায়।   বর্তমান শিক্ষার্থীরাও সামিল হয়েছিলেন এই মহামিলনে।   কলেজের সবুজ চত্বরজুড়ে দিনভর এভাবেই হয়েছে নবীন আর প্রবীণের সেতুবন্ধন।

শনিবার (০৭ জানুয়ারি) সকালে হীরকজয়ন্তী উৎসবের উদ্বোধন করেন স্থানীয় সাংসদ মঈনউদ্দিন খান বাদল।

প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রী সমিতির কার্যকরী সভাপতি ব্যাংকার আবদুল মান্নান এতে সভাপতিত্ব করেন।  

সমিতির সিনিয়র সদস্য দীপেন চৌধুরী, মো.আবদুল মোমিন ও মুস্তফা নঈমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন কলেজের প্রাক্তন ছাত্র ও উপজেলা চেয়ারম্যান মো. আতাউল হক, উপজেলা নির্বাহী অফিসার কাজী মাহবুবুল আলম, কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মোদাচ্ছের আহাম্মদ, প্রাক্তন ছাত্রদের পক্ষে প্রফেসর ড.মো.দিদারুল আলম চৌধুরী, ড. হেলাল উদ্দিন, কলেজ ছাত্র সংসদের প্রথম ভিপি নুরুল আলম, সিরাজুল হক বাদশা, কামাল উদ্দিন, মুস্তফা কুদরত-ই ইলাহী রুমি, আবদুল কাদের সুজন, সাইফুল ইসলাম, ইঞ্জিনিয়ার নিরোদ বরন বড়ুয়া, অ্যাডভোকেট বদিউল আলম, আহমদ হোসেন, এস এম সেলিম এবং মোহাম্মদ ইউনুস।

দিনভর নানা আয়োজনের পর বিকেল থেকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে দেশের খ্যাতনামা শিল্পীরা সঙ্গীত পরিবেশন করেন। স্যার আশুতোষ সরকারি কলেজের হীরকজয়ন্তী উৎসব (ছবি: সংগঠনের পাঠানো)

কানুনগোপাড়ায় স্বনামখ্যাত দত্ত পরিবারের সন্তান ও প্রাক্তন ডেপুটি ম্যাজিষ্ট্রেট রেবতী রমণ দত্ত কলেজটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

গ্রামাঞ্চলে দরিদ্র জনগণের মধ্যে উচ্চশিক্ষা বিস্তারের লক্ষ্যে চট্টগ্রাম থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে বোয়ালখালী উপজেলার কানুনগোপাড়ায় তিনি ১৯৩৯ সালের ১৪ জুলাই কলেজটি প্রতিষ্ঠা করেন।

তার শিক্ষাগুরু, অবিভক্ত ভারতের প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ ও কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের নামে কলেজটির নামকরণ করা হয়।   কলেজের প্রথম অধ্যক্ষ ছিলেন মাখন লাল নাগ।  

শুরু থেকেই কলেজটিতে ছিল ছাত্রাবাস।  অনগ্রসর বৃহত্তর চট্টগ্রামের দূর-দূরান্তের বিভিন্ন উপজেলা থেকে এসে এই কলেজে পাঠ নিয়েছে অনেক তরুণ-যুবক, যাদের অনেকেই দেশের এখন স্বনামখ্যাত নাগরিক। স্যার আশুতোষ সরকারি কলেজের হীরকজয়ন্তী উৎসব (ছবি: সংগঠনের পাঠানো)

গ্রামাঞ্চলের এই কলেজটি দেশের স্বাধীনতা ও প্রগতিশীল আন্দোলনের সূতিকাগার হিসেবেও পরিচিত।  

অবিভক্ত ভারতের দেশপ্রিয় যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্তের স্ত্রী এবং সর্বভারতীয় কংগ্রেস দলের সভাপতি নেলী সেনগুপ্তা কলেজটি পরিদর্শন করেছিলেন।

এছাড়া পূর্ব পাকিস্তানের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী আতাউর রহমান খান, বিজ্ঞানী ড.কুদরৎ-ই-খুদা, ড. কাজী মোতাহের হোসেন, কবি বেগম সুফিয়া কামাল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর ড. এ আর মল্লিক, পল্লীকবি জসিম উদ্দীনও  বিভিন্ন সময় এই কলেজে এসেছেন।

বাংলাদেশ সময়: ২১০৫ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৭, ২০১৬

আরডিজি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।