এর আগে একাধিকবার টিকেট ইস্যু নিয়ে রেল স্টেশনে সিরাজের নেতৃত্বে হামলা-ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে। নানা কারণে রেলের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হুমকি-ধমকি দিয়েছেন।
এর প্রতিবাদে চট্টগ্রাম রেল স্টেশনে হামলা ও ভাংচুর চালায় রেলওয়ে শ্রমিকলীগ। এসময় টিকেট নিতে আসা যাত্রীদের ধাওয়া দিয়ে স্টেশন থেকে বের করে দেওয়া হয়। ফলে শুক্রবার রাতের দুটি ট্রেন নির্দিষ্ট সময়ে চট্টগ্রাম ছেড়ে যেতে পারেনি।
এদিকে সরকার দলের সঙ্গে জড়িত থাকার অযুহাতে স্টেশনে ভাংচুর চালিয়ে সরকারের সম্পদ নষ্ট করলেও জড়িতদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। তবে আইন অনুযায়ী এ ধরনের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া যায়, এমনকি তারা চাকরি থেকে বরখাস্তযোগ্য।
আইন বলছে শ্রমিকলীগের সঙ্গে জড়িত থাকলেও তারা মূলত রেলের কর্মচারী। ফলে তারা রেলের চাকরি বিধিমালা মানতে বাধ্য। বাংলাদেশ রেলওয়ে জেনারেল ও সাবসিডারি রুলস’র ১৮১ ধারা অনুযায়ী নিজ প্রতিষ্ঠানে ভাংচুর ধর্তব্যমূলক অপরাধ। এই ধারার সাধারণ আচরণ বিধিমালা (ক) অনুযায়ী, ‘প্রত্যেক রেলওয়ে কর্মচারীর আচরণ শিষ্ট ও বিনয়ী হবে। বিধিমালার আনুষঙ্গিক নিয়ম ১৮০ (ঘ) অনুযায়ী কর্তব্যরত অবস্থায় বা অন্য অবস্থায় হউক রেলের কার্যের জন্য অনুপযুক্ত বলিয়া গণ্য হইবে; যদি সে অমিতচারী স্বভাব বর্জন না করে। এবং এ কার্যের জন্য তার চাকরি বরখাস্তযোগ্য হইবে। ’
রেলওয়ে আইনের সাধারণ ও আনুষঙ্গিক নিয়মের ১৭৫ ধারা মোতাবেক প্রত্যেক কর্মচারী রেলওয়ে এলাকায় যে কোন অনুপ্রবেশ প্রতিরোধ করবে। অথচ কর্মচারীরা উল্টো রেলের সম্পদ বিনষ্ট করছে। যা ১৯৬১ সনের ইএন্ডডি রুলসের ৩ ধারা অনুযায়ী প্রফেশনাল মিস কনডাক্ট বা চাকরি বিধির বিপরিত।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের হিসাব বিভাগের সিনিয়র অডিটর মো. সিরাজুল ইসলাম শ্রমিকলীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শ্রমিক রাজনীতি করলেও সিরাজের মূল পরিচয় তিনি রেলের কর্মচারী। আগে চাকরি পরে রাজনীতি। কিন্তু সিরাজ সরকার দলের নাম ব্যবহার করে বিভিন্ন সুবিধা আদায় করলেও নিয়মিত চাকরি করে না। অন্যদিকে দলের নাম ব্যবহার করে বদলি, বাসা বরাদ্দ, রেলের জায়গা দখল, নিয়োগ বাণিজ্য করে যাচ্ছেন। পাশাপাশি শ্রমিক রাজনীতির নামে কর্মচারীদের অফিস থেকে বের করে নিয়ে আসছেন মিছিল-মিটিং এর কথা বলে। এতে একদিকে জনবল সংকটে পড়ছে রেলওয়ে। অন্যদিকে চাকরিতে যোগদান করে বেতন ভাতা নিলেও দক্ষ জনবল তৈরি হচ্ছে না।
বান্দরবানের ঘটনার জের ধরে চট্টগ্রাম স্টেশনে ট্রেন চলাচলে বাধা, মিছিল ও ভাংচুর করা উচিত হয়নি মন্তব্য করে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব ফিরোজ সালাউদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, ঘটনার কারণ তদন্ত করা হবে। তদন্ত প্রতিবেদনে কর্মচারীদের ভাংচুরের ঘটনায় জড়িত থাকার প্রমাণ পেলে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সিরাজের এসব কর্মকাণ্ড রেলওয়ে শ্রমিকলীগ সমর্থন করে না বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রিয় সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান আকন্দ। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের জন্য মিছিল-মিটিং করতে পারে। রেলের সম্পদ নষ্ট করাকে সমর্থন করি না। সরকারি দল হিসেবে এ ধরণের কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানান তিনি।
সরকারি দলের নামে হামলা-ভাংচুরের মতো ঘটনা রেলওয়ে শ্রমিকলীগের একটি বড় অংশ সমর্থন করে না জানিয়ে একজন শ্রমিকলীগ নেতা বাংলানিউজকে বলেন, সরকারি সম্পদ নষ্ট করার কোন যৌক্তিকতা নেই। এ ধরণের কর্মকাণ্ড সমর্থনযোগ্য নয়।
স্টেশনে হামলার ঘটনা রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক অবগত হয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, মন্ত্রী মহোদয় এর কারণ জানার চেষ্টা করছেন। তিনি যে সিদ্ধান্ত দেবেন সেটাই আমরা মেনে নেব। শ্রমিকলীগের ওই নেতা জানান, সিরাজুল ইসলাম অফিস চলাকালীন সময়ে কর্মচারীদের ডেকে নিয়ে আড্ডা দেন। বিভিন্ন সভা-সমাবেশে নিয়ে যান।
শ্রমিক রাজনীতি মানুষের কল্যাণের জন্য, ক্ষতির জন্য নয় বলেও মন্তব্য করেন রেলওয়ে শ্রমিকলীগের ওই নেতা।
ভাংচুরের বিষয়ে জানতে চাইলে শ্রমিকলীগ নেতা সিরাজুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, আমরা হামলা বা ভাংচুর করিনি। স্টেশনে প্রবেশ করার সময় একটি গ্লাস ভেঙে গেছে। এটা আগে থেকেই ভাঙা ছিল।
তবে ভিডিও ফুটেজ ও ছবিতে হামলা-ভাংচুরের সময় সিরাজুল ইসলামকে নেতৃত্ব দিতে দেখা যাচ্ছে। এছাড়া রেলওয়ে স্টেশন ম্যানেজারকে অবরুদ্ধ করে রাখার বিষয়টিও স্পষ্ট।
বাংলাদেশ সময়: ২১৩৬ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৭, ২০১৭
এমইউ/টিসি